কালীগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধার জমি ভাড়া নিয়ে দখল!

Slider রংপুর

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট : নিজের জমি ভাড়া নিয়ে দখল করে রেখেছে ভাড়াটিয়া দোকান মালিক।

এ পরে জমির ভুয়া কাগজ পত্র করে মামলার হয়রানি করে আসছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে।

বেশ কয়কবার গ্রাম্য সলিশসহ বিভিন্ন বৈঠক করেও ব্যার্থ হয়েছেন ওই এলাকার চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যরা।

নিজের জমি উদ্ধার করতে উপজেলা পুলিশ প্রসাশনের দারে দারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন ।

এমন কি জমি কাগজপত্র নিয়ে জমি উদ্ধার করতে গেলে উল্টো মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের নামে মামলা দিয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসি জানায়, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি জেলা আদালতে জমি উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য আবেদন করলে তা আমলে নেন জেলা জজ।

জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-এর নির্দেশক্রমে সহকারী কমিশনার(ভূমি) সরেজমিন তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন আদালতে আশ্রয় নিয়েও হচ্ছেনা সুরাহা।

জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-এর নির্দেশক্রমে সহকারী কমিশনার(ভূমি) সরেজমিন তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে ।

ওই প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ‘প্রতিপক্ষ ব্যবসা করার নিমিত্তে তর্কিত সম্পত্তি ভাড়া হিসাবে নিয়ে সেখানে দোকান ঘর নির্মাণ করে।

পরে একটি ভিত্তিহীন দলীল তৈরি করে চক্রটি নিজেরাই মালিকানা দাবী করে প্রকৃত মালিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটিকে বেদখল দিয়েছে।’ এর পরও অবৈধ দখলদাররা একের পর এক কোটকৌশলের পথ অবলম্বন করে চলেছে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কাজীরহাট বানীনগর মৌজার মৃত আব্দুল শেখ তার নিজ নামীয় ৪৬ শতক জমি তার ৪ ছেলে মৃত মোহাম্মদ আলীকে ১০শতক, মৃত হাবিবুর রহমানকে ১২ শতক, মোঃ ফজর আলীকে ১০ শতক এবং মোঃ জহির উদ্দিন(মুক্তিযোদ্ধা)কে ১৪ শতক জমি দলীলমূলে দান পত্র করেন।

এ অবস্থায় ভাই জহির উদ্দিন অপর ভাই ফজর আলীর অংশ ১০ শতক জমি দলীলমূলে ক্রয় করেন। যা’ পরবর্তীতে ’৯০ সালে পৈত্রিক দানসুত্রে পাওয়া ১৪ শতক ও ভাইয়ের কাছ থেকে কেনা ১০ শতকসহ এস.এ রেকর্ডে ২৩ শতাংশ রেকর্ডভুক্ত হয়।

এ অবস্থায় একই এলাকার মৃত সহির উদ্দিনের পুত্র চানমিয়া ও মোসলেম উদ্দিনের পুত্র ইমান আলী কাজীরহাটে পাকা রাস্তার মোড়ে নতুন বাজার গড়ে উঠায় ‘তর্কিত’ জমি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে চায়ের দোকান করার জন্য মৌখিক ভাড়া হিসাবে নিয়ে সেখানে দু’জনেই চায়ের দোকান দেয়। কয়েক বছর ভাড়া দেয়।

এরই মধ্যে গোপনে নিঃস্বত্ববান ভাই ফজর আলীর কাছ থেকে কথিত চানমিয়া ও ইমান আলী ৪ শতাংশ করে দু’জনে ৮ শতাংশ জমি পৃথক দুটি দলীল তৈরি করে উল্লেখিত জমির মালীকানা দাবী করে বসেন এবং ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেন।

মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন তার জমি উদ্ধারের জন্য এলাকাবাসি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ,চেয়ারম্যানের কাছে বিচার প্রার্থী হন।

ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় এলাকাবাসিকে নিয়ে গত ১০-০৬-২০১০ তারিখে একটি সালিশের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে, উল্লেখিত জমির প্রকৃত মালিক জহির উদ্দিন।

ভুয়া দলীলের মাধ্যমে দাবীকৃত জমি থেকে চানমিয়া ও ইমান আলীকে তাদের দোকান ঘর সড়ায়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। উহাতে তারা রাজি হয়ে লিখিত অঙ্গিকার করেন ।

পরবর্তীতে সেই অঙ্গিকার মতে জমির দখল যখন দীর্ঘদিনেও ছাড়েনি,তখন জহির উদ্দিন বাধ্য হয়ে গত ২৬-০৯-২০১৩ তারিখে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাটে জমি উদ্ধারের জন্য একটি ‘অন্য-৯২/১৩’ মামলা রুজু করেন।

বিজ্ঞ আদালত নির্বাহী ম্যাজিস্টেট, লালমনিরহাটের মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের জন্য দিলে গত ২৭-০৭-২০১৪ তারিখে সহকারী কমিশনার(ভূমি) কামাল মোহাম্মদ রাশেদ সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘নালিশী কাজীরহাট বানীনগর মৌজার এস.এ খতিয়ান ১৩৮ ভূক্ত ৯৯৪ দাগের রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল শেখ কবলা দলীল নং ৭৪৬৪,তারিখ ৩০-০৬-১৯৮০ মূলে ২০শতাংশ জমি তার ছেলে মোহাম্মদ আলী ও ফজর আলীর নামে দানপত্র করেন।

উক্ত দানসুত্রে পাওয়া ২০ শতাংশ জমি গত ২৬-০৯-১৯৮৭ তারিখে ৭৮৭৯ নং দলীলমুলে বাদী জহির উদ্দিনের কাছে বিক্রয় করে নিঃস্বত্ববান হন।

উক্ত জমিতে বাদীর পিতা-মাতার কবরস্থান রয়েছে। পাশেই কাজীরহাট বাজার গড়ে উঠায় কথিত ইমান আলী ও চাঁনমিয়া ভাড়ার শর্তে ২০০৭ সালে উক্ত জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করেন। যথারীতি ২০১১ সাল পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে আসে। এরই মধ্যে নিঃস্বত্ববান ফজর আলীর কাছ থেকে কথিত চাঁনমিয়া গত ০৩-০২-২০১১ তারিখে ৬৪৩ নং দলীলমূলে ও কথিত ইমান আলী গত ০৯-০২-২০১১ তারিখে ৭৩৮ নং দলীলমূলে ০৪শতাংশ করে ০৮ শতাংশ জমির দুটি দলীল সম্পাদন করেন।

যে কারণে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেন। এর পর স্থানীয় ভাবে বিচার সালিশে তারা জমির দখল ছেড়ে দিতে সম্মত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও দখল ছেড়ে না দেয়ায় মামলার উৎপত্তি হয়।

ফজর আলী যেহেতু পূর্বেই তার জমি বিক্রয় করে নিঃস্বত্ববান হয়েছে। সেহেতু দ্বিতীয়বার করা দলীল দ্বারা মালিকানাস্বত্ব দাবী করতে পারেনা।’

এতকিছু প্রমাণাদি থাকা সত্বেও কথিত চাঁনমিয়া ও ইমান আলী আদালতের বিচারকার্য বিলম্বিত করার জন্য গত ১১-১০-২০১৮ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন(গং)দের নামে একই আদালতে পাল্টা ‘অন্য-১৪২/১৮’ মামলা করেছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থল কাজীরহাট বানীনগর গেলে স্থানীয় এলাকাবাসি জানান ‘জহির উদ্দিনের ৮ শতাংশ জমি চাঁনমিয়া ও ইমান আলী(গং)রা অবৈধ ভাবে দখলের মাধ্যমে ভোগ করে আসছে।

সরেজমিন গিয়ে চাঁন মিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এ জমি আমরা সবাই কিনেছি। কোন মুক্তিযোদ্ধার জমি নয়!

এ ব্যাপারে কাকিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্থানীয় এলাকাবাসি সহ পার্শ্ববর্তী তুষভান্ডার ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আবু তালেব আলবানী, কাকিনা ইউঃ সাবেক চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান হেলালসহ সালিশে কথিত চানমিয়া ও ইমান আলী জমির অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেও দখল ছাড়েনি। আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা ছাড়া বিকল্প কোন পন্থা নেই বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *