এখন জমজমাট উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত ধানের হাট রনবাঘা

জাতীয়

Bogra_Paddy_Merket_153383_1বগুড়া: উত্তরের সবচেয়ে বড় ধানের হাট বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার রনবাঘা হাট। এই হাটে বর্তমানে ধান কেনা বেচায় জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতি হাটবারে ২৫ হাজার মণ ধান ক্রয়-বিক্রয় হয় এখানে। হাট বার হলো প্রতি শুক্রবার ও সোমবার। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০টি  ট্রাক ভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় এসব ধান। এতে করে অত্র অঞ্চলে অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করতে সহায়তা করেছে। সারা বছর এখানে নতুন পুরাতর ধান ক্রয়-বিক্রয় হওয়ায় রনবাঘায় গড়ে উঠেছে সব সময়ের জন্য বিরাট ধানের মোকাম। আর এই মোকামকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানান দোকানপাঠ, আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, মোবাইল ফোনের দোকান, লেবারদের পর্যাপ্ত আনাগোনা, বস্তা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পরিধি।

দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এলাকাটিকে করেছে আরও সম্মৃদ্ধ। পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ঢাকা, চট্রগ্রাম, যশোর, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বহু জায়গা থেকে বহু ক্রেতাদের রনবাঘায় আগমন ঘটে। বোরো, আমন, বর্ষালী ও ইরি ধান ক্রয় বিক্রয় মৌসুমে পাইকার, বিক্রেতা এবং জনসাধারনের ভারে সারা বছরই এলাকাটি জনসমুদ্রে সরগরম হয়ে উঠে।

রনবাঘাসহ পার্শ্ববর্তী উমরপুর, জামতলী, কয়াপাড়া, হুলহুলিয়া, ডোরাহার, নন্দিগ্রাম, পন্ডিত পুকুর, কাথম এলাকা থেকে বহু বিক্রেতা তাদের উৎপাদিত ধান রনবাঘায় এনে বিক্রয় করেন। লোক সমাগমের ফলে এলাকায় অন্যান্য ছোট বড় ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও চাংগা হয়ে যায়।এ সময় প্রচুর অর্থের সঞ্চালন ঘটায় সবাই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাচ্ছন্দে থাকেন বলে জানালেন নন্দিগ্রামের ডোরাহারের স্বচ্ছল কৃষক ইয়াকুব আলী (৪০)। ধান বেচাকেনার বিখ্যাত স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় রনবাঘা হাটে সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক গড়ে উঠেছে।

এছাড়াও শুধুমাত্র রনবাঘায় ধানের মোকাম গড়ে উঠার কারনে রনবাঘার সন্নিকটে নন্দিগ্রাম উপজেলায় অগ্রনী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীন ব্যাংক, কৃষি ব্যাংকসহ বহু আথির্ক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান ক্রয়-বিক্রয়ের কমিশন এজেন্ট এর সাথে জড়িতরাও ধান কিনতে আসা মহাজনদের টাকা ধার দিয়ে থাকে। সুদে টাকা ধার দেয়ার সাথে বেশ কিছু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এখানে। এরা শুধু মাত্র টাকা খাটিয়ে অধীক উপার্জন করে থাকে।একদিকে ধান ক্রয়-বিক্রয়ের কমিশন এজেন্ট অন্যদিকে টাকা খাটিয়ে আয় করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছে রনবাঘার বেশ কিছু লোকজন।

বগুড়ার বিখ্যাত ধানের হাট রনবাঘায় বর্তমানে অন্যান্য হাটের চেয়ে বেশী দরে ধান কেনা বেচা হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ার সাথে সাথে অর্থের যোগানের পরিমানও বেড়েছে বহুল্যাংশে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বজলুল রশিদ রাজা জানান, শুরুতে হাটে সরবারাহ কম থাকায় দাম বেশি ছিল। এখন সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। তবে সরকারি সংগ্রহ শুরু হলে আবারও দাম বেড়ে যাবে। তিনি জানান, বগুড়ায় এবার ১লাখ ৯২ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল (চালে) ৭লাখ ৫৬ হাজার ৯৩ মেট্রিকটন।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় আগাম জাতের ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও ধান কাটা শুরু হয়েছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার হাট ঘুরে দেখা গেছে মিনিকেট ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে।

আর পরি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ৬৮০ টাকা মণ দরে। অথচ শুরুতে এই অঞ্চলে ধান বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা মণ দরে। হঠাৎ করে ধানের মূল্য পতন ঘটে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বর্গা চাষিরা। নন্দী গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী জানান, বর্গা চাষিদের ১ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে (জমির ভাড়াসহ) ১৬ হাজার টাকা। বিঘাতে ধান উৎপাদন হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ মণ। আর যে সব কৃষক জমির মালিক তাদের বিঘাতে খরচ হয়েছে ৬৫০০ টাকা।

এতে তাদের বিঘা প্রতি লাভ থাকছে ১০ থেকে ১১হাজার টাকা। কিন্তু এই দাম অব্যাহত থাকলে বর্গা চাষিদের বিঘাতে লাভ থাকবে ৩৫০০ টাকা। জমির প্রকৃত মালিকরা জানিয়েছেন বর্গা চাষিদের বোরোতে লাভ কম থাকলেও তারা ১ বছরের জন্য যে জমি বর্গা নেন, তাতে বোরো ছাড়াও বছরে অন্য দুটি ফসল উৎপাদন করবে। এরপর তারা আমন ও আউশ চাষ করবে। তাতে তারা প্রচুর লাভ করবে।

জমির মালিকরা জানিয়েছেন, বর্গা চাষিরা এক মৌসুমে ধানের দাম কম পেলেও অন্য দুটি ফসল উৎপাদন করে এখনকার চাইতে প্রচুর লাভ করবে। কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকার যদি সংগ্রহ অভিযান এখন থেকে শুরু করতো তবে ধানের বাজার মৌসুমের শুরুর মত ৯০০ টাকায় বেচা কেনা হতো।তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে সরকার ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে ২০ টাকা কেজি ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে ৩১টাকা কেজি। কিন্তু আজও সরকারি ভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ না হওয়ায় কৃষকের মাঝে হতাশা বাড়ছে।

এদিকে আগে ভাগেই ফড়িয়াদের অর্থের যোগান দিয়ে তাদের ধান ক্রয়ে হাটে ও গ্রামে গ্রামে মাঠে নামিয়েছে আড়ত দাররা। এদিকে, কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, বোরোর বাজার এখন ফড়িয়াদের দখলে।তবে বর্তমানে রনবাঘা হাটে মৌসুমী কেনা বেচায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। যা অত্র অঞ্চলে অধিক টাকা সঞ্চালন হয়ে গোটা বগুড়ায় অর্থনীতির চাকা সচল করতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *