সুইস ব্যাংকের টাকা অবমুক্ত হলে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ

অর্থ ও বাণিজ্য

musaসুইস ব্যাংকে আটক অর্থ অবমুক্ত হলে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমসের (প্রিন্স মুসা)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।

মুসা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গে আমি অফিসিয়ালি দুদককে বলে এসেছি যে, গোয়ালন্দ থেকে আরিচা ও নগরবাড়ি পর্যন্ত সেতু করতে তিন বিলিয়ন ডলার লাগবে। ওই টাকা অবমুক্ত হলে আমি বিনিয়োগ করতে চাই। এছাড়া আমার টাকা অবমুক্ত হলে আরো কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমার অর্থ অবমুক্ত হলে সরকারি কর্মচারি, শিক্ষক এবং বৃদ্ধদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বো।’

প্রসঙ্গত, সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৭ বিলিয়ন ডলার রয়েছে- এমন তথ্য দিয়ে চলতি বছর বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী বিজনেস এশিয়া সংবাদ প্রকাশ করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫১ হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ‘৭ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৫১ হাজার কোটি টাকা কোন দিন বাংলাদেশের কেউ অর্জন করতে পারেনি। আগামী ৫০ বছরেও তা পারবে না। যত টাকা বিদেশ থেকে অর্জন করেছি। বাংলাদেশের কোন টাকা আমি নেইনি কিংবা পাচার করিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমার বিরুদ্ধে কোনো দিন কোনো অভিযোগ ছিল না। ৪০বছর আগে থেকেই এই দেশের জন্য কাজ করছি। এখনও কাজ করে যাচ্ছি।’

এই ধনকুবের আরো বলেন, ‘আজ দেশ দাঁড়িয়ে আছে রেমিটেন্সের ওপর। রেমিটেন্স আসে জনশক্তি থেকে। জনশক্তি রপ্তানি না হলে দেশ আজ সোমালিয়ার চেয়ে বেশি অধ:পতনে যেত।’

তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে দুদককে সব বলে এসেছি। ধৈর্য্য ধারণ করুন। দুদক আমার সব কথা শুনেছে। তারা আরো অনুসন্ধান করুক। অনুসন্ধান করলে তারা বুঝতে পারবে। এখন পর্যন্ত আমি ভেরি মাস হ্যাপি।’

গত ৪ ডিসেম্বর তাকে তলব করে দুদক। ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মুসা বিন শমসের বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার মূল সম্পত্তি প্রায় ১২ বিলিয়ন ইউএস ডলার।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিন মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশি ধনাঢ্য অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ৭ বিলিয়ন ডলার আটকে আছে সুইস ব্যাংকে।

সেই অর্থ ও তার উৎসের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুসা বিন শমসেরের বিষয়েও নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ২০১১ সালের ২৪ জুন তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে তার নো ইউর কাস্টমার (কেওয়াইসি) ফর্মের সব তথ্য জানতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ড. মুসার সব ব্যাংকের স্থায়ী, চলতি, সঞ্চয়ী, ডিপিএস, এসপিডিএস, এফডিআর বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে হিসাব পরিচালিত হয়েছে বা হচ্ছে কি না সে সম্পর্কে তথ্যসহ হিসাব খোলার দিন থেকে হালনাগাদ হিসাব বিবরণী দাখিল করতে তফসিলিভুক্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব হিসাব তলব করলেও পরে রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, মুসা বিন শমসের অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত। ড. মুসা ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে অনুদান দিতে চেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। লেবার পার্টির টনি ব্লেয়ার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য তার পাঁচ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও এককভাবে অর্থায়নের কথা বলে আলোচনায় আসেন মুসা। বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রত্যাহার করে নিলে মুসা বিন শমসের এতে ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কথা বলেন। রহস্য-বিবরে ঢাকা মুসা বিন শমসেরকে এবার ফের আলোচনায় আনল দুদক।

এ উপমহাদেশে তিনি শীর্ষস্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি যিনি বিলিয়ন পাউন্ড উপার্জন করছেন ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র বেচাকেনার ব্যবসা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *