শিক্ষার্থীরা এখন পরিবহন শ্রমিকদের টার্গেট

Slider জাতীয় টপ নিউজ

শিক্ষার্থীরা এখন পরিবহন শ্রমিকদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। যেখানেই শিক্ষার্থী দেখছেন সেখানেই তাদের সাথে অকারণে ঝামেলা করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। শিক্ষার্থীদের গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পিষে মারার ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পরিবহনের বেপরোয়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পরপর দুটো বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যে কারণে শিক্ষার্থীদের এখন পরিবহন শ্রমিকেরা প্রতিপক্ষ ভাবছেন।

গত শনিবার একদিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছয়জন শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে মেরেছে বাস। গাজীপুরে বাসের চাপায় দুই কলেজছাত্র নিহত হয় শনিবার দুপুরে। নিহতরা হলো স্থানীয় লিঙ্কন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র গাজীপুর মহানগরের মাস্টারবাড়ি এলাকার জুম্মান হোসেন নাছির (১৮) এবং সতীর্থ ভীমবাজার এলাকার বাসিন্দা রবিন (২২)। এই ঘটনায় আহতরা হলো, লিঙ্কন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও দক্ষিণ বাউপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো: আলামিন (১৮) ও আসোয়াত (১১)।

শনিবার বাস থেকে ফেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিমকে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ছাত্রের নাম ওয়াসিম আফনান। ওয়াসিমকে বাসের হেলপার ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেন। আর চালক ওয়াসিমের শরীরের ওপর দিয়ে বাসটি চালিয়ে নিয়ে যান। এর আগে বাসের ভেতরে হেলপারের সাথে ওয়াসিমসহ সিকৃবির শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে নামার সময় হেলপার গালি দেন তাদের। এ সময় ওয়াসিম গালি দেয়ার কারণ জানতে গাড়ির দরজায় দাঁড়ালে হেলপার তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন।

বরিশালে বাস চাপা দিয়ে শিলা নামের বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে বাস শ্রমিকেরা বরিশালের নতুল্লাবাদ থেকে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ করে দেন।

নরসিংদীতে রাব্বি মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী গাড়ি চাপায় নিহত হন। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা শনিবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ করেন।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে উল্টো পথে গিয়ে অনন্ত (১২) নামের এক শিক্ষার্থীকে পিষে দেয় বনফুল পরিবহনের একটি বাস। শনিবার বেলা ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনী মণ্ডল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের বাসের চাকায় পিষে মারার প্রতিবাদে সারা দেশে পরপর দু’টি বড় আন্দোলন হয়েছে। শিক্ষার্থীরাই এই আন্দোলনের আয়োজক ছিলেন। পরে অভিভাবকেরাও তাদের সাথে মাঠে নেমেছেন। গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে ছুটির পরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আবদুল করিম ওরফে সজীব এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম নিহত হয়। তারা রাস্তার পাশের ফুটপাথে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে দু’জন নিহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ওই সময় দেশজুড়ে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় যানবাহনের লাইসেন্স চেক করে।

গত ১৯ মার্চ রাজধানীর প্রগতি সরণিতে কুড়িল বিশ^রোডে সুপ্রভাত নামের একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। এই ঘটনার পরও দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে নয়া দিগন্তকে জানান, সড়ক নিরাপত্তার জন্য যারা আন্দোলন করবে তারাই বেপরোয়া শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠবে। শিক্ষার্থীরা এখন শ্রমিকদের টার্গেট। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এখন খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন। আমরা যারা সড়কে শৃঙ্খলার কথা বলি আমরাও টার্গেটে পরিণত হতে পারি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। সেখানে আর কে কী করবে। যেখানে পুলিশ কমিশনার নিজেই বলেছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে তিনি এক বছরের জন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানান।

রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আসলেই টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ছাত্রদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের সম্পর্ক রেষারেষিতে চলে গেছে। এর আগে মেয়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে তারা কালি মেখে দিয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সড়কে নিরাপত্তা আসবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *