ঢাকা: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্বঘোষিত জনসভায় যোগ দিতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রোববার সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীদের জমায়েত হতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।
ছাত্রদল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন। জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দুপুর ২টায়। জনসভার মূল ব্যানারে লেখা হয়েছে মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সকল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভা।
প্রধান অতিথি হিসেবে নাম লেখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতারা বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। এই জনসভা থেকে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
দুই দফা পেছানোর পর ২২ শর্তের বেড়াজালে বিএনপিকে জনসভা আয়োজনের অনুমতি দেয় ডিএমপি। অনুমতি পাওয়ার পর ইতিমধ্যে সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এর আগে ২৬শে সেপ্টেম্বর দলের যৌথসভা করেছেন বিএনপি মহাসচিব। কেন্দ্রীয় বিএনপির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি ঢাকা জেলা ও আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিএনপিসহ অঙ্গদলের নেতা-কর্মীরা জনসভায় অংশ নেবেন। এসব জেলা থেকে গতকালই রাজধানীতে এসে জড়ো হয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী। এ ব্যাপারে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আমরা জনসভা সফল করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কাউকে দাওয়াত দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে, গতকাল জনসভাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মিটিংটা শুধু বিএনপির। সেখানে কাকে আমন্ত্রণ জানালাম আর জানালাম না সেটা বড় কথা না। মিডিয়ার যারা আছেন তারা আমাদের পক্ষে লেখেন আর বিপক্ষে লেখেন আপনারাও সবাই আমন্ত্রিত।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যেই ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট যৌথভাবে ৫ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছে। একই লক্ষ্যে আট দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটও প্রকাশ করেছে জাতীয় সনদ। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় অবস্থান থেকে সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেনি বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসভা থেকে সরকারের উদ্দেশে ৭ দফা দাবি ও দেশবাসীর উদ্দেশে ১২ দফা লক্ষ্য (অঙ্গীকার) ঘোষণা করা হবে।
বিরনপির উত্থাপিত ৭ দফা দাবিগুলো হল, ১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, ২. খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া, পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি। ৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ৪. ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। ৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে কোন ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা। ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ এবং ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।
দুপুর দুইটা থেকে জনসভার মূল কার্যক্রম শুরু হবে। তবে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।