জর্জ বুশ সিনিয়র আর নেই

Slider সারাবিশ্ব

ঢাকা:মার্কিন সিনেটরের সন্তান। বলা যায়, সোনার চামচ মুখে নিয়েই তাঁর জন্ম। কাটিয়েছেনও রাজার মতো জীবন। ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর বাইরে ৯৪ বছরের জীবনে অনেক দায়িত্বই পালন করেছেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন বিমানবাহিনীর সেনা ছিলেন। ছিলেন ভালো অ্যাথলেট। হয়েছেন টেক্সাসের ধনাঢ্য তেল ব্যবসায়ী, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য, ন্যাশনাল পার্টির চেয়ারম্যান, ক্ষুরধার কূটনীতিক—এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানও ছিলেন। হিউস্টনে এই জর্জ বুশের জীবনাবসানের খবর দেন তাঁর ব্যক্তিগত মুখপাত্র জিম ম্যাকগ্রা।

জর্জ বুশ সিনিয়র নামেই পরিচিত ছিলেন। গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান।

দুই দফা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১তম প্রেসিডেন্ট হন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। একবারই এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯২ সালে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার পরও মার্কিন রাজনীতিতে অত্যন্ত সম্মানিত রাজনৈতিক চরিত্র ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরেছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বিল ক্লিনটনের কাছে। তবে নির্বাচনের পর বৈরিতা নয়, বন্ধু হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন বিলকে। পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত হয়ে জনসমক্ষে তাঁর দেখা মিলত কম। অবশ্য মাঝেমধ্যেই তাঁর হাস্যোজ্জ্বল ছবি পাওয়া যেত।

এ বছরের ১৭ এপ্রিল জীবনসঙ্গিনী বারবারা বুশকে হারিয়েছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বারবারার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আগে ফুলে শোভিত তাঁর কফিনের পাশে হুইলচেয়ারে বসা বুশের ছবিতে প্রিয় জীবনসঙ্গিনী হারানোর মর্মবেদনা ফুটে ওঠে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনার জন্ম দেন বুশ। আবার তিনিই মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি নিজের সন্তানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখে যেতে পেরেছেন। তাঁর ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্টের বাইরে বুশের আরেক ছেলে জেব বুশ ছিলেন ফ্লোরিডার গভর্নর। এ ছাড়া আর দুই ছেলে নিল ও মারভিন এবং মেয়ে ডরোথিকে রেখে গেছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুশের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল ১৯৯০ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ। তাঁর পররাষ্ট্রনীতির চরম এক পরীক্ষা ছিল ওই যুদ্ধ। কুয়েত থেকে ইরাকি বাহিনীকে হটাতে আন্তর্জাতিক জোট গঠন করেন তিনি। সেখানে চার লাখের বেশি মার্কিন সেনাসদস্য ছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর যুক্তরাষ্ট্রের রণ সক্ষমতার একটি চিত্র দেখল বিশ্ব। ইরাকি বাহিনীকে হটানোর পরও বুশ কিন্তু সাদ্দাম সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করেননি।

পানামার স্বৈরশাসক জেনারেল নরিয়েগাকে উৎখাত এবং তাঁর বিচার প্রেসিডেন্ট বুশের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ছাত্রদের ওপর চরম নিগ্রহের পর চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বুশ সরকার।

পররাষ্ট্রনীতিতে সাফল্য থাকলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সফল হতে পারেননি বুশ। তাঁর এই ব্যর্থতার ফলেই দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *