বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষেরা মেদহীন শরীরের বউ কামনা করে থাকেন

Slider লাইফস্টাইল

ঢাকা: সহধর্মিনী বা বউ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রায় প্রত্যেক পুরুষেরই নিজেদের ইচ্ছা বা আলাদা চিন্তা ধারা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষেরা মেদহীন শরীরের বউ কামনা করে থাকেন।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় যা সামনে এসেছে তা শুনলে চমকে যাবে যেকোন পুরুষ। গবেষণা বলছে, জীবনে সুখী হতে হলে অবশ্যই মোটা মেয়েদের বিয়ে করা উচিত পুরুষদের।

গবেষকরা জানিয়েছেন, মোটা মেয়েদের তুলনায় স্বভাবের দিক দিয়ে চিকণ শরীরের মেয়েরা অনেকটাই রিজার্ভড হয়। স্বামীর সঙ্গে তারা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেও অনেকটা সময় নেন।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, চিকণ স্ত্রী-দের তুলনায় তাদের স্বামীদের দশ গুণ বেশি সুখে রাখেন মোটা স্ত্রী-রা। এছাড়া তাদের সঙ্গীর চাহিদাও তারা অনেক বেশি ভালো বোঝেন। দেশেবিদেশে

মেয়েদের বিয়ের বয়স
এবনে গোলাম সামাদ

মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স ঠিক কত ধার্য কার উচিত এবং সেটার যুক্তি ঠিক কী হওয়া উচিত তা নিয়ে এতাবদ নানা দেশে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ উপমহাদেশে হিন্দুদের সমাজ জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে প্রধানত মনুর বিধান অনুসারে। মনুসংঘীতায় বলা হয়েছে, মেয়েদেরে আট বছর বয়সের মধ্যেই বিবাহ প্রদান করতে হবে। হিন্দু সমাজে আট বছর বয়সী মেয়েকে বলা হয় গৌরী।

ইংরেজ শাসনামলে ১৮৯১ সালে আইন পাশ হয় স্ত্রীর বয়স ১২ বছরের কম হলে স্বামী তার সঙ্গে সহবাস করতে পারবে না। কারণ, এর চাইতে কম বয়সী মেয়ের সঙ্গে সহবাস করবার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর মৃত্যু ঘটতে দেখা যায়। এই আইনকে বলা হয় সহবাস সম্মতি আইন বা Age of Consent। বৃটিশ শাসনামলে এই আইন যখন পাশ হয়, তখন বিলাতে ১২ বছরের কম বয়সী কোন মেয়ে গণিকার খাতায় নাম লেখাতে পারতো না। সহবাস সম্মতি আইন নিয়ে হিন্দু সমাজে প্রচুর প্রতিবাদ উঠে। মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত হিন্দু নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক বলেন, ইংরেজরা হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করছে। নষ্ট করছে হিন্দু সংস্কৃতি। কিন্তু আইনটা থেকেই যায়। ১৯৫২ সালে হিন্দু কোডবিল পাশ হয়। এ সময় ভারতের হিন্দু মেয়েদের নূন্যতম বিবাহের বয়স ধার্য করা হয় ১৮ এবং ছেলেদের নূন্যতম বিবাহের বয়স ধার্য করা হয় ২১। কিন্তু এই বয়স ধার্য করা হয় কোন যুক্তি ছাড়াই।

বাংলাদেশ হবার পর আমাদের দেশে ছেলে মেয়েদের বিবাহের নূন্যতম বয়স ধার্য করা হয় ভারতের অনুকরণে। কিন্তু ভারতে মুসলমান বিয়েতে এই নূন্যতম বয়স প্রয়োজ্য নয়। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও হিন্দু ও মুসলমানের ক্ষেত্রে বিবাহ ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন এখনও এক হতে পারেনি। হয়ে আছে পৃথক। কিন্তু আমাদের দেশে ছেলে মেয়ের বিবাহের ক্ষেত্রে আমরা হিন্দু কোডবিলের অনুকরণ করতে চেয়েছি। অবশ্য বিবাহের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পরিমাণে মেনে চলেছি শরিয়তের বিধান। এদেশে প্রগতিশীলা মুসলিম মহিলারা দাবি করছেন, নর-নারীর সমান অধিকার। কিন্তু মহিলারা ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না মোহরানার দাবি। এ ক্ষেত্রে তারা আঁকড়ে ধরে থাকতে থাকতে চাচ্ছেন মুসলিম ধ্যান ধারণাকে। কেবল তাই নয়, এখন কোন মুসলমান ছেলে যদি তার স্ত্রীকে মোহরানার টাকা পরিশোধ না করতে পারেন তাবে তাকে ভোগ করতে হচ্ছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিনাশ্রম কারাদণ্ড। অন্যকোন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এরকম আইন প্রচলিত আছে বলে আমাদের জানা নেই।

জার্মানীতে যদি কোন স্ত্রীর কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, তবে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যে ক্ষতিপূরণ দেবার বিধান আছে। যদি স্ত্রী ক্ষতিপূরণ দেবার সক্ষমতা রাখেন। কিন্তু আমাদের দেশে নারী-পুরুশের সমান অধিকার নিয়ে প্রগতিশীলা মহিলারা অনেক কথা বললেও বলছেন না এরকম কোন আইন প্রবর্তনের কথা। আমাদের দেশে নারী নির্যাতন বন্ধের জন্যে কড়া আইন প্রবর্তন করা হয়েছে। আমার কিছু উকিল বন্ধু বলছিলেন আদালতে শতকরা আশিভাগ নারী নির্যাতন মামলাই হর মিথ্যা। এরকম মামলা চলতে থাকলে এক সময় এ দেশে বিবাহ প্রথা টিকবে না। আর তাই ছেলে মেয়েরে বিবাহ সংক্রান্ত বয়স নিয়ে যে বিতর্ক তোলা হচ্ছে, থাকবে না তার কোন প্রয়োজন। কেননা, সমাজ জীবনে বিবাহ ব্যবস্থাটাই হয়ে উঠতে চাইবে অবান্তর। আমি মনে করি, মেয়েদের বিবাহের নূন্যতম বয়স ১৪ করলে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। সেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট নাটক খুবই খ্যাত। রোমিও যখন ভালবেসে জুলিয়েটকে বিবাহ করতে চায়, তখন জুলিয়েটের বয়স ছিল ১৪ বছর।

ইউরোপে এক সময় ১৪ বছরে অনেক মেয়ের বিবাহ হয়েছে। কিন্তু এর ফলে ইউরোপের সমাজ জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে এমন নয়। নর-নারীর যৌন জীবনকে এক করে দেখবার কোন সুযোগ নেই। গড়পরতা মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। একজন নারী তার জীবনে প্রায় ৪০০’র মত ডিম্বকোষ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা মেয়েদের মত এভাবে সীমিত নয়। বৃদ্ধ বয়সেও পুরুষের শুক্রকীট উৎপাদন ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায় না। তাই পুরুষ ও নারীর যৌন জীবনকে একই সূত্রে বিচার করতে গেলে বড় রকমের ভূল করা হয়। মেয়েদের জীবনে পুরুষের তুলনায় বার্ধক্য আসে অনেক তাড়াতাড়ি। কিন্তু বৃদ্ধা মহিলারা গড়পরতা বৃদ্ধ পুরুষের চাইতে সব দেশেই বেশি হতে দেখা যায়।

পৃথিবীতে বৃদ্ধের চাইতে বৃদ্ধার সংখ্যাই বেশি। মানসিক দিক থেকেও নর-নারীর বিকাশ এক রকম নয়। ছেলেদের চাইতে মেয়েরা কথা বলতে শেখে আগে। তারা সংসার সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয় ছেলেদের চাইতে আগে। একজন মেয়ের মানসিক বয়স আর একজন ছেলের মানসিক বয়সকে এক করে দেখতে চাওয়া তাই জীববিজ্ঞান সম্মত নয়। ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে নূন্যতম বিবাহের বয়স ঠিক করতে হলে মানব জীবনের এইসব জৈব বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিতে হবে। মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে তাদের আইবুড়ি করা হবে তাদের জন্য হবে ক্ষতিকর। ছেলেদের ক্ষেত্রে আইবুড়া বহার প্রশ্ন উঠে না। বাংলাভাষায় আইবুড়ি শব্দ আছে কিন্তু আইবুড়া বলে কোন শব্দ নেই। বেশি বয়সের মেয়েরা সন্তান ধারণে কষ্ট পান অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তাদের গর্ভজাত সন্তান হতে দেখা যায় হাবাগোবা। কারণ, তাদের জরায়ুতে ভ্রুণ যথাযথভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে না। ভ্রুণের মাথার উপর পড়ে জরায়ুর প্রাচীরের চাপ। যার ফলে বেশি বয়সের মায়েদের প্রথম সন্তান হাবাগোবা হবার সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট বেশি। এরকম হাবাগোবা সন্তানকে ইংরেজি ভাষায় বলে মঙ্গোলিয়ান ফিব্ল মাইন্ডেড।

বেশি বয়সের মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই পারেন না স্বামীর সাথে খাপ খাইয়ে চলতে। ফলে বেশি বয়সের মেয়েদের বিবাহ হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে দেখা দেয় বেশি। বিবাহর বয়স নিরুপনের ক্ষেত্রে এই সব বাস্তবতাকেও নেওয়া উচিত বিবেচনায়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রগতিশীলা মহিলারা বলছেন পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। যেটা বাস্তবতার সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সব দেশেই বিবাহিত পুরুষ তার স্তীকে খেটে খাওয়াতে এখও বাধ্য। মেয়েরা চাকরী করলেও তার স্বামীর ভরনপোষণে সহযোগিতা করতে বাধ্য নন। এমন কি ইউরোপ আমেরিকাতেও নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব মহিলা চাকরি করেন না, গৃহকর্মেই থাকেন অধিক সময় নিয়োজিত তাদের ইন্সুরেন্সে প্রিমিয়াম দিতে হয় কম। কিন্তু যারা বাইরে চাকরি করেন, তাদের ইনসুরেন্সে প্রিমিয়াম দিতে হয় বেশি। কেননা তাদের জীবনে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

অনেক বাজে কথা এবং ভুল কথা শেখানো হচ্ছে আমাদের মেয়েদের। তাদের বোঝানো হচ্ছে ঘরের কাজ হল ছোট কাজ। আর বাইরের বাজ হল বড় কাজ। কিন্তু আমাদের দেশে বাইরের কাজ করতে যেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শিশু সন্তানরা হচ্ছে মায়ের স্নেহ যত থেকে বঞ্চিত। তারা হচ্ছে মানসিক দিক থেকে বহুল পরিমাণে ভারসাম্যহীন। অনেক দেশেই দেখা গিয়েছে মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বাড়তে। অনেক দেশে তাই শিশু সন্তানদের একটি বয়স বেঁধে দেয়া হচ্ছে। যা না হলে মায়েরা সন্তান ফেলে বাইরের কাজে যেতে পারবেন না। বিশেষ করে স্বামী যখন যথেষ্ট উপার্জন করেন। কিন্তু আমাদের দেশে এরকম কোন আইন করবার কথা এখনও কোন আইন প্রণেতা ভাবছেন বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশে এক সময় বাম চিন্তার প্রাধান্য ছিল। এখনো যার জের চলেছে। বাম চিন্তকরা মনে করেন একসময় সমাজে ছিল নারীর প্রাধান্য। কেননা, অর্থনীতির ক্ষেত্রে ছিল নারীদের প্রাধান্য। কিন্তু এখন যেহেতু পুরুষের অর্থনৈতিক প্রাধান্য বেশি, তাই নারীদের চলতে হচ্ছে পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু অর্থনীতি দিয়ে সবকিছুর ব্যাখ্যা করা চলে না।

মানুষ স্তন্যপায়ী প্রাণী। সন্তান মাতৃদুদ্ধ পান করে বড় হয়। মানব সন্তান অন্যান্য প্রাণীর সাবকের তুলনায় জন্মায় অনেক অসহায়ভাবে। তাকে মানুষ করতে হলে প্রয়োজন হয় অনেক যত্নের। যেটা কেবল মায়ের পক্ষেই সম্ভব। মানব প্রজাতির ক্ষেত্রে নারীরা যদি সন্তান পালনে অবহেলা করে বাইরের কাজে মেতে উঠতে চান, তবে যে কোন জাতির ক্ষেত্রে তা হতে পারে অবলুপ্তির কারণ। সেটা কাম্য হতে পারে না। কেননা, মানুষের পারিবারিক জীবনের লক্ষ্য হল সন্তান সন্ততির নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তার মাপকাঠিতেই বিচার্য হতে হবে অন্য আর সবকিছু।

বিবাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল বই লিখেছেন এডওয়ার্ড ওয়েস্টারমার্ক। তাঁর লেখা History of Human Marriage বইতে বিবাহের সঙ্গা দিতে গিয়ে বলেছেন, নর-নারীর মধ্যে তুলনামূলকভাবে দির্ঘ বন্ধন, যার লক্ষ্য হল সন্তান প্রতি পালন। সন্তান প্রতি পালনের প্রয়োজন থেকেই হতে পেরেছে বিবাহ বন্ধনের উদ্ভব। তিনি দেখিয়েছেন অনেক প্রাণীর মধ্যে ঠিক বিবাহ বন্ধন বলে কিছু না থাকলেও থাকতে দেখা যায় যে, সন্তানকে রক্ষা করবার জন্যে স্ত্রী ও পুরুষ করছে প্রচেষ্টা। একেও বলতে হবে বিবাহ বন্ধন। যেখানে সন্তান প্রতি পালনে নর-নারী করে চলে সহযোগিতা সেটাকেই মনে করা যায় বিবাহ বন্ধন। যদিও সেটা হতে পারে তাদের সহজাত ধর্মপ্রসূত। আমরা বিবাহ সম্পর্কে ওয়েস্টারমার্কের দেওয়া সংজ্ঞাকেই গ্রহণীয় মনে করছি।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ইসলামে বাল্যবিবাহ সমর্থন করা হয় না। কেননা, ইসলামে কেবল ছেলেরা বিবাহ করে না, মেয়েরাও করে। মেয়েরা কবুল না করলে বিবাহ হতে পারে না। অর্থাৎ ইসলামে মনে করা হয়, স্বামী বেছে নেবার দক্ষতা হলেই মেয়েরা বিবাহের উপযুক্তা হন। তবে শরীয়তে বিবাহের নূন্যতম কোন বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ইসলামে মেয়েদের মাতা-পিতার এবং মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে যে, মেয়েরা স্বাধীনভাবে হালাল রুজী উপার্জন করতে পারবে। মেয়েদের এই উপার্জনে স্বামী হস্তক্ষেপ করতে পারবে না (আল-কুরআন- সুরা ৪:৩২)। কিন্তু ইসলামে মেয়েদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে কুটির শিল্পে। তাদের বলা হয়নি দূর বিদেশে কারাভানে যাত্রা করতে।

আজকাল বাংলাদেশে সবকিছুতে ইসলামের সমালোচনা করা হয়ে উঠেছে প্রগতিশীলতার লক্ষণ। কিন্তু অর্থনীতিতে নারীর অবদান রাখার ক্ষেেেত্র ইসলামে কোন বিরোধিতা করা হয়নি। কিন্তু ইসলামে সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীকে অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা হয়নি। ইসলামে নারীর মাতৃরূপের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর এই কারণেই হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পদতলে সন্তানের স্বর্গ।
মেয়েদের বিয়ের বয়স – এবনে গোলাম সামাদ

আমাদের মেয়েদের বিয়ের বয়স

গোলামএবনে সামাদ

বাংলা সাহিত্যে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের (১৮২৫-১৮৯৪) পারিবারিক প্রবন্ধসমূহ যথেষ্ট খ্যাত হয়ে আছে। তার লেখা এসব প্রবন্ধের মধ্যে একটি হলো, বাল্যবিয়ে নিয়ে। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম বাল্যবিয়ে নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভূদেব বাল্যবিয়ের সমর্থক ছিলেন। তিনি তার প্রবন্ধে বলেছেন- ‘মেয়েরা বিবাহের পর শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। শ্বশুর বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে সে সুখী হতে পারে না। মেয়েরা অল্প বয়সে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গেলে সেই বাড়িরই একজন হয়ে বেড়ে ওঠে। তাই তাদের পক্ষে সহজ হয় শ্বশুরবাড়ির জীবনধারার সাথে একইভূত হতে পারা। কিন্তু বেশি বয়সের মেয়েদের পক্ষে এটা সম্ভব হতে পারে না। তারা শ্বশুরবাড়িতে জড়িয়ে পড়তে চায় বিবাদবিসম্বাদে।’

ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের সময়ের হিন্দু পরিবার সাধারণত হতো যৌথ পরিবার। মেয়েদের হতে হতো তাদের শ্বশুর বাড়িতে সেই যৌথ পরিবারেরই একজন। ভূদেব এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেছিলেন বাল্যবিয়েকে। হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয়, অষ্টমবর্ষে গৌরী দান। হিন্দুধর্মে বাল্যবিয়েকে সমর্থন করা হয়। ভূদেবের ওপর পড়েছিল হিন্দুশাস্ত্রেরও প্রভাব। তাদের শাস্ত্রে বাল্যবিয়ে সমর্থন করা হয়েছে প্রধানত দু’টি কারণে। একটি কারণ হলো, বাল্যবিয়ে হলে মেয়েরা খুব অল্প বয়সেই পেতে পারে স্বামীর সুরক্ষা। অন্য দিকে, অল্প বয়সে বিয়ে হলে মেয়েরা যৌন কামনার বশে বিপথগামী হয় না। কেননা, স্বামী তাদের যৌনতৃষ্ণা মেটাতে পারে। স্ত্রীরা সহজেই থাকতে পারে সতীসাধী। বজায় থাকতে পারে সামাজিক শৃঙ্খলা। এই যুক্তি দু’টি রবীন্দ্রনাথও মানতেন, যদিও তিনি ছিলেন না খাঁটি হিন্দু।

তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম। কিন্তু ব্রাহ্ম-সমাজের যে শাখার তিনি ছিলেন প্রতিনিধি, সেই আদি ব্রাহ্ম সমাজের অনেক রীতি নীতিই ছিল হিন্দুশাস্ত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ তার কন্যার বিয়ে দিয়েছিলেন, যতদূর জানি, মাত্র ৯ বছর বয়সে। একসময় বিলাতেও খুব কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হতো। শেকসপিয়রের বিখ্যাত নাটক রোমিও জুলিয়েটে আমরা দেখি, নায়িকা জুলিয়েটের বয়স যখন চৌদ্দ, তখনই সে রোমিওর প্রেমে হতে পেরেছে প্রমত্তা। একসময় বিশ্বের সর্বত্রই মনে করা হতো মেয়েরা ঋতুমতী হলে সে হয় বিয়ের উপযুক্ত। সেটাই তার বিয়ের বয়স।

ইসলাম ধর্মে বিয়েতে মেয়েদের অনুমোদন লাগে। মেয়েরা স্বামীকে কবুল না করলে ইসলামি মতে বিয়ে হতে পারে না। কিন্তু বাংলার মুসলমান সমাজে বাস্তব ক্ষেত্রে এই রীতি ঠিক প্রচলিত ছিল বলে মনে হয় না। অভিভাবকেরাই তাদের মেয়ের বিয়ে ঠিক করতেন। আর তাদের কন্যারা পারিবারিকভাবে স্থিরীকৃত ব্যক্তিকেই মেনে নিত তাদের স্বামী হিসেবে। শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন : একটা ঘটনা লেখা দরকার, নিশ্চয় অনেকে আশ্চর্য হবেন। আমার যখন বিবাহ হয়, তখন আমার বয়স বারো তেরো বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিবাহ দিতে হবে। কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব। রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হল। আমি শুনলাম, আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে। রেণুর যখন পাঁচ বছর, তখন তার মা মারা যান।

একমাত্র রইল তার দাদা। দাদাও রেণুর সাত বছর বয়সে মারা যান। তারপর, সে আমার মার কাছে চলে আসে। আমার ভাইবোনদের সাথেই রেণু বড় হয়। রেণুর বড়বোনেরও আমার আরেক চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিবাহ হয়। এরা আমার শ্বশুর বাড়িতে থাকল, কারণ আমার ও রেণুর বাড়ির দরকার নাই। রেণুদের ঘর আমাদের ঘর পাশাপাশি ছিল, মধ্যে মাত্র দুই হাতের ব্যবধান (অসমাপ্ত আত্মজীবনী। পৃষ্ঠা ৭-৮, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা ২০১২)। শেখ মুজিব তার বিয়ের যে বর্ণনা দিয়েছেন সেটা ছিল তার সময়ের মুসলমান সমাজের প্রায় সাধারণ ধারা। নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হতো। কেননা, তাতে বাড়ত পারিবারিক বন্ধন। হিন্দু সমাজ ও মুসলমান সমাজে বাল্য-বিবাহ থাকলেও দু’টি সমাজের পরিবার প্রথা ঠিক এক ছিল না। যেমন হিন্দু সমাজে বিধবার বিয়ে ছিল অসিদ্ধ। কিন্তু মুসলমান সমাজে তা ছিল না। মুসলমানদের সমাজে বিধবা নারীরা ইচ্ছা করলেই আবার বিয়ে করতে পারতেন।

এ ছাড়া মুসলিম নারীরা পেতে পারতেন তাদের মাতা-পিতার সম্পত্তির অংশ। পেতে পারতেন মৃত স্বামীর সম্পত্তির ভাগও। তাই স্বামীর মৃত্যু হলেই তাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হতো না। এখনো তারা শরিয়তের বিধান অনুসারে পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পত্তির অংশ পাওয়ার অধিকারী। এ ছাড়া তখনো পেতেন এবং এখনো পাচ্ছেন বিয়েতে মোহরানা। হিন্দু সমাজে যেহেতু বিধবা বিয়ে ছিল না, তাই বাল্য-বিধবাদের সমস্যা হয়ে উঠেছিল খুবই প্রবল।

অনেক হিন্দু বিধবা ব্রিটিশ শাসনামলে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং মুসলিম পাত্রকে বিয়ে করেছেন। বাংলায় আদমশুমারি আরম্ভ হয় ১৮৭১ সাল থেকে। ওই সময় বাংলায় হিন্দুর সংখ্যা মুসলমানের চেয়ে বেশি ছিল। এর পর ১৮৮১ সালে যে আদমশুমারি হয় তাতে দেখা যায়, হিন্দুর সংখ্যা কমতে ও মুসলিম সংখ্যা বাড়তে। এর পর থেকে মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। অনেকে বলেন, এর একটা কারণ হলো- হিন্দু বিধবাদের মুসলমান স্বামী গ্রহণ। তবে এটাই যে প্রধান কারণ, তা বোধহয়, বলা চলে না। কেননা সে সময় দেখা যায়, হিন্দু মায়েদের সন্তান কম হতে আর মুসলমান মায়েদের সন্তান বেশি হতে। অপরদিকে, যেসব হিন্দু মহিলা মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করতেন, তাদেরও সন্তান হতো বেশি। কেন এরকম ঘটেছে, তার ব্যাখ্যা এখনো কেউ দিতে পারেননি। প্রচার করা হয়, বাংলাদেশে ইসলাম জোর করে প্রচার করা হয়েছিল।

কিন্তু ইতিহাস বলে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আর এ সময় গায়ের জোরে ইসলাম প্রচারের কোনো প্রশ্নই ছিল না। অনেক মিথ্যা কথা এখন প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে গায়ের জোরে ইসলাম প্রচারও হলো অন্যতম। একসময় হিন্দু সমাজে অনেক ভয়ঙ্কর প্রথা প্রচলিত ছিল। যেমন স্বামীর চিতায় তার বিধবা স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা। লর্ড বেন্টিঙ্ক এই ‘সতীদাহ’ প্রথাকে রদ করেন ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে।

বাংলায় ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সতীদাহ হতো অনেক বেশি। মুসলমান সমাজে এরকম কোনো প্রথা ছিল অকল্পনীয়। কেননা, মুসলাম নারী-পুরুষকে মৃত্যুর পর কবর দেয় হতো, পোড়ানো হতো না। কিন্তু এখন প্রমাণ করার চেষ্টা হয় যে, মুসলমান নারীরা ছিলেন হিন্দু নারীর তুলনায় অনেক বেশি নির্যাতিতা। যেটাও ইতিহাসের নিরিখে সত্য নয়। বাইবেলে বলা হয়েছে ডাইনি মেয়েকে পুড়িয়ে মারার কথা। ইংল্যান্ডে একসময় অনেকে মেয়েকে ‘ডাইনি’ বলে কথিত বিচার করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ইংল্যান্ডে ডাইনি বলে কোনো মেয়েকে পুড়িয়ে মারার আইন উঠিয়ে দেয়া হয় ১৯৩৬ সালে।

কিন্তু আল কুরআনে মেয়েরা কখনো ডাইনি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি বলা হয়নি, হজরত আদম বেহেশত থেকে দুনিয়াতে পতিত হয়েছিলেন হাওয়া বিবির ‘গম খাবার উপদেশ’ শুনে। ইসলামে নারীকে ‘পাপের উৎস’ বলে বর্ণনা করা হয়নি। যেমন করা হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মে। আল কুরআনে বলা হয়েছে, মেয়েদের সম্মানসহকারে বিয়ে করতে হবে এবং পালন করতে হবে সংসার-ধর্ম (সূরা, ৪:১৯)। সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত হাদিস হলো, আল্লাহ সবচেয়ে খুশি হন ক্রীতদাসকে মুক্তি দিলে।

আর সবচেয়ে বেশি দুঃখ পান স্ত্রীকে তালাক দিলে যদিও সেই তালাক হয় আইনসম্মত। তবে ইসলামে বলা হয়নি মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স সম্পর্কে। রজঃবতী নারীকেই ধরে নেয়া হয়েছে বিয়ের উপযুক্ত হিসেবে। ছেলেদের বেলায়ও কোনো ন্যূনতম বয়সের কথা বলা হয়নি। ছেলেদের বিয়ের উপযুক্ত ধরা হয়েছে তাদের দেহে বীর্য উৎপাদন শুরু হলেই। অর্থাৎ ইসলামি মতে, নর-নারীর বিয়ে হতে পারে তারা সাবালক প্রজনন শক্তিসম্পন্ন হলেই।

আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে ছেলেদের বিয়ের বয়স করা হয়েছে ২১ বছর আর মেয়েদের ১৮ বছর। কিন্তু ভারতের একটি হাইকোর্ট ২০১২ সালে রায় দিয়েছে, মুসলমান মেয়েরা ১৫ বছর বয়সেই বিবাহযোগ্যা বলে বিবেচিত হতে পারবে। পত্রিকার খবর (প্রথম আলো, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬) পড়ে জানলাম, নিউ ইয়র্ক শহরে হিউম্যান রাইটস নামক সংগঠন পথসভা করে দাবি করেছে, বাংলাদেশে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেয়া চলবে না। কিন্তু খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সব অঙ্গরাজ্যে বিয়ের ন্যূনতম বয়সের আইন এক নয়।

যেমন নিউহ্যাম্পশায়ারে ১৩ বছরের মেয়ে ও ১৪ বছরের ছেলের মধ্যে বিয়ে হতে পারে, যদি মাতা পিতার অনুমোদন থাকে। এর চেয়েও কম বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ে হতে পারে যদি আদালত অনুমতি দেন। কোনো কম বয়সী মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, তবে সে ক্ষেত্রে আদালত তার বয়স বিবেচনা না করেও তাকে বিয়ের অনুমতি দিতে পারেন। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে মেয়েদের বয়স ১৬ হলে, মাতা-পিতার অনুমতিতে সে বিয়ে করতে পারে। ১৮ বছর বয়স হলে সে বিয়ে করতে পারে মাতা-পিতার অনুমোদন ছাড়াই। আদালত বিশেষ বিবেচনায় যেকোনো বয়সের মেয়েকেই বিয়ের অনুমতি দিতে পারে।

আসলে টেক্সাসে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বলে কিছু বেঁধে দেয়া হয়নি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকারবাদীরা প্রতিবাদ তুলছেন বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে। সব মুসলমান দেশের বিয়ের বয়স এক নয়। মালয়েশিয়াতে শরিয়াহ আদালত অনুমতি দিলেই যেকোনো বয়সের মুসলমান মেয়েরই বিয়ে হতে পারে। আমাদের দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী বিশেষভাবেই হয়ে উঠেছেন ‘ভারতপন্থী’। তারা সবকিছুতেই চাচ্ছেন ভারতকে অনুকরণ করতে। কিন্তু ভারতেও এখন দাবি উঠছে ১৮ বছরের পরিবর্তে মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার।

মেয়েদের জীবন আর ছেলেদের জীবন এক নয়। মেয়েদের জীবনে বার্ধক্য আসে অনেক তাড়াতাড়ি। তারা হারায় তাদের প্রজনন ক্ষমতা। বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশসমূহে। মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণের সময় তাদের যৌবনের ওপর জলবায়ুর প্রভাবকেও বিবেচনায় নেয়া উচিত। এটা আমরা নিতে চাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না। আমরা বলছি কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। কিন্তু এটা কতদূর সত্য, তা বলা যায় না।

কেননা, নয় দশ বছরের মেয়েরা রজঃমতী হলেও অধিকাংশের ক্ষেত্রেই তারা হয় না প্রজনন-শক্তিসম্পন্না। একে বলা হয় বয়োসন্ধির অনুর্বরতা (Adolescent sterility)। অন্য দিকে, বেশি বয়সের মেয়েরা বিয়ে করলে তাদের সন্তান হাবাগোবা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, বেশি বয়সের মায়েদের জরায়ুর আয়তন যথাযথভাবে বৃদ্ধি পেতে চায় না। ফলে ভ্রুণের মাথার ওপর পড়ে চাপ। এতে মাথার আয়তন হতে চায় ছোট। তাতে মগজের পরিমাণ হয় কম। এসব ছেলে হয় হাবাগোবা। যাকে ইংরেজিতে বলে Mongoloid Imbecility। এ ছাড়া বেশি বয়সের মায়েদের সন্তান প্রতিপালনের কাজে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। তারা সুষ্ঠুভাবে সন্তান প্রতিপালন করতে পারেন না, অল্পতেই হয়ে যান বিরক্ত। মানুষ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানব শিশু সাধারণভাবে বাঁচে মাতৃস্তন্য পান করে। কিন্তু বেশি বয়সের মেয়েদের দুগ্ধ-ক্ষরণ হতে দেখা যায় কম। এটাও হয়ে ওঠে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যারই কারণ। প্রচার করা হচ্ছে, পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা হয় গৃহবন্দী।

কিন্তু বাস্তবে নারীরা গৃহবন্দী হন সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে; পুরুষ শাসনের ফলে নয়। গড়পড়তা মেয়েদের পুরুষের চেয়ে কায়িক শক্তি কম। কায়িক শক্তি কম বলে তারা গৃহকর্মে যতটা পারদর্শী, গৃহের বাইরে যেসব কাজে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, সেটা তারা করতে পারেন না। এর জন্য নারী-পুরুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে শ্রম বিভাজন। এটাকে কোনো মতেই ‘পুরুষ শাসনের ফল’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না।

তবুও এ দেশের বাম চিন্তকেরা সেটাই করতে চাচ্ছেন। তাদের এই চিন্তা আমাদের পরিবার ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, মানবশিশু জন্মায় খুবই অসহায়ভাবে। তার হাঁটতে শিখতেই লেগে যায় এক বছরের বেশি সময়। এ কারণে মানবশিশু প্রতিপালনে প্রয়োজন হয় অধিক যত্নের। পরিবার প্রথা গড়ে ওঠার এটাই হলো প্রধান কারণ। রিরংসা জৈবিক, কিন্তু পরিবার প্রথা হলো সাংস্কৃতিক। মানুষ যৌন প্রবৃত্তি জন্মগতভাবেই পায়। কিন্তু পরিবার প্রথা সে লাভ করে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সূত্রে।

লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *