রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: এক বছর আগে পর্যটক হিসেবে স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী ও শিশু কন্যা প্রিয়নময়ীসহ ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ১২মার্চ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন প্রিয়ক। তাঁর সাথে ছিল তাঁর মামাতো ভাই মেহেদী হাসান ও তাঁর স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা। কিন্তু নেপাল ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করার সাথে সাথেই বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ফারুক হোসেন প্রিয়ক তাঁর তিন বছর বয়সী একমাত্র শিশু কন্যা কন্যা প্রিয়নময়ী। এরপর থেকে প্রিয়কের মা ফিরুজা বেগম সন্তান আর নাতীর কবরের পাশে কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছেন ১টি বছর।
একই বিমানে থাকা প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী ও তার মামাতো ভাই মেহেদী হাসান মাসুম ও মাসুমের স্ত্রী সাইদা আক্তার স্বর্ণা। যদিও ভাগ্যের জোড়ে জীবন হাতে নিয়ে ফেরেন তাঁরা।
ফারুক হোসেন প্রিয়ক ওরফে এফ এইচ প্রিয়ক। তার শখগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ফটোগ্রাফী, যেখানেই যেত ক্যামেরা হতো তার সঙ্গী। নিজের ছবির পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের নিজ ক্যামেরায় উঠানো ছবিগুলো দিয়েই ঘরগুলো পূর্ণ করে তুলেছিল সে। কিন্তু তার শখের ছবিগুলোই যে তার মা ফিরোজা বেগমের শেষ জীবনের বেঁচে থাকার অবলম্বণ হবে কে ভেবেছিল!
ফিরুজা বেগম ২০১২ সালে তার স্বামী সরাফত আলীকে হারিয়েছিলেন। এরপর থেকেই একমাত্র বুকের ধন ফারুক হোসেন প্রিয়কই হয়ে উঠছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন। একটা সময় এসে ছেলেকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে ঘরে স্ত্রী হিসেবে আনেন আলমুন নাহার এ্যানীকে। দেড় বছরের মাথায় সংসার আলোকিত করে প্রিয়ংন্ময়ী জন্ম হয়। এরপর থেকেই তাদের সংসারে তৈরী হচ্ছিল সুখের আবহ। তবে তা আর বেশী দিন থাকল না। এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল সবকিছু।
প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম জানান, প্রিয়কের পছন্দের ফুলের তালিকায় ছিল কামিনী। নিজ হাতে বাড়ীর প্রবেশ মুখেই রোপন করেছিলেন কামিনী গাছ। ছেলের পছন্দের প্রতি ভালবাসা জানিয়ে তার মা মৃত্যুর পর এই কামিনী গাছ তলায় ছেলে ও নাতনীকে কবর দিয়েছেন। আর নিজ জানালা দিয়েই ছেলের কবরের দিকে তাকিয়েই তার দিন ও রাত কেটে যাচ্ছে। ফিরুজা বেগমের কোন বিত্ত বৈভবের অভাব না থাকলেও একটি প্রজন্ম হারানোর দু:খকে সাথে নিয়েই তার শেষ জীবনের দিনগুলো কাটছে।
স্বামী, সন্তান ও নাতনী হারিয়ে নিজের কষ্টগুলোর কথা বলতে বলতে চোখ দিয়ে যেন অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছিল ফিরুজা বেগমের। দীর্ঘ এক বছর কান্নার পরও এখনোও তার চোখের জল শুকায়নি। স্বামী হারানোর পর ছেলে ও নাতনীকে হারিয়েছেন। ছেলের বউ আলমুন নাহার এ্যানীও ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসে স্বামীর বাড়ী চলে গেছেন। এখন ছেলে ও নাতনীর রেখে যাওয়া স্মৃতি নিয়েই একাকী ফিরুজা বেগমের সংসার। ঘরের বিভিন্ন স্থানে তিনি সাটিয়েছেন ছেলের স্মৃতিময় ছবিগুলো।