বগুড়ায় রঙের আচঁড়ে সেজে উঠার অপেক্ষায় ৬৬৪ মণ্ডপের প্রতিমা

Slider গ্রাম বাংলা

আসছে শারদীয় দুর্গা পূজা। তাই সনাতন ধর্মের মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ লেগেছে।

বগুড়া জেলায় মণ্ডপ মন্দিরগুলো ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে। প্রতিমা তৈরীর পর রঙ এর আচঁড় দেয়ার কাজ চলছে। দেশের অন্যন্য স্থানের মতো বগুড়াতেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সার্বজনীন শারদীয় উৎসবকে ঘিরে নানা আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি চলছে জোরেসোরে। বগুড়ায় জেলায় এবার ৬৬৪টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন চলছে। নিরাপত্তার স্বার্থে থাকছে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও।
জানা যায়, প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ। জেলার পুজা মণ্ডপগুলোতে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করে শিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছে রংয়ের আঁচড় দিতে। মণ্ডপগুলোতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে।

সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে বগুড়ায় প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। দম ফেলার ফুসরত নেই কারিগরদের। প্রতিমা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। প্রতিবারের মতো এবারো প্রতিটি মণ্ডপের সামনে এক একটি বিশালাকৃতির গেটও নির্মাণ করা হবে। লাগানো হবে নানান রঙয়ের বাতি।

গতবারের চেয়ে এবারে পূজার খরচ বেড়ে গেলেও আয়োজনে কমতি করতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন পুজামণ্ডপের কর্মীরা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বগুড়ার পুলিশ প্রশাসন। বগুড়া পূজা উদযাপন পরিষদ এর কার্যরয় সুত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলায় এবার ৬৬৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়া সদরে ১১২টি, শিবগঞ্জে ৫১টি, গাবতলীতে ৭৫, সারিয়াকান্দিতে ২৩, ধুনটে ৩৯, শেরপুরে ৮২, নন্দীগ্রামে ৪৪, আদমদীঘিতে ৬১, দুপচাঁচিয়ায় ৩৮, কাহালুতে ৩৯ শাজাহানপুরে ৫৫ এবং সোনাতলায় ৪৫টি।
বগুড়ার মালতীনগর পূজা মণ্ডপে প্রতিমার রঙ করা চলছে। মন্ডপের কর্মীরা অন্য দিকে গেট তৈরী ও সাজ সজ্জার বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। অতিথি বসার ব্যবস্থাও করছেন। মণ্ডপে ভক্তরা পরিচ্ছন্নভাবে যাতায়াত করেত পারে সে জন্য যাতায়াতের রাস্তাও সাজিয়ে তুলছে। সোমবার বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, চেলোপাড়াসহ একাধিক মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরীর পর তাতে রঙ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিমা শিল্পীরা। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পুরোহিত প্রদীপ চক্রবর্তী জানান, আগামী ১৫ অক্টোবর মহাযষ্ঠির মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে। ১৯ অক্টোবর দেবী বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ৫দিনের সার্বজনীন এ উৎসব।

প্রতিমা তৈরীর কারিগর অজিত পাল জানান, প্রতিমা তৈরীতে সময় লাগে। অনেক কাজ রয়েছে। তিনি ১২ সেট প্রতিমা তৈরি করেছেন। প্রতি সেট দুর্গার সঙ্গে থাকে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষ্মী প্রতিমা। তিনি জানান, আগে একটা প্রতিমা সেট তৈরি করতে খরচ হতো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন বাঁশ, কাঠ, কাদা মাটিসহ প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় বর্তমানে প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিমাই ঘোষ জানান, সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। পূজা মণ্ডপগুলোতে সার্বণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তিনি দাবি জানান। বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার দেব জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু থেকে দুর্গাপূজা সমাপ্ত পর্যন্ত প্রতিটি মন্ডপে কঠোর নজরদারিসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, দুর্গাপূজায় নিবিঘ্নে করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পূজার সময় জেলার সব মদের দোকান বন্ধ, রাত সাড়ে ১০টার পর মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ, গভীর রাতে ডিস্কো ড্যান্সের আয়োজন বন্ধ, মেলাকে কেন্দ্র করে জুয়ার আসর বসানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোর আশপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *