সাহাদাত হোসেন: রিক্সাওয়ালাকে যাবেন বলার সাথেই উঠুন বলায় একটা ধাক্কা খেলাম।আগের দিন নেই, গাজীপুরে এখন রিক্সাওয়ালা তার পছন্দমত না হলে যাত্রীর কথামতো যেখানে সেখানে যায়না। যাহোক রাজবাড়ি ঢালে গিয়ে রিকসাওয়ালাকে ডানদিকে ফুলের দোকানের সামনে থামাতে বললাম। দোকানদারকে ৩৮ টি গোলাপ দিয়ে একটা তোড়া বানাতে বললাম। রিক্সাওয়ালা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ফুল কিসের জন্য? আমি সরাসারি উত্তর দিলাম আমার স্ত্রীর আজ জন্মদিন।আমাকে তিনি অবাক করে প্রশ্ন করলেন” আপনি এসএসসি কত সালে দিয়েছেন?” আমি তার নাম জিজ্ঞাসা করলাম এবং প্রশ্ন করলাম আপনি লেখাপড়া কি পর্যন্ত করেছেন? উনি উত্তর দিলেন এসএসসি। অবাক করা বিষয় আমি এবং উনি একই সালে এসএসসি দিয়েছি। ফুলের তোড়া বানানো পর্যন্ত আমাদের গল্প চলছে।উনার দুই মেয়ে দুই ছেলে। নিজের নাম বললেন আফছার উদ্দিন। বড় মেয়ে অনার্স এ পড়ে।ছোট মেয়ে ক্লাস টেন এ, একছেলে ক্লাস সিক্স এ ও ছোটটির বয়স তিন।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। রিক্সা চালিয়ে কি ওদের পড়ানো সম্ভব প্রশ্নকরায় উত্তর দিলেন, আর কয়েকদিন পর ধানকাটা লাগবে, কিছু ধানের জমি আছে হাতে টাকা না থাকায় এখানে আসছি। ধান কাটার টাকাটা হলে রোজার আগে চলে যাবো।মেয়েরা বলছে রোজায় কাজ না করতে। প্রতিদিন উনার ১০০০/১২০০ টাকা আয়। সারাদিন খাওয়া বাবদ ১০০ টাকা আর পকেট খরচ ২০ টাকা।সহজ হিসাব আমাকে মিলিয়ে দিলেন। ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে বললাম দোস্ত, চলো। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে রিক্সায় উঠে বসলেন। ভাবছি আমি ওর জায়গায় বসলে কেমন হয়? ভাবনার ছেদ কাটলো আফছার। বুঝলেন ভাই,আমার মেয়ে দুইটা আমার কলিজার টুকরা। ওরা আমাকে দাঁড়ি রাখিয়েছে। বলেছে দাঁড়ি রেখে নামাজ না পড়লে তুমি লজ্জা পাইবা। আমিও ভাই নামাজ পড়ি। গায়ের গন্ধ বেশি হলে মসজিদে না গিয়ে অন্য জায়গায় পড়ি। রিক্সা ততক্ষণে শাহ আলমের দোকানের সামনে চলে এসেছে। আমি থামাতে বললাম, দুই দোস্ত শাহ আলমের দোকান থেকে চা ও আমার পছন্দের ‘টা’ খেলাম। আকাশ পাণে ধোঁয়া ছেড়ে আমাকে প্রশ্ন করলো ভাই,আপনার কি প্রেমের বিয়ে? আমি উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলাম তুমি কি প্রেম করেছো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো অভাবে বুঝতে পারিনি।চার ভাই আর চার বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। বাবা মারা যাওয়ার পর সেই যে সংসারের হাল ধরলাম এখনো আছি। চিন্তা করি পারবো কিনা সন্তানদের মানুষ করতে। আবার রিক্সা চলা শুরু, বাসার সামনে চলে এসেছি।আবার প্রশ্ন এটা কি আপনার বাসা? নারে ভাই, ভাড়ায় থাকি। ওর প্রশ্ন আবার, আপনি কি করেন? ছোট একটা চাকরি করি।’ভাই, আপনি যখন ৩৮ টি ফুলের অর্ডার দিলেন তখনই মনে হয়েছে আপনি আমার বয়সী। আর ভাবীর বয়স ঐ ফুলের সংখ্যা।’এমন সুন্দর বাচনভঙ্গি আমাকে বিমোহিত করে দিলো।
রিক্সা থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে খুব ক্লান্ত লাগছে। বাবাদের কি ক্লান্ত হলে চলে? প্রত্যেক বাবাদের ধর্ম তো একই।প্রতিনিয়তই সুখে রাখার চেষ্টা করা। ঐ যে সারাদিনের পকেট খরচ যতটা কমানো যায়