ক্ষতিপূরণ দাবিতে আইনি লড়াইয়ে নামছেন জাহালম

Slider বিচিত্র

ক্ষতিপূরণ দাবিতে আইনি লড়াইয়ে নামছেন জাহালম। তাকে যারা ফাঁসিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন তিনি। আর এই আইনি লড়াইয়ে জাহালমকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সহায়তা করবে বলে জানা গেছে। মিথ্যা মামলায় জেল থেকে জামিনে মুক্ত করার ব্যাপারেও জাহালমকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সহায়তা করেছে। কমিশন জাহালমকে একটি চাকরি দেয়ার কথাও চিন্তা করছে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালে। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সোনালী ব্যাংক মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখা থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা লোন নেন আবু সালেক নামের এক ব্যক্তি। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ওই লোন নেয়া হয়। লোনে ঠিকানা দেয়া হয় জাহালমের পাশের গ্রামের। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করে। মোট ৩৩টি মামলায় ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রহীতা আবু সালেককে আসামি করা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ আবু সালেককে গ্রেফতার না করে গ্রেফতার করে জাহালমকে। জাহালম তখন ঘোড়াশালের একটি পাটকলে চাকরি করতেন। দুদক তখন ৩৩টি মামলাতেই জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। জাহালম জানান, ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে ঘোড়াশালের কারখানা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তখন তিনি ওই কারখানায় সপ্তাহে আড়াই হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। তিনি বারবার দুদক কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বোঝাতে চেয়েছেন তার নাম জাহালম, আবু সালেক নয়। কিন্তু কেউই তার কথা শোনেনি। তার চেহারার সাথে নাকি আবু সালেকের চেহারার মিল ছিল। এমনকি, যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন সে-ই আবু সালেক।

গ্রেফতারের পর আবু সালেকের স্থানে জাহালম জেল খাটতে শুরু করেন। অথচ তিনি জানেনওনা কিভাবে লোন নিতে হয়। তিনি কোনো লেখাপড়াই জানেন না। চেহারা বিভ্রাটে এভাবে মিথ্যা মামলায় জেল খাটা অবস্থায় বিষয়টি মিডিয়ার নজরে পড়ে। তাকে নিয়ে একটি বেসরকারি চ্যানেল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। তখন বিষয়টি নজরে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। এরপর মানবাধিকার কমিশনও জাহালমকে নিয়ে অনুসন্ধান করে। তাতেও বেরিয়ে আসে জাহালম নির্দোষ। তাকে অন্যায়ভাবে ওই মামলাগুলোতে ফাঁসানো হয়েছে। মানবাধিকার কমিশন থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি ও জাহালমকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানানো হয়।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গত রোববার মধ্যরাতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পান জাহালম। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সোজা চলে যান টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ধুবরিয়ার নিজ গ্রামে। সেখানে তার মা-স্ত্রী-সন্তান থাকেন। স্বজনদের সাথে একদিন কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার তিনি ঢাকায় আসেন। বিকেলে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। জাহালম দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, মানুষকে যেন এমন বিপদে আর পড়তে না হয়। তিনি বলেন, তিনি বারবার সবাইকে বোঝাতে চেয়েছেন; তিনি কোনো ঋণ নেননি। ব্যাংক থেকে ঋণ কিভাবে নিতে হয় তা-ও জানেন না। তিনি খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ। তার মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে তাদের বড় করেছেন। এমনকি, তিনি দুদকেও গিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি আবু সালেক নন, জাহালম। কিন্তু সেদিন কেউ তার কথা শোনেননি। তাকে দেখিয়ে অনেকে আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। সাক্ষীরা আদালতে বলেছিলেন, তিনিই ঋণ নিয়েছেন।

জাহালম ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামবেন। তিনি জানান, যাদের কারণে তার তিনটি বছর জেলে কাটাতে হয়েছে, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পরিবার-পরিজন না খেয়ে থেকেছে, বৃদ্ধা মায়ের আবারো মানুষের বাসায় কাজ করতে হয়েছে, সামাজিকভাবে তিনি হেয় হয়েছেনÑ তাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করবেন। তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন। যারা তার ক্ষতি করেছে তিনি তাদের শাস্তি চাইবেন আইনিভাবে।

গতকাল ঢাকায় এস জাহালম ছুটে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। সেখানে কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন তিনি। এ সময় তার সাথে ছিলেন চ্যানেল ২৪-এর রিপোর্টার শাহরিয়ার আরিফ। শাহরিয়ার আরিফ জানান, জাহালমকে আইনি সহায়তা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জাহালমের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও কমিশন বিবেচনায় রেখেছে। কিন্তু সমস্যা হলো জাহালম লেখাপড়া জানেন না। তার যোগ্যতা অনুযায়ী পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে থাকতে পারে সেরূপ একটি চাকরির আপাতত ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *