ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে জাবির ৪শ’ কোটি টাকার দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ

Slider টপ নিউজ

জাবি প্রতিনিধি: ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’এর প্রথম ধাপের ছয়টি হল নির্মাণের ৪শ’ কোটি টাকার দরপত্র সিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর মালিকানাধীন বনানীস্থ ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশন কোম্পানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বরাবর লিখিতভাবে এই অভিযোগ করেন। অভিযোগের একটি কপি মানবজমিনের হাতে রয়েছে।

২৬শে মে করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ২৩মে প্রি-টেন্ডার মিটিংয়ে অংশগ্রহণ পূর্বক সিডিউল কিনে ফেরার সময় ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে ২০-৩০ জন যুবক তাদের কাছ থেকে সিডিউল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ফলে তাদের পক্ষে দরপত্র প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র (ইজিবি) আহবান করার অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগপত্রে।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে প্রকল্প পরিচালকের অনুমতি নিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সিডিউল কিনেন কোম্পানীর একজন প্রতিনিধি। তিনি সিডিউল কিনে বের হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারী বেশ কিছু নেতাকর্মী তাদের কাছে সিডিউল দিয়ে দিতে বলেন। তারা বলেন, বিশ্বাস বিল্ডার্সসহ অনেকে আমাদের কাছে সিডিউল জমা দিয়ে গেছে। আপনিও দিয়ে দেন। কালকে আমরা একটা সমঝোতা করে আপনাদের মধ্যেই ছয়জনকে ছয়টা কাজের ব্যবস্থা করে দিব। প্রায় ১ ঘণ্টা বাগবিতন্ডার পর কোম্পানীর প্রতিনিধি ছাত্রলীগের কাছে ঐ সিডিউল দিয়ে দেন।
যোগাযোগ করা হলে ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশনের একজন পরিচালক বলেন, আমাদের কাছে থেকে জাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিডিউল ছিনতাই করেছে। কোম্পানীর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আছে আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছেও অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন ম্যানুয়েল টেন্ডারের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু আমাদের কোন নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। আমরা অনিয়ম রোধে পুনরায় ইজিবি টেন্ডার আহবান করার দাবি জানিয়েছি।
এই পরিচালক আরো বলেন, এখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা জড়িত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছেন। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও অভিযোগ করেছি।

এদিকে জানা যায়, বিশ্বাস বিল্ডার্স,মাজেদ এন্ড সন্স, বঙ্গ বিল্ডার্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বাস বিল্ডার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম প্রকাশ করে কিছুই বলতে চাইনি। তবে তারা এই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানান।
যোগাযোগ করা হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, সবাই তো সিডিউল কিনছে। সবাই সিডিউল পাচ্ছেও। ছাত্রলীগ কেন বাধা দিবে। তারা কেন অভিযোগ করেছে আমার জানা নাই। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ছাত্রলীগ সোচ্চার আছে।
‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসির উদ্দীন বলেন,আজ পর্যন্ত ২৫ টি সিডিউল কেনা হয়েছে। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা আমি শুনেছি। তবে প্রকল্প পরিচালক বরাবর কোন অভিযোগ আসেনি।

ভিসিবিরোধী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দীন বলেন,কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ই-টেন্ডার করা উচিত। সরকার তো ই-টেন্ডারে সমস্ত কাজ করছে। প্রশাসনই ম্যানুয়েল টেন্ডার আহবান করে এই ধরনের অনিয়মের সুযোগ রেখে দিছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরূল আলম জানান, প্রকল্প নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল নই। এটা ট্রেজারের সঙ্গে কথা বললে ভাল হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক শেখ মোঃ মনজুরুল হক বলেন, আমি এই ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি। প্রতিনিধির কাছে অভিযোগপত্রের কপি থাকার কথা বললে বলেন, আমার হাতে অসার পর আমি মন্তব্য করব। অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে রয়েছেন। তার একান্ত সচিবের মাধ্যমে তার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে সিডিউল কেনার ব্যাংক কার্যালয়ে ছাত্রলীগ শোডাইন দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক গ্রুপের পাশাপাশি বিদ্রোহী গ্রুপ ও সাবেক নেতাদের একটা গ্রুপও তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানের জন্য সিডিউল কিনেছে। গত সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাবি ভিসির সাথে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জাবির নেতৃবৃন্দকে ডাকেনি। এরপর থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে জাবি ছাত্রলীগের বনিবনা না হওয়ার একটা গুঞ্জনও উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *