ঢাকা:যে আশা নিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিলো বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট তা পূরণ না হলেও এখনো সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান।
একইসঙ্গে ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ভোট দিতে পারলে ধানের শীষ জয়ী হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ নির্বাচনের তফসিল পুরোপুরি অসমতল। তারপরও এ অসমতল মাঠে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আশা ছিলো নির্বাচনের আগে ইসি ভোট সুষ্ঠু করতে পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এমনকি ভোটে অংশ নেয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমরা সংলাপ করেছিলাম। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ভোটের সময় সবার সমান সুযোগ তৈরি করবেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন না, সুষ্ঠু ভোট হবে৷ কিন্তু তিনি যা বলেছিলেন সেগুলোর কোনোটাই তিনি রাখেননি৷
বিএনপির এ নেতা বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পরই আমাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন করছে৷ এমনকি আমাদের প্রার্থীদেরও গ্রেপ্তার করছে। আবার আদালতকে ব্যবহার করে প্রার্থী দেয়াতে বাধা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ১৬টি আসনে আমাদের প্রার্থীদের বাতিল করে এগুলো সরকারকে উপহার দিয়েছে।
‘সারা দেশে নেতাকর্মী দের এখনো গ্রেপ্তার করছে, হামলা করছে৷ এজেন্টদের ও তালিকা ধরে ধরে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও আশা করেছিলাম সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর হামলা, আক্রমণ, গ্রেপ্তার বন্ধ হবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো আমাদের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের উপর হামলা-নির্যাতন বেড়ে গেছে৷ আমরা ভোটারদের নিরাপত্তা ও নিবাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের নিয়োগ করা হলেও তাদের যে দায়িত্ব দাবি জানিয়েছিলাম সেটি করেনি। যে কারণে সেনাবাহিনী তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমরা আবারও দাবি করছি সেনাবাহিনীকে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জণগণের জান মালের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হোক। যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারে। জনগণ ভোট দিতে পারলে বিএনপি, ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের বিজয় হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখনো সরকারি দল পুলিশের পাহারায় প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এমনকি শোনা যাচ্ছে আজ বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সরকার প্রধানের একটি অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার করা হবে৷ এছাড়া একটি টিভি চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের একটা বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার করবে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। আর বিএনপি ঝামেলা করলে তাদের ধরে প্রশাসনের হাতে দিতে হবে। কাউকে প্রশাসনের কাছে তুলে দেয়ার দায়িত্ব তো কোনো নেতাকর্মীর না। এটার জন্য সরকারের বাহিনী আছে। তিনি এভাবে বলতে পারেন না৷ তার এই বক্তব্য যথাযথ নয় বলে মনে করছি।
এসময় তিনি প্রার্থী, নেতাকর্মী এবং ভোটারদের লক্ষ্য করে বলেন, প্রার্থীদের বলবো, যতো কঠিন অবস্থাই হোক আপনারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। নেতাকর্মীদের বলতে চাই, ভোটারেরা যেন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করবেন, কেন্দ্র পাহারা দেবেন। ভোটারেরা ভোট দিয়ে অপেক্ষা করবেন।
তিনি বলেন, জনগণ সজাগ দৃষ্টি রাখবে যাতে কেউ ভোটের আগে ভোট দিতে না পারে, জাল ভোট দিতে না পারে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ভোট গ্রহণ বিলম্বিত করতে না পারে। জনগণ সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
এজেন্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ভোট গ্রহণের আগে দেখে নিবেন ভোটের বাক্স খালি আছে কিনা। আর ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা করে কে কত ভোট পেলো সেটি নিশ্চিত না হয়ে কোনো খোলা কাগজে সই করবেন না।
নজরুল ইসলাম আরো বলেন, অনেক চেষ্টা করা হবে আমাদের পরাজিত করতে। কিন্তু নেতাকর্মী ও জনগণ তৎপর থাকলে সেটা সফল হবে না। আমরা আশা করবো সবাই সাহস করে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, নিজের ভোট নিজে দিবেন।