প্রিয়াংকার রোড শোতে ইন্দিরারই ছায়া

Slider সারাবিশ্ব

কলকাতা: আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে সোমবার ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ রোড শোর মাধ্যমে রাজনীতির নতুন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র। গোটা রোড শোতে লক্ষ্ণৌয়ের মানুষ ইন্দিরার ছায়াই দেখতে পেয়েছেন। উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে সোমবার প্রিয়াংকার এই রোড শো ঘিরে জনউন্মাদনা তৈরি হয়েছিল তা মনে করিয়ে দিয়েছে, প্রায় ছয় দশক আগে মাত্র ৪১ বছর বয়সে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী এই লক্ষ্ণৌতে এমনই জনজোয়ার তৈরি করেছিলেন। এদিনও ভাইবোনের এই রোড শোতে সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন প্রিয়াংকা ।

আর তাই রোড শোতে যোগ দেওয়া কর্মী-সমর্থকদের মুখে বারে বারেই শোনা গেছে, ইন্দিরা গান্ধী ফিরে এসেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবার ঠিক আগে কংগ্রেসের শক্তি অ্যাপের মাধ্যমে এক অডিও বার্তায় পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু করার ডাক দিয়েছেন প্রিয়াংকা। তিনি বলেছেন, আমি চাই আমাদের সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন আসুক। রাজনীতির পরিসর এমন হোক যেখানে সকলে নিজেকে তার অংশ ভাবতে পারে। সোমবার সকালে লক্ষ্ণৌ পৌঁছেই রোড শো শুরু হয়েছিল দাদা রাহুল গান্ধীর অভিভাবকত্বে প্রিয়াংকার।

পাশে ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও উত্তর প্রদেশে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর। প্রিয়াংকার এই রোড শোকে ঘিরে গোলাপী সেনার উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে থেকে ৫০০ জনকে আলাদা করে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যাঁদের পরণে ছিল প্রিয়াংকা গান্ধীর ছবি এবং স্লোগান ছাপা গোলাপি জামা। তাঁদের জামায় হিন্দিতে লেখা, ‘দেশের সম্মানের জন্য, প্রিয়ংকাজি ময়দানে, মনও দেব, সম্মানও দেব, প্রয়োজন পড়লে জীবনও দেব।’ বিমানবন্দর থেকে কংগ্রেস কার্যালয় নেহরু ভবন পর্যন্ত পুরো পথটাই মানুষে মানুষে সয়লাব ছিল।এই ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৪ ঘন্টার বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে। এক সময় বাস থেকে নেমে গাড়ির উপরে ভাইবোন বসে পড়েছিলেন। রোড শোর শুরু থেকেই কর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়েছেন, কখনো সমর্থকদের ছুড়ে দেওয়া ফুলের মালা আবার ছুড়ে দিয়েছেন জনতারই উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ছিল মুখের হাসিটি। আবার কখনো নমস্কার করেছেন সকলেরও উদ্দেশ্যে। তবে গোটা পথ এদিন একটি কথাও বলেন নি। যা বলেছেন তা বলেছেন রাহুল গান্ধীই। একসময় রাফাইল বিমানের মডেল ভাই-বোন হাতে তুলে ধরেছেন। খোঁচা দিয়েছেন মোদীকে। প্রিয়াংকাকে ঘিরে এই রোড শো শুধু লক্ষ্ণৌ নয়, গোটা উত্তেরপ্রদেশে দলীয় কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছে। আর তাতেই মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবদেরও নতুন করে সমীকরণ নিয়ে ভাবতে বসতে হচ্ছে। রোড শো শেষে রাহুল গান্ধী বলেছেন, অখিলেশ ও মায়াবতীজিকে সম্মান করি। তবে কংগ্রেস নিজের শক্তিতে উত্তরপ্রদেশে লড়াই করবে। তিনি বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাস করে এমন সরকার গড়া। এই কাজের জন্যই প্রিয়াঙ্কা এবং সিন্ধিয়া দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তাঁরা শুধু লোকসভা নয়, বিধানসভা ভোট নিয়েও ভাববেন। যতক্ষণ না এখানে কংগ্রেসের সরকার তৈরি হচ্ছে আমরা স্বস্তিতে থাকবো না। প্রিয়াংকা দলের পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। সোমবার সেই দায়িত্বের জন্য তিনিই যে উপযুক্ত রোড শো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গেই নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তিনি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর কাজ করবেন। ইতিমধ্যে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য। ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ৮০টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ৪২টি কেন্দ্র পড়েছে পূর্ব অংশে। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রিয়াংকা শুধু পুর্ব অংশেই তাকাবেন না। তাকে ছুটতে হবে গোটা ভারতে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে এইআইসিসিতে অনুরোধ গিয়ে পৌঁছেছে, প্রিয়াংকাকে একবারের জন্য রাজ্যে পাঠানো হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *