লক্ষ্মীপুরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে বড় দুই দলের মধ্যে বিএনপি অংশ না নিলেও জেলার ৫টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
সংশয়মুক্ত শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের দাবি ভোটারদের। তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সকল প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় আগামী ২৪ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জেলার রামগঞ্জ, রায়পুর, সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় মোট চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩০ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন প্রার্থীসহ মোট ৬৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলার ৫টি উপজেলায় ৪৫৮টি ভোটকেন্দ্রে, মোট ভোটার রয়েছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৬ জন।
এছাড়া রামগঞ্জে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুরাইয়া আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে এখন শহর কিংবা গ্রাম সবখানে ব্যানার পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে মাইকিং লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠকসহ ভোটারের মন জয় করার যত কর্মসূচি।
এ নির্বাচনে প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও একাধিক বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন। প্রার্থীরা দিন রাত প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। ভোটারদের মন জয় করতে ছুটছেন বাড়ি বাড়ি। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
চেয়ারম্যান পদের বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও পোষ্টার ছেঁড়াসহ নানা অভিযোগ করছেন। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরাও পাল্টা অভিযোগ করছেন। বাহিনী লালন পালনের অভিযোগও রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে।
লক্ষ্মীপুর সদরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (দোয়াত কলম) এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু (বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি) অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন বিভিন্ন স্থানে তার ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছেন। বিভিন্নভাবে তার সমর্থকদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি ও বিগত দিনে নিজেকে সফল চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌক প্রতীক) প্রার্থী আবুল কাসেম চৌধুরী। লক্ষ্মীপুরে কারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এটি সবার জানা আছে বলে জানান তিনি। বরং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তার। তবে তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করেছেন।
এদিকে রামগতি উপজেলায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আজাদ উদ্দিন সোহেল তার প্রচারণায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) আব্দুল ওয়াহেদ স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। সন্ত্রাসী ও বহিরাগতদের লালনসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ করেন তিনি। নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জয়ের ব্যাপারে দুই প্রার্থী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই দুই উপজেলার মতো অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে সাধারণ ভোটারদের রয়েছে ভিন্ন মত। কেউ বলছেন ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা দিলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন তারা। কেউ বলছেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান তারা। শঙ্কামুক্ত পরিবেশ ফেলে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে এবার নির্বাচিত করতে চান ভোটাররা।
এদিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ পাননি বলে জানান তিনি।
তবে এসব উপজেলায় প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, দেয়ালে পোস্টার লাগানোর দৃশ্য চোখে পড়ে হর হামেশাই।