রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

Slider বাংলার মুখোমুখি রাজশাহী

রাজশাহী :রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ। কেবল ঢাকায় উদ্দেশে কিছু গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে । রাজশাহীতে ঢুকছে না কোনো সড়কপথের (রুট) গাড়ি। পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিনই রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের ১২ জেলার বাস যোগাযোগ বন্ধ ছিল। নাটোরে একজন বাসশ্রমিককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে—এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে অনুসন্ধানে এই ঘটনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রাত থেকে আবার বাস চালানোর ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিকেরা। সকাল থেকে আবার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বাস ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

সকালে রাজশাহী শিরোইল বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাস শ্রমিকেরা কেউ নেই। কাউন্টার ফাঁকা। সব সড়কপথের গাড়ি সারি করে রাখা। রাস্তার পাশে মুরগির খাঁচা পড়ে রয়েছে। এই টার্মিনাল থেকে রাজশাহী জেলার ভেতরে বিভিন্ন সড়কপথে বাস ছেড়ে যায়।

আজ রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশ রয়েছে। এ উপলক্ষে নগরের মাদ্রাসা মাঠে মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাস শ্রমিকেরা জানালেন, রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ তাই বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল আটটা পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিকভাবে বাস ছেড়ে গেছে। আটটার পর থেকে আর কোনো গাড়ি ছাড়েনি। আর সকাল থেকেই বাইরের কোনো বাস রাজশাহীতে ঢোকেনি। রাতে ঢাকা থেকে যে গাড়িগুলো ছেড়েছিল, সেগুলো শুধু ঢুকেছে।

ঢাকা বাস কাউন্টারগুলোর সামনে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টার খোলা। বাস ছাড়ছে, কিন্তু যাত্রী খুব বেশি দেখা গেল না।

রাজশাহী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় বাসের লোকজন বুকিং বাতিল করেছে। জেলার বাগমারা থেকে রাজশাহী আসার জন্য ১০টি বাসের বুকিং দেওয়া হয়েছিল। গতকাল বাসের লোকেরা চারটি বাসের বুকিং বাতিল করেছিল। আজ সকালে বাকি বাসের লোকের আর ফোন ধরছে না। হয়তো তারাও বুকিং বাতিল করবে।’ তিনি জানান, ‘পাবনা থেকে রাজশাহীতে আসার জন্য ৮০টি বাস বুকিং দেওয়া হয়েছিল। সব বুকিং বাতিল হয়েছে। এখন নেতারা প্রাইভেট কার নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।’

শফিকুল আলম দাবি করেন, বেলা ১১টার দিকে নওগাঁর মান্দা ফেরিঘাটে ১০টি ট্রাকে করে লোকজন আসছিল। পুলিশ সবগুলো ট্রাকের চাবি কেড়ে নিয়েছে।

পরিবহন শ্রমিকদের বরাত দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, মালিকেরা শ্রমিকদের চিঠি দিয়ে বাস ভাড়া না দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। ভাড়া দিলে পরে তাদের ‘চেইনে’ গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে না, এমনকি জরিমানাও করা হতে পারে —এমন আশঙ্কা করছেন শ্রমিকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘা থেকে নেতা-কর্মীরা প্রাইভেট কার, অটোরিকশা ও ট্রেনে করে আসার চেষ্টা করছেন। একইভাবে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট থেকেও লোকজন ট্রেনে করে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য আসছেন। বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে, এটা বুঝেই অনেক নেতা-কর্মী রাতেই রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। সকালে তারা রাজশাহীতে এসে পৌঁছেছেন।

অপরদিকে আজ পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ। বেলা ১১টা থেকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ছাত্রলীগ পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে। এতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও উপস্থিত রয়েছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, বিএনপির এই সমাবেশ থেকে যাতে নগরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা করতে না পারে—এ জন্য তাঁরা এই কর্মসূচি দিয়েছেন। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ তা মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, তাঁদের এই অবস্থান দুপুর পর্যন্ত থাকবে। পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *