‘রাষ্ট্র এখন পুলিশ নিয়ন্ত্রিত’

Slider জাতীয়


ঢাকা: ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘রাষ্ট্র এখন পুলিশ নিয়ন্ত্রিত।’
তারা আরো বলেছেন, ‘বর্তমান নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ভিন্নমতের কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ রবিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এতে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর এই সরকার দুটি ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমত-প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ সর্বত্র দলীয় আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আর রাষ্ট্র এবং সরকারকে এক করে ফেলেছে। দল ও সরকারও এখন এক হয়ে গেছে। এই দুটির মধ্যে কোনো তফাৎ আর থাকেনি।

তিনি বলেন, ‘এই দুটি পদক্ষেপে দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মানুষ তাঁর অধিকার হারিয়েছে। এমন একটি পরিবারও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যারা গত দশবছরে সরকারের দ্বারা নিপীড়িন ও উৎপীড়নের শিকার হয়নি। অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে আনুগত্যের প্রভাব নেই। আনুগত্যের বাইরে গত দশবছরে কোনো নিয়োগ হয়নি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, দেশে এখন ন্যায়বিচারের কোন পরিবেশ নেই। তিনি বলেন, বিচারকরাই যেখানে আতঙ্কিত, সেখানে খালেদা-তারেক বা বিরোধী দলের কারো ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা নেই। জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বিতাড়ণ জাতিকে একটি সংকটে ফেলেছে। তিনি বলেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না, সে দেশে খালেদা-তারেক বা আমরা কেউ বিচার পাবো না। আ স ম আব্দুর রব আরো বলেন, তিনটি স্তম্ভের একটি হলো প্রশাসন, যেটি এখন পুলিশ নিয়ন্ত্রিত এবং এই রাষ্ট্রটিও পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাকি দুটি স্তম্ভ আইন ও বিচার বিভাগ এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।

আইনজীবীদের অনৈক্যের কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ট ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি চার বিচারপতিকে ডেকে নিয়ে গেলেন। তারা এসে বললেন যে তোমার সঙ্গে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) আমরা বিচারে বসবো না। অভিযোগের মামলা দায়েরের আগেই অভিযোগের বিচার হয়ে গেলো।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আজ জেলে যেতে হতো না। তারেক রহমানের ওপর এ ধরনের নির্যাতন হতো না। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণের জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে দেশে নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা চলছে। ১৬ কোটি মানুষ আজ অবরুদ্ধ। দেশের মানুষ আজ কারাগারে। তিনি বলেন, এই সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এই সরকার একটি অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার।’

সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *