সরকার ও প্রজাতন্ত্র দুটিই সাংবিধানিকভাবে আলদা ইউনিট। সরকারের নির্দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কাজ করবেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, এটাই নিয়ম ও আইন। সরকার যদি বে-আইনী কোন কাজ করতে বলে, তবে তা করা অন্যায় হবে এটাই স্পষ্ট হল মামলার রায়ে। কারণ নির্দেশ দাতার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ পালনকারী বা পালনকারীদেরও সাজা হয় এটা এখন বাস্তব। বরং এটাও আপাতত বলা যায়, নির্দেশ দাতার শাস্তি কমও হয় কিন্তু নির্দেশ পালনকারী বা পালনকারীদের শাস্তি কম হয় না।
বাস্তবতা বলছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নির্দেশ পালনকারীদের মধ্যে অনেকের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু নির্দেশ দাতা বা দাতারা বা মাষ্টারমাইন্ড বলে খ্যাত যে বা যারা ছিলেন তাদের চিহিৃত করতে একটি কমিশন গঠনের কথা বলা বলি হচ্ছে। কিন্তু এখনো গঠন হয়নি। এই সরকারের মেয়াদে কমিশন গঠন হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সুতরাং ১৫ আগষ্টের নির্দেশ পালকারীদের চিহিৃত করতে এখনো কমিশন গঠন হয়নি অথচ নির্দেশ পালকানকারীদের অনেকে পরপারে চলে গেছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হল গতকাল। এই রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড ও ১৯ জন যাবজ্জ্বীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। ছোট ছোট দন্ডে দন্ডিত হয়েছেন আরো ১১জন। মোট ৪৯ জনের দন্ড হয়েছে এই মামলায়। আসামীদের মধ্যে যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ছিলেন তাদের অনেকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডও হয়েছে।
ক্ষতাসীন আওয়ামীলীগ বলছে, নির্দেশদাতা হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত হল। তাদের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে, রায়ের কাগজপত্র পেলে তারেক রহমানের মৃত্যুদন্ডের জন্য তারা আপিল করতে পারেন।
আর বিএনপি বলছে, তাদের নেতারা নির্দোষ। কিন্তু তাদের সময়ের যে সকল প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর দন্ড হয়েছে, তাদের বিষয়ে বিএনপি কোন কথা বলেনি। মানে হল, দন্ডিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পক্ষে এখন কেউ নেই।
পর্যলোচনায় দেখা যায়, এই রায়ে নির্দেশদাতা হিসেবে তারেক রহমান অভিযুক্ত হয়ে যাবজ্জ্বীবন দন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। আর নির্দেশ পালনকারীদের মধ্যে দুই জন জেনারেলেরও মৃত্যুদন্ড হয়। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, নির্দেশ দাতা বা দাতারা পরে ও নির্দেশ পালনকারীরা আগে দন্ডিত হয়ে যায় এবং দন্ডও কম হয় না তাদের।
জাতি আশা করে, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামালার রায় এবং ১৫ আগষ্ট জঘন্যতম ও নৃশংসতম ঘটনার মামলার রায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের স্পষ্টই একটি ম্যাসেজ দিয়েছে। আর তা হল, সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাজ করার নির্দেশ দিবে তবে যে নির্দেশ দেশ ও জনগনের জন্য ক্ষতিকর, তা পালন করা উচিত নয়, যা বে-আইনীও বটে। আর অন্যায় জেনে কাজ করলে নির্দেশদাতা বা দাতাদের চেয়ে বেশী শাস্তি অভিযুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আগেই পেতে হয়, তাই প্রামনিত হল।