ওসির পর এবার দুই এসআই সাময়িক বরখাস্ত: শাস্তির মুখে এসপিও

Slider জাতীয়

ঢাকা: সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন নিপীড়নের ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পর এবার সোনাগাজী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইকবাল আহম্মেদ এবং মো. ইউসুফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ শনিবার শাস্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইকবালকে বরখাস্ত করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় এবং ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করে অন্য একটি বিভাগে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এর ফলে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শুধু ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নয়, চার জনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে দূরবর্তী ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ জাতীয় প্রক্রিয়া আরো চলছে। কোন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে তার আর সাধারণ পেশাগত কাজ করার ক্ষমতা থাকে না। এটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ।’

২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির ঘটনাকে সোনাগাজীর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন সাজানো নাটক। ৬ এপ্রিল রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনাকে বলেন আত্মহত্যার চেষ্টা। আর ফেনীর এসপি এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর কোনো পদক্ষেপই নেননি। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ওঠায় তা খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক এসএম রুহুল আমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য কমিটি করা হয়। কমিটি দুই দফা সরেজমিন এসে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। কমিটির সদস্যরা রাফির পরিবার, মাদরাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, স্থানীয় সাংবাদিক মিলে অন্তত ৩৭ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। রেকর্ড করা বক্তব্য, আলামত ও প্রমাণ থেকে প্রত্যেকের গাফিলতি শনাক্ত করা হয়।

গত ৩০ এপ্রিল রাতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে ফেনীর এসপি এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিম, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এবং যৌন নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, এসআই ইকবাল হোসেন এবং এসআই ইউসুফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেম নিপীড়নের মামলা দায়েরের পর আসামি সিরাজ উদ দৌলাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। রাফিকে হত্যার পর তিনি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। এসপি জাহাঙ্গীর ঘটনার তদন্তে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে রাফির মৃত্যুর পর ওসির মতোই আত্মহত্যার তথ্য দেন। অভিযোগ ওঠার পর তিনি ওসি মোয়াজ্জেমকে রক্ষার চেষ্টা করেন। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ইকবাল রাফির নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেননি। এমনকী ঘটনার তদন্তেও অবহেলা করেন। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে থেকেও এডিসি এনামুল কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। ঘটনা তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে মামলা করলে উল্টো রাফির পরিবারের ওপর ক্ষেপে যান। তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত পাঁচ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছে।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিমের পরীক্ষার্থী রাফিকে নিপীড়নের ঘটনায় তার মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজকে ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে নিজ মাদরাসার কেন্দ্রে গেলে রাফিকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সিরাজের সহযোগীরা। সেখানে চারজন মিলে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান রাফি। এ ঘটনায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিজেশন (পিবিআই), যাদের মধ্যে সিরাজসহ নয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এখনও তিন আসামি রিমান্ডে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *