মৃত বাঘের চেয়ে আহত বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর: বিজেপিকে হুঁশিয়ারি মমতার

Slider সারাবিশ্ব


কলকাতা: উত্তর যা দেওয়ার, দেওয়া হয়ে গিয়েছে, দল এবং সরকার, উভয়ের তরফ থেকেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি আর এর মধ্যে ঢুকতে চান না, বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কেন হল, তার বিশদ ব্যাখ্যায় গেলেন না তিনি। কিন্তু সে প্রসঙ্গে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করার সুযোগ ছাড়লেন না। কেন্দ্র দাঙ্গা লাগাতে চাইছে বাংলায়— সোমবার এমনই গুরুতর অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। আর রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘বাংলা সবচেয়ে ভাল।’’

শনিবার সন্ধ্যা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনও মন্তব্য ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর। তবে এ দিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। সন্দেশখালির নাম উচ্চারণ না করেও সেখানকার ঘটনার দায় পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলেন প্রশাসন ও তৃণমূলের ঘাড় থেকে। নিশানা করেন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত— তাঁর সরকারকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যেই বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে আঙুল তোলা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার সরকার ভাঙার চেষ্টা করে বিজেপির লোকেরা যদি মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্তব্ধ করবেন, তা হলে মনে রাখবেন, মৃত বাঘের চেয়ে আহত বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর।’’

প্রশাসনিক বৈঠক সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেবেন না, নবান্নে সংবাদমাধ্যমকে এ দিন স্পষ্ট করে সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সরাসরি সন্দেশখালি কাণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে তাঁকে পড়তে হয়নি। তবে ঘুরপথে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে তাঁকে পড়তে হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুলিশকে খুব কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে, কোনও রকমের গুন্ডামি বরদাস্ত না করতে বলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কাজে যে তিনি সর্বৈব খুশি নন, তা-ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন। বেশ কিছু ওসি এবং সাব-ইনস্পেক্টর ঠিক মতো কাজ করছেন না এবং তাঁদের উপরে কড়া নজর রাখা হচ্ছে, কড়া হাতেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘আমি সব মানুষকে বলব, শান্তি বজায় রাখুন, বাংলা সহনশীলতার জায়গা, ধৈর্যের জায়গা, শান্তির জায়গা।’’

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাংলায় দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, বিজেপির লক্ষ্য তাঁর সরকার ভেঙে দেওয়া। কেন বিজেপি তাঁর সরকারকে ভাঙতে চাইছে, সে ব্যাখ্যাও মমতা এ দিন দিয়েছেন। ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘অনেক খেলা আছে। এই খেলাগুলো যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বের করতে না পারে, তাই সব অ্যাডভাইসরি দেওয়া শুরু হয়েছে।’’

সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে যে পরামর্শ পাঠানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে, সেই পরামর্শের কথাই যে তিনি উল্লেখ করতে চেয়েছেন, তা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু সন্দেশখালি কাণ্ড বা কেন্দ্রের পাঠানো পরামর্শ নিয়ে বিশদ মন্তব্যে যে তিনি যাবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্য সচিব যা উত্তর দেওয়ার, দিয়েছেন। আমি এর মধ্যে আর ঢুকছি না। সরকারের উত্তর সরকার দিয়েছে, পার্টির উত্তর পার্টি দিয়ে দিয়েছে।’’

বিজেপির জমানায় দেশের গণতন্ত্রের সব স্তম্ভগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র এত সোজা নয়। গণতন্ত্র বিক্রি হয় না। গণতন্ত্র যদি বিক্রি হয়ে যায়, সব বিক্রি হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে বিক্রি হয়ে গিয়েছে, আপনারা জানেন। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলো সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সব কিনে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে দু’একজন সাহসী মানুষ আছেন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *