ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধা যাচাই- বাছাই প্রক্রিয়ায় উপজেলা কমিটি ৪০ হাজার জনকে ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত এসব ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৬শে মার্চের আগেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত সংক্রান্ত চিঠি যাবে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ পর্যন্ত যে ভাতা দেয়া হয়েছে তা ফেরত নেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা নেই।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি ৪০ হাজার জনকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন বলে চিহ্নিত করেছে। এসব ব্যক্তির ভাতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সহসাই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি যাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা নন হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আপিল করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে গেজেটভুক্তদের ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী), মুজিবনগর গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গেজেট, বিসিএস গেজেট, সেনাবাহিনী গেজেট, বিমান বাহিনী গেজেট, নৌবাহিনী গেজেট, নৌ-কমান্ডো গেজেট, বিজিবি গেজেট, পুলিশ বাহিনী গেজেট, আনসার বাহিনী গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দ সৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা গেজেট, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গেজেট, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর) এবং বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্বপালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম না থাকলে কাউকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করেনি যাচাই বাছাই কমিটি। এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দেশের সব উপজেলা, জেলা ও মহানগরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হয়। বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে ইচ্ছুক প্রায় দেড় লাখ আবেদন এবং সনদ ও গেজেটভুক্ত কিন্তু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিযোগ রয়েছে এমন প্রায় ৫৫ হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি করে।
এদিকে হাইকোর্টে একটি রিটের কারণে প্রায় দুই বছর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই বন্ধ রাখা হয়। এরপর হাইকোর্টে ওই রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর গেজেটভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করার উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ৫ই জুলাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) বৈঠকে নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পর্যালোচনার জন্য নতুন করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। জেলা ও উপজেলা কমিটির কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য আটজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব পর্যালোচনার ভিত্তিতেই ৪০ হাজার জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৮ জন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন করে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৫৪৯ জন। একই সময়ে ভাতা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ থেকে বেড়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার হয়। এ তালিকায় কাঁটছাট হতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে ২০ হাজার জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসে ৫০০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হতো। ২০১৭ সাল থেকে এক লাখ ৮৬ হাজার ২৪০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া শুরু হয়। চলতি বছরে ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জনে। বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীরউত্তমদের মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীরবিক্রমদের ২০ হাজার টাকা, বীরপ্রতীকদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী দেয়া হচ্ছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা এবং শহীদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ও উৎসব ভাতা বাবদ ৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এ অর্থবছর থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে মহান বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেয়া হচ্ছে।