গাজীপুর:গাজীপুর-ঢাকা রুটের তুরাগ ট্রেন বাতিল করায় চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ গাজীপুরের মানুষ। প্রতিদিন সকালে গাজীপুর থেকে এই ট্রেনে ঢাকায় গিয়ে বিকেলে ফিরত প্রায় দুই হাজারের বেশি যাত্রী। ট্রেন বাতিল না করাতে রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তাতেও কাজ হয়নি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে জনপ্রিয় এ ট্রেনটি বাতিলের প্রভাব আসন্ন ভোটে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় লোকজন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বল্প সময় ও কম খরচে ঢাকায় যাতায়াতের কথা চিন্তা করে রেলপথ বিভাগ তুরাগ ট্রেনটি চালু করে। চাকুরিজীবীসহ নানা পেশার মানুষ সকালে গাজীপুর থেকে ঢাকা গিয়ে সন্ধ্যার আগেই গাজীপুর ফিরে আসতে পারতেন। মাত্র ২০ টাকা ভাড়ায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটে গাজীপুর-টু-কমলাপুর যাতায়াত করতে পারার কারণে অল্প দিনেই এ রুটে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তুরাগ। কিন্তু টাঙ্গাইল কমিউটার চালুর কারণে হঠাৎ করেই গত বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয় রেলপথ বিভাগ। এতে যাত্রীদের সাথে চরম ক্ষুব্ধ গাজীপুরের সাধারণ মানুষও। ট্রেন বাতিলের খবর জানতে পেরে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল ঢাকায় গিয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তিনি গাজীপুরের মানুষের হতাশার কথা তুলে ধরে ট্রেনটি চালু রাখার অনুরোধ জানান। তারপরও ট্রেনটি বাতিল করে দেওয়া হয়।
নিয়মিত যাত্রী সরকারি চাকুজীবী আবদুল হাই জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ছেড়ে ট্রেনটি সকাল ৮.৫০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছতো। কোনো কারণে ১০-১৫ মিনিট লেট হলেও ঢাকায় গিয়ে অফিস করে আবার বিকেলে ফিরে আসতে পারতেন। যাত্রীদের ৯০ ভাগই ছিলেন চাকুরিজীবী ও শিক্ষার্থী। অধিকাংশ যাত্রী মাসিক টিকিট কেটে যাতায়াত করতেন। যানজটের কারণে সড়ক পথে ঢাকা যেতে যেখানে এখন ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে সেখানে মাত্র ২০ টাকা ভাড়ায় যাত্রীরা ঢাকায় যেতে পারতেন। সময়ও লাগতো অনেক কম। কিন্তু হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার ট্রেনটি বাতিল করে ‘টাঙ্গাইল কমিউটার’ নাম দিয়ে টাঙ্গাইল-ঢাকা রুটে চালু হয়। রেলপথ বিভাগের এ সিদ্ধান্তে আমরা গাজীপুরের মানুষ চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
গাজীপুর শহরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী বলেন, গাজীপুর একটি শিল্প নগরী। রাজধানীর কাছে হওয়ায় গাজীপুরে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বাস করে। এসব মানুষের অনেকে তুরাগ ট্রেনে যাতায়াত করতেন। নতুন সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়নি। টাঙ্গাইলের জন্য আলাদা ট্রেন চালু করে তুরাগ বহালের দাবি জানান তিনি। নচেৎ এর প্রভাব আগামী ভোটে পড়বে বলে শঙ্কা তার।
জয়দেবপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, শুধু জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ৭ শতাধিক যাত্রী যাতায়াত করতেন। এ ছাড়াও ধীরাশ্রম ও টঙ্গী থেকেও যাত্রীরা মিলিয়ে বহু যাত্রীর কাছে ট্রেনটি ছিল আকর্ষণীয়। ট্রেন বাতিল হওয়ায় তারা এসে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও হতাশার কথা ব্যক্ত করছেন। তবে সকাল ৬টায় টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতু স্টেশন থেকে ছেড়ে সাড়ে ৭টায় গাজীপুর পৌঁছাবে। তাই গাজীপুরের যাত্রীরাও এ ট্রেনে যেতে পারবে।