গাজীপুরের কালিগঞ্জের সন্তান অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদির আজ ৬৬তম জন্মদিন

Slider ফটো গ্যালারি

ঢাকা:কিছু কিছু মানুষের কখনো মৃত্যু হয় না বেঁচে থাকে দর্শকের মাঝে সারাজীবন! দেখতে দেখতে ৭ বছর পেরিয়ে গেল। আজ থেকে ঠিক ৭ বছর আগে মাত্র ৬০ বছর বয়সে হুমায়ুন ফরীদিই সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন দেশের অগণিত মানুষের প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি।আজ তাঁরই জন্মবার্ষিকী!

‘হুমায়ুন ফরীদির মতো শিল্পী যেকোনো দেশে জন্মাতে যুগ যুগ সময় লাগে, শতাধিক বছর লাগে। ও একজন ভার্সেটাইল শিল্পী। তাঁকে জিনিয়াসই বলা যায়।’ হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন প্রয়াত নাট্যজন আতিকুল হক চৌধুরী।

আরেক নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেছিলেন, ‘হুমায়ুন ফরীদি যখন প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করা শুরু করল, তখনই আমি সবাইকে বলেছিলাম এই ছেলে মঞ্চ কাঁপাবে। অবশ্য ফরীদি কিন্তু মঞ্চের চেয়েও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল চলচ্চিত্রে। তার রসবোধ ছিল প্রখর। কোনো একটা সিরিয়াস মুহূর্তকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরিয়ে দিতে তাঁর তুলনা ছিল না।’

মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের শক্তিমান এই অভিনেতাকে নিয়ে সংস্কৃতিজগতের প্রায় সবারই এমনটাই অভিমত। অভিনেতা হিসেবে তিনি যেমন শক্তিমান, মানুষ হিসেবেও ছিলেন অনন্য।

বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে সমান দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। অর্জন করেছেন দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি ভক্তের ভালোবাসা। দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ও রোমান্টিক মানুষ হুমায়ুন ফরীদি আশির দশকের শুরুতে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তাঁর এ বিয়ে সে সময় সারা দেশে বেশ আলোচিত ছিল। সে সংসারে দেবযানী নামে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। পরে হুমায়ুন ফরীদি সংসার শুরু করেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। ২০০৮ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে একাকী জীবন যাপন করে গেছেন তিনি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে হুমায়ুন ফরীদি তাঁর অভিনয় দিয়েই মুগ্ধ করে রেখেছিলেন অগুনতি দর্শক-সমালোচককে।

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ফরীদি নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।

১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। এ উত্সবের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে একজন মেধাবী ও শক্তিমান নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে যে আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ফরীদি, তাঁর সেই উচ্চতায় এ দেশের খুব কম মানুষই পৌঁছতে পেরেছেন।

বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু ঢাকাতেই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রেও অসামান্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।

হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চ, টিভি ও সিনেমায় অভিনয় করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। ফরীদি তাঁর কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফরীদি অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আহা!’ , ‘হুলিয়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দহন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’ প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল নকশার সন্ধানে’ (১৯৮২), ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ (১৯৮২), ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ (১৯৮৩), ‘ভবের হাট’ (২০০৭), ‘শৃঙ্খল’ (২০১০) প্রভৃতি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ নাটকে ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

অসাধারণ অভিনয় আর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাঁকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ বছর পূর্তি উৎসবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরিচিতজন ও ভক্তদের মতে, হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটা যুগের অবসান হয়েছে। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ে মুগ্ধ ও বিস্মিত হননি এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবে না। শুধু একবার তাঁর অভিনয় দেখার জন্যই টিভির সামনে বসে থেকেছেন কত শত মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *