গাজীপুরে দলীয় প্রতিদ্বন্ধীতার মুখোমুখি ফজলুল হক মিলন!

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


গাজীপুর: গাজীপুর-৫(কালিগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ এ কে এম ফজলুল হক মিলন। অতীতে অনেক সময়ই তিনি বিএনপি ও জোটের একক প্রার্থীই ছিলেন। এবারই প্রথম তিনি স্বদলীয় প্রার্থীর মুখোমুখি। এই আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের সহসভাপতি শেখ আহমেদ সাইমুম। ফলে প্রথমবারের মত মিলনের মুখোমুখি হচ্ছেন একই দলের আরেকজন প্রার্থী। এর আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি কালিগঞ্জের মনির হোসেন মিলনের প্রতিদ্বন্ধী হতে গিয়ে দল থেকেই ছিটকে পড়েন।

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে,ফজলুল হক মিলন গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে একই সাথে কালিগঞ্জ উপজেলা ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, এবং কেন্দ্রিয় কমিটির (ঢাকা বিভাগীয়) সাংগঠনিক সম্পাদকও বটে। ফলে কেন্দ্রের প্রভাবে তিনি গাজীপুর জেলা,মহানগর ও উপজেলা নিয়ন্ত্রন করেন শক্ত হাতে। যে কারণে দলের যোগ্য, পরীক্ষিত ও নির্যাতিত কর্মীরাও গাজীপুরে বিএনপির রাজনীতির ক্ষেত্রে দলীয় কিংবা যে কোন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পায়না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৫(কালিগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ফজলুল হক মিলন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের কেন্দ্রিয় কিমিটর সহ-সভাপতি শেখ আহমেদ সাইমুম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র নেন। জমা দেয়ার সময় তিনি এই দুটি আসনের টাকাও জমা দেন। একই আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এলবার্ট পি কষ্টা। স্থানীয় রাজনীতিতে ফজলুল হক মিলনের প্রভাবে তিনি সামনে আসতে পারেন না।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতির দায়িত্বে থাকা কারানির্যাতিত ছাত্রনেতা আহমেদ সাইমুম দলীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি রিসার্স ফেলো হিসেবেও কাজ করছেন। আইন বিষয়েও উচ্চতর ফিগ্রীধারী সাইমুম রাজনীনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সামাজ বিনির্মাণের কাজেও সমান তৎপর। হালিমা আফছার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান হিসেবে সুশিক্ষা সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়ন এবং কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের কল্যাণে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সার্বিক জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস চিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশী জাতীতাবাদ,রাজনীতি,সমাজনীতি,শিক্ষা সংস্কৃতি,ভাষা ও সাহিত্যের নির্মোহ বিশ্লেষণ নিয়ে তার লেখা গবেষণামূলক প্রবন্ধ গ্রন্থ ও প্রায় সতেরটির অধিক কাব্যগ্রন্থ আছে। শহীদ জিয়ার সততার রাজনীতিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বোতভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯ দফার আলোকে সমৃদ্ধ গাজীপুর গড়ায় সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন আহমেদ সাইমুম।

এদিকে গাজীপুর বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দল সহ বিএনপি, অংগ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে ফজলুল হক মিলন নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়ায় প্রতিটি কমিটি ঘোষনার পর কম-বেশী বিক্ষোভ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ফজলুল হক মিলন জেলার বাইরে থেকে লোক এনে মহানগর কমিটিতে পদ দিয়েছেন অনেককে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গাজীপুর জেলার সকল উপজেলাকে সমান প্রাধান্য না দিয়ে কালিগঞ্জকে তিনি বেশী প্রধান্য দিয়েছেন। ফলে গাজীপুর বিএনপির সকল নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কম-বেশী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিদ্যমান। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংগঠনের ভেতরকার চাপা ক্ষোভ মাঠ পর্যায়ে কি পরিমান প্রভাব ফেলবে তা সময় বলে দিবে।

বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বলছেন, বেগম জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় সাইমুম ঢাকার চানখারপুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তাকে গুম করার চেষ্টা করে পুলিশ ব্যর্থ হয়। অতঃপর রিমান্ডে নিয়ে সাইমুমকে অমানুষিক নির্যাতন করে পুলিশ। প্রায় তিন মাস কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর আগেও তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে কারানির্যাতিত তরুন এই নেতাকে গাজীপুর-২ বা গাজীপুর-৫ এর মধ্যে যে কোন একটি থেকে দলীয় মনোনয়ন দিলে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ সহ দলীয় নেতা-কর্মীরাও ভোটের মাঠে সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন। এতে ভবিষৎতে দেশ গড়ার রাজনীতিতে শিক্ষিত মেধাবী ও ত্যাগী রাজনৈতিক কর্মীরাও উৎসাহিত হবে বলে মাঠ পর্য়ায়ের বিএনপি কর্মী-সমর্থকেরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *