লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে নিউ ইয়র্কে ফিরে এসেছেন ঢাকার সাবেক মেয়র এবং বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। সুস্থ হলেই দেশে ফিরবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,মামলা আর গ্রেফতারে তাঁর কোন ভয় নেই। ছোটবেলা থেকেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এখন কিসের ভয়। বাকি জীবন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেই কাটিয়ে দেবেন। গত বুধবার নিউইয়র্কে ফিরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মানুষ দিন যাপন করছে তারেক রহমান তা লন্ডনে বসেই অনুধাবন করছেন। রাজনৈতিক মোকাবেলা করেই দেশের গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন তারেক রহমান।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন তার বিরুদ্ধে সরকারের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারপরও চিকিৎসার অগ্রগতি হলেই তিনি হলেই দেশে ফিরে যেতে চান। গত বুধবার নতুন করে আবারও তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নতুন করে চিকিৎসা চলবে আরো কিছুদিন।
লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে কি কথা হয়েছে এ প্রসঙ্গে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, তারেক রহমান আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আর আমিও দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে আমি দেখা করতেই পারি। তার সাথে পার্টির ও দেশের বিরাজিত অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। তার শারিরীক অবস্থারও খোঁজ-খবর নিয়েছি। তার শরীর এখন ভালোর দিকে, তবে নিয়মিত ফিজিক্যাল থেরাপি নিতে হচ্ছে তাঁকে।
তারেক রহমান দেশে আন্দোলনের কোনো নতুন কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেছেন কিনা, এ প্রশ্নে খোকা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই তিনি দলের নিয়ম মেনে দলের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছেন। গ্লোবাল ভিলেজের যুগে দূরত্ব এখন কোনো ব্যাপারই নয়। আমাদের পার্টি এক ব্যাক্তি নির্ভর পার্টি না। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। দলের মহাসচিবও সক্রিয় রয়েছেন।
খোকা বলেন, দেশ স্বাধীনতার পর এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে আমাদেরকেও একটা নির্বাচন করতে হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগ, জাপা ও জামায়াত নির্বাচন বর্জন করায় আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে পাশ করাতে বাধ্য হই। মাত্র এক মাসের মধ্যে সেই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেয়া হয়। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু এখন যে নির্বাচন হলো এটি খুবই খারাপ নির্বাচন। সবাই আশা করছে বর্তমান সরকার একটা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু করবে।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার অনুপ্রেরণাই তিনি দলের সকল নেতা-কর্মীদের মধ্যে যুগিয়ে যাচ্ছেন। তারেকের মতে, দেশ এক জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আগেও এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এরশাদকে ক্ষমতাচ্যূত করে গণতন্ত্র উদ্ধার করেছি। সেই চেতনায় এবারও আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবো।
খোকা নিজেও মনে করেন, ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় নাই, এবারও হবে না, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে সরকার সম্প্রতি যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করেছে সে প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার নিজেই একটা প্যানিক অবস্থায় আছো আমাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। সবার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ঠিক ডিটেইলস জানিনা।
খোকা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। বিজয়ের মাসে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরই অপমান করা হলো। সরকার হুশ-জ্ঞান হারিয়ে এসব করছে। আমি অসুস্থ মানুষ, চিকিৎসার জন্য ছয় মাস ধরে বিদেশে পড়ে আছি। সরকারের মধ্যে কোনো মানবিক বিবেচনাও কাজ করে না। তিনি বলেন, এইসব করে কাউকে দাবিয়ে রাখা যায় না। সরকার নিজেরাই তাদের পতন ডেকে আনছে। চিকিৎসা শেষে দেশে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই দেশে যাবো। ছোটবেলা থেকেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এখন কিসের ভয়। বাকি জীবন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেই কাটিয়ে দেবো।