এই শীতেও রাজধানীতে গ্যাসের সংকট

জাতীয়

pic-29_165644শীতের শুরুতেই রাজধানীতে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। নগরীতে সকাল থেকে গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। তা ফিরে আসতে আসতে কোথাও কোথাও সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ১০টা বেজে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আবাসিক এলাকাগুলোতে রান্নাবান্না নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী। শীত শেষ হওয়ার আগে গ্যাসের এ সংকট কাটবে না। বরং শীতের তীব্রতা বাড়লে সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এমনকি পুরনো পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কারণে শীত শেষ হওয়ার পরও বহু স্থানে সহসাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

রাজধানী ঢাকায় বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা তিতাস গ্যাস বলছে, শীতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে সংকট বেড়েছে। এ ছাড়া তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পাইপলাইনে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট জমে যায়। এর ফলে গ্যাসের স্বাভাবিক চাপও কমে যায়। একই সঙ্গে তারা দাবি করছে, গত বছরের তুলনায় এবার শীত মৌসুমে গ্যাসের সরবরাহ ভালো থাকবে। তবে পাইপলাইনের শেষপ্রান্তে থাকা গ্রাহকরা গ্যাসের চাপ কম পাবে।

জানা গেছে, বরাবরই শীতের কারণে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায় ২০ শতাংশ। এবার শীত মৌসুমে তিতাসের গ্যাসের দৈনিক চাহিদা সর্বোচ্চ দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৫৫০ থেকে এক হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সে হিসাবে তিতাস অঞ্চলে দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আগে শীত মৌসুমে তিতাসকে সরবরাহ করা হতো এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এবার সেখানে দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত সরবরাহ করা হলেও সংকট থেকেই যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান গতকাল শনিবার বলেন, গতবারের তুলনায় আমাদের এবারের অবস্থা ভালো। আমরা প্রতিদিন ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বেশি সরবরাহ পাচ্ছি। এ ছাড়া শীতের সংকট সামাল দিতে কনডেনসেট জমে এমন পয়েন্টগুলো সার্ভিসিং করেছি। তার পরও লাইনের প্রান্তসীমায় অবস্থান করছেন এমন গ্রাহকদের কিছুটা সমস্যা হবে।

এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর পশ্চিম ধানমণ্ডি, রায়েরবাজার, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা ট্যানারি মোড় থেকে টালি অফিস, রামপুরার কিছু অংশ, মগবাজারের নয়াটোলা, মধুবাগ, বনশ্রী, মেরাদিয়া, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, নবীনগর, মুরাদপুর, কুতুবখালী, জিয়া সরণি, মৃধাবাড়ী, কাজলা, ভাঙা প্রেস, মীর হাজীরবাগ, শহীদ ফারুক রোড, টিপু সুলতান রোড, নবাবপুর রোড, নারিন্দা, ফুলবাড়িয়া, বিবিরবাগিচা, দক্ষিণ মুগদা, বনগ্রাম, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, স্বামীবাগ, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, টিকাটুলী, গোপীবাগ, ধলপুর, দোলাইরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলা তীব্র গ্যাস সংকট হচ্ছে।

জিগাতলার তল্লাবাগের বাসিন্দা মৌমিতা দাস কালের কণ্ঠকে জানান, সকাল ৮টার মধ্যে রান্নার কাজ সেরে ফেলতে হচ্ছে। কারণ এরপর গ্যাসের চাপ কমে যায়। আর তা ফিরে আসতে আসতে রাত ৮টা বেজে যায়।

তবে পরিস্থিতি বেশি খারাপ মেরাদিয়ায়। এখানকার গৃহিণী শিরিন ইসলাম জানান, সকালে গ্যাস চলে যায়। আর গ্যাসের চাপ ফিরে পেতে রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শীত বেশি পড়লে সংকট আরো বাড়ে।

তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকার বেশির ভাগ গ্যাসের লাইন পুরনো। বেশির ভাগ লোহার পাইপে মরিচা ধরেছে। এই মরিচা ধরা পাইপ থেকে বারবার ফুটো বা ড্রিল করে সংযোগ নেওয়ায় লাইন ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। গ্যাসের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার এটাও একটা কারণ। এ কারণে শীত ছাড়াও নগরীর বহু স্থানে গ্যাস সংকট থেকে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *