এরশাদের অসুখ হলেও বিশ্বাস করতে কষ্ট জনগনের

Slider রাজনীতি


ঢাকা:মহাজোট থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে সময় নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ পর্যন্ত দলীয় আসন নিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেনি জাপা। দলটির নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করলেও এ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বশেষ গতকাল আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময়সূচি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে দলটির তরফে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আসন নিয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে এ চিঠি দেন। এরশাদের পক্ষে তার রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন কয়েক দিনের মধ্যেই মহাজোটের শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। জাপা সূত্র জানায়, আসন বণ্টন নিয়ে দেরি হওয়ায় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা অস্বস্তিতে রয়েছেন।
কোন কোন আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন পাচ্ছেন তা এখনো নিশ্চিত না হওয়ায় তারা এলাকায় যেতে পারছেন না। দলীয় মনোনয়ন ও জোটের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষি চলার মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থবোধ করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার মানবজমিনকে বলেন, স্যার অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। আসন বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করেই আসন চূড়ান্ত করা হবে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে এ আলোচনা হতে পারে। এদিকে গতকাল থেকে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বিষয়ক সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০শে নভেম্বর থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হওয়ায় সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় পেছানো হয়েছে। এছাড়া পার্টির চেয়ারম্যানের অসুস্থতার বিষয়টিও এর পেছনের কারণ বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। ২৯শে নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, ২০শে নভেম্বর সাক্ষাৎকার নেয়ার পর প্রার্থী ঘোষণা হতে হয়তো আরো কয়েক দিন লেগে যাবে। এরপর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলে তড়িঘড়ি করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। দলীয় মনোনয়ন পেতে দলটির ২৮৬৫ জন দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

কক্সবাজার-২ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ বলেন, মনোনয়ন সাক্ষাৎকার দিয়ে এলাকায় যেতে চাইলেও যেতে পারছি না। এলাকায় যেতে না পারায় যোগাযোগেও পিছিয়ে পড়ছি। মানিকগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এম হাবিব উল্লাহ বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে আশা করছি। এবার আশ্বাস পেয়েই মনোনয়নপত্র কিনেছি। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সময়ক্ষেপণ এবং পার্টি চেয়ারম্যানের অসুস্থতার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনাও রয়েছে। জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠরা বলছেন, রাজনৈতিক ময়দানে এখনো দলটি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে দলটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। যদিও দলের নেতারা বলছেন, মহাজোটে থেকেই তারা নির্বাচন করবেন। বিএনপি নির্বাচনে না এলে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা বলেছিলেন নেতারা।

দলটির সূত্র জানিয়েছে, জোট-মহাজোটের নতুন সমীকরণে এখন রাজনীতির মাঠে দ্রুত পট-পরিবর্তন হচ্ছে। দল এবং জোট পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় রাজনীতির মাঠে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার নীতি নিয়ে এগোচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বলছেন। এবার নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাবে। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়ে জাপা চেয়ারম্যান এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো অবস্থান জানাননি। গতকাল জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাপা মহাজোটে থেকেই নির্বাচন করবে। তবে মহাজোটের অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি কয়টি আসন পাচ্ছে বা পাবে তা নিয়ে দলটির নেতারা স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না।
এর আগে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তারা আসন নিয়ে আলোচনা করেন বলে দলীয় সূত্র দাবি করে।

ওই আলোচনার পর এরশাদ বলেছিলেন জাতীয় পার্টি মহাজোটের হয়ে একশ’ আসনে প্রার্থী দিতে চায়। অন্তত ৭০টি আসনে তাদের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। সর্বশেষ মহাজোটে যুক্তফ্রন্ট অংশ নেয়ার আলোচনা চলায় নতুন করে হিসাবনিকাশ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে জোটের শরিকদের জন্য আওয়ামী লীগ ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড়তে চায়। এক্ষেত্রে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর জন্য অন্তত ২০ থেকে ২৫টি আসন ছাড়তে হবে। যুক্তফ্রন্ট যুক্ত হলে তাদেরও চার থেকে পাঁচটি আসন দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ৩৫ থেকে ৪০টি আসন পেতে পারে। এছাড়া নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার আভাস থাকায় আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারে এমন প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দিতে চায়। ক্ষেত্রে জোটের অনেক প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টিও সামনে আসবে দরকষাকষির সময়।

এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। বিবিসির প্রশ্ন ছিল, আপনাদের দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কেন সামরিক হাসপাতালে?
জবাবে হাওলাদার বলেন, উনি রুটিন চেক-আপের জন্য হাসপাতালে গেছেন। উনি নিয়মিতই যান। হাসপাতাল থেকে উনি কালও চলে আসতে পারেন। দু’একদিন দেরিও হতে পারে। হাসপাতালের সব বড় কর্মকর্তারা সেখানে উনার দেখাশোনা করছেন। উনার কি কোনো বিশেষ শারীরিক অসুবিধা আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, স্বাভাবিক চেক-আপ। ব্লাড সুগার, হার্ট, প্রেসার এসব। রেগুলার চেক-আপই যদি হবে, উনাকে ভর্তি হতে হলো কেন? এমন প্রশ্নে হাওলাদার বলেন, না, উনি প্রায়শই এরকম গিয়ে এক-আধদিন থাকেন।

উনি তো সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ক্যান্টনমেন্ট তারও একটা আস্থার জায়গা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তো উনাকে এভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল? এ প্রশ্নে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, (হেসে) দিন তো একভাবে যায় না। সব সময় কি একই রকম যায়? সব সময় তো একই রকম যায় না। আপনি কি উনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন, দলের নেতারা কি উনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নিজে তো দুপুরে আসলাম। আবার একটু আগে কথা বলেছি। কোনো অসুবিধা নাই তো। যেটা আপনাদের ভাবনা, তা নয়। যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। বিভ্রান্তিকর। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা। উনি জাতীয় নেতা। দলের চেয়ারম্যান। সাবেক রাষ্ট্রপতি। সাবেক সেনাপ্রধান। এখন একটা নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। এখন এ ধরনের বক্তব্য আসাটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা নির্বাচনে আছি। এবং উনি গুলশান ও রংপুর থেকে নির্বাচন করবেন। আরো দুটি আসনেও কথা হচ্ছে।

জোটের আসন বণ্টনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনা খুব স্বাভাবিক এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে। চূডান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন। সেরকম কোনো প্রতিকূল অবস্থা নেই। আমরা শুরু করেছি। আমরা অনেক দূর এগিয়ে আছি। এটা স্পষ্ট হবে। দু’চারদিনের মধ্যে জানাতে পারবো।

উল্লেখ্য, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণার পর এক পর্যায়ে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। এক পর্যায়ে ‘অসুস্থ’ হয়ে তিনি সিএমএইচে চলে যান। মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে তার স্ত্রী রওশন এরশাদের। নির্বাচনের পর অবশ্য এরশাদ সবকিছু মেনে নেন অথবা মেনে নিতে হয়। জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। একই সঙ্গে দলটির নেতারা মন্ত্রিসভায়ও যোগ দেন। বিরল নজির গড়ে একইসঙ্গে সরকার এবং বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *