উপজেলা নির্বাচন: নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পাঁচ এমপি

Slider বাংলার মুখোমুখি

ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনে কিছুতেই বিদ্রোহ থামছে না আওয়ামী লীগে। অনেক এমপিই দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যেই দলের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন করছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করছেন না।

তাদের একজন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তার ভাই অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান কালু মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা কাজল কৃষ্ণ দের পক্ষে একাট্টা হয়ে আছেন। কিন্তু স্থানীয় এমপি শাজাহান খান দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিষয়টি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। আগামী ১৮ জুন ১৬ উপজেলায় নির্বাচন।

আওয়ামী লীগ এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কমপক্ষে পাঁচজন এমপি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন।

বরগুনার তালতলীতে দলীয় প্রার্থী রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দারের বিরোধিতা করছেন স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুকে সমর্থন করছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে গুঞ্জন রয়েছে। মনিরুজ্জামান মিন্টু বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।

গাজীপুর সদরে দলের প্রার্থী সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান হাবিব ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আতিকুজ্জামান মোহাম্মদ তৈয়ব আলী।

গাজীপুর-২ এবং গাজীপুর-৩ আসন সদর উপজেলার আওতাধীন। এই দুই আসনের এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে এখনও সরব হননি। এ নিয়ে দলের ভেতরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বেশিরভাগ কর্মী দলের প্রার্থীর বিপক্ষে রয়েছেন।

রাজবাড়ীর কালুখালীতে কাজী সাইফুল ইসলামের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আলিউজ্জামান চৌধুরী। স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিম প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও তার বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থক আলিউজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আশরাফুল আলম সরকার লেবু। তবে বেশিরভাগ স্থানীয় নেতাকর্মী দলের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বিদ্রোহী প্রার্থী দলের উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খয়বর হোসেন সরকার মওলাকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

নাটোরের নলডাঙ্গায় আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আহমদ আলী শাহ। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে দলের কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও অনেক নেতাকর্মীর সমর্থন পাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা ও তার সমর্থকরা তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

শেরপুরের নকলায় দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। তিনি এর আগে এই উপজেলার উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মাহবুবুল আলম সোহাগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। এ কারণে এখনও তার দলীয় পদ স্থগিত রয়েছে। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে দলের প্রার্থী আবদুর রশিদ তালুকদার ইকবাল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ খান। নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে এক ধরনের ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তানভীর ভুঞার বিরুদ্ধে লড়ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী নাসিমা লুৎফর রহমান মুকাই। তিনি কুয়েত আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা। নোয়াখালী সদরে একেএম সামছুদ্দিন জেহানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত রেজা চৌধুরী।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে দলের প্রার্থী নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ নেই। দলের একক প্রার্থী কামারখন্দ উপজেলার সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরী নির্বাচনে লড়ছেন। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে দলীয় প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন দলের দুই নেতা। তারা হচ্ছেন ড. আরিফ বিন ইসলাম এবং ডা. জহির উদ্দিন।

কোনো প্রার্থী না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে সিরাজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এম এ রশিদ, কুমিল্লার আদর্শ সদরে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল এবং সদর দক্ষিণে গোলাম সারওয়ার বিনা ভোটে জয় পেয়েছেন। গোলাম সারওয়ার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল লোটাসের ভাই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *