আটকে রেখে ধর্ষণ, চোখে মরিচের গুঁড়া!

Slider নারী ও শিশু


ঢাকা: ঢাকায় ২০ বছরের এক তরুণীকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত রোববার অভিযুক্ত তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে রামপুরা থানা-পুলিশ।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অনুমতি নিয়ে তিন তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাঁরা এখন রামপুরা থানা হেফাজতে আছেন। ওই তিন তরুণ হলেন অহিদুল ইসলাম শুভ (২১), মোসলেম (১৯) ও আবদুল্লাহ মাহিম (১৯)।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, মেয়েটির বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। প্রধান আসামি অহিদুলের বাড়িও সেখানে। অবিবাহিত অহিদুল গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় ভাড়া বাসায় তরুণীকে আনার পরপরই দুই দিন ধর্ষণ করেন। তিনি ও তাঁর দুই বন্ধু মেয়েটিকে আটকে রেখে দুই মাস নানা ভাবে নির্যাতন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তরুণীকে মারধর করার কথা স্বীকার করলেও অহিদুলের মা শিরিন আক্তার দাবি করেন, তাঁর ছেলে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেনি।

তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার প্রধান আসামি অহিদুলের ভাড়া বাসা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস মেয়েটির নানির বাড়ি লক্ষ্মীপুরের যে গ্রামে, সেখানেই প্রধান আসামি অহিদুলের বাড়ি। আগে থেকে অহিদুলের বাবা-মায়ের সঙ্গে মেয়েটির মায়ের পরিচয় ও ভালো সম্পর্ক ছিল। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত আগস্ট মাসে মেয়েটির মা আসামি অহিদুলের মাকে ফোন করেন। ঢাকায় নিয়ে মেয়েটিকে চাকরি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরে মেয়েটি ঢাকায় এসে অহিদুলদের বাসায় ওঠেন। এর কয়েক দিন পর রামপুরা এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরির ব্যবস্থা করেন অহিদুল।

রামপুরা থানার ওসি এনামুল হক বলেন, ঢাকার বাসায় আসার পরপরই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে অহিদুল। এরপরই দিনের পর দিন মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালায় সে।

ভুক্তভোগী ওই মেয়েটি মামলার এজাহারে বলেছেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে তাঁকে ধর্ষণ করে অহিদুল। বাধা দেওয়ায় শারীরিক নির্যাতন শুরু করে সে। সিরিঞ্জ দিয়ে তাঁর চোখের নিচ থেকে রক্ত বের করেছেন অহিদুল। কানের ভেতরে কাঠি ঢুকিয়ে কান নষ্ট করা হয়েছে। চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়েছেন।

মেয়েটির ওপর নির্যাতনের খবর জেনে অহিদুলের পরিচিতজনদের মধ্যে একজন টেলিফোন করে রামপুরা থানায় সব কিছু জানান। এই ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হানিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, খবর পাওয়ার পর পুলিশ মেয়েটিকে রামপুরার ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। গত রোববার তিন তরুণকে রিমান্ডে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধান আসামি অহিদুল মেয়েটিকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম বলেন, ওসিসিতে মেয়েটির চিকিৎসা চলছে।

অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ অহিদুলরা পূর্ব রামপুরার পাঁচ তলা বাসার নিচতলা ভাড়া নেন। বাড়িওয়ালার কাছে মেয়েটিকে নিজের বোন বলে পরিচয় দেন আসামি অহিদুল। বাড়িওয়ালা সাফায়াতুল আলম তপু প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটিকে রোববার তাঁদের বাসা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মেয়েটির চোখ, মুখ, ঠোঁটসহ সারা দেহে নির্যাতনের দাগ দেখেছেন।

বাড়িওয়ালা সাফায়াতের সামনে সোমবার দুপুরে প্রধান আসামি অহিদুলের মা শিরিন আক্তার দাবি করেন, মেয়েটিকে তিনিও নির্যাতন করেছেন। কারণ মেয়েটি তাঁদের বাসায় অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন। কী সেই অসৎ উদ্দেশ্য সে ব্যাপারে শিরিন বলেন, ছেলের এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব আছে। ক্ষতি করার জন্য মেয়েটিকে তারাই কৌশলে বাসায় পাঠিয়েছে। মেয়েটি মুঠোফোনে শত্রুদের নম্বর দেখেছেন। মেয়েটি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন। এ কথা জানার পর থেকে তিনি (শিরিন), তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর, ছেলে অহিদুল একাধিকবার নানাভাবে মারধর করেছেন।

অহিদুলের মা শিরিনের দাবি, মেয়েটি পাঁচ দিন গার্মেন্টসে চাকরি করার পর আর চাকরি করবেন না বলে তাঁদের জানান। গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর কথা বললেও তাতে রাজি হয়নি ওই মেয়ে। এর মধ্যে তাঁর (শিরিন) মা অসুস্থ হলে মেয়েটিকে রামপুরার বাসায় তালাবদ্ধ করে ছেলে অহিদুলকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, মেয়েটি পালিয়ে যেতে পারে সে জন্য সব সময় বাসা তালাবদ্ধ রাখতেন। মেয়েটি তাঁদের ক্ষতি করতে পারেন- এমন আশঙ্কায় তাঁদের আত্মীয়কে (আসামি মোসলেম ও আবদুল্লাহ মাহিমকে) বাসায় আসতে বলে তাঁর ছেলে অহিদ। এই দুজনও মেয়েটিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে।

বাড়িওয়ালা সাফায়াতুল জানান, মোসলেম ও আবদুল্লাহকে তিনি প্রায় অহিদুলদের বাসায় আসতে দেখেছেন।

মেয়েটির ভাই বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম কয়েক দিন তাঁর বোন যোগাযোগ করেন, কথাও বলেন। কিন্তু এরপর থেকে বোনের মোবাইল কেড়ে নেন আসামিরা। মেয়েটির ওপর চালানো ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে রোববার পুলিশ আদালতকে বলেছেন, মেয়েটির যৌনাঙ্গ মারাত্মক জখম হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হানিফ উদ্দিন বলেন, তিন মাস ধরে মেয়েটিকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা কল্পনাও করা যায় না।

রামপুরা থানার ওসি এনামুল হক বলেন, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করার পর তিনি তাঁর সঙ্গে (মেয়েটি) কথা বলেছেন। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *