আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন: আদালত

Slider বাংলার আদালত


ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘আপনারা কি আদালতে আসেন কেবল জামিন নেওয়ার জন্য? আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন।’

খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি না করে তাঁর আইনজীবীরা সময় চাইলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান এসব কথা বলেন।

গতকাল সোমবার এই মামলার দুই আসামি আদালতে অনাস্থা দেন। এর ওপর আজ আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করে ছিলেন আদালত। আজ আদালত বলেন, অনাস্থার বিষয়ে আগামীকাল বুধবার আদেশ দেবেন।

আজ শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকাজে আদালতকে সহযোগিতা করছেন না। বরং ভেতরের-বাইরের ষড়যন্ত্র এক হয়ে গেছে। কেমন যেন গুমোট অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আদালতের প্রতি অনাস্থা দেওয়ার প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি যে, আসামিপক্ষ অনাস্থা দেবে। বাস্তবে তাঁরা ষড়যন্ত্র করছেন। আদালত মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন। তাঁদের আচরণ স্ববিরোধী। উচ্চ আদালত থেকে কোনো আদেশ আসেনি। আদালত মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন।

আইনে যুক্তিতর্কের বিধান নেই জানিয়ে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। আসামিপক্ষের আংশিক যুক্তিতর্ক হয়ে গেছে। এখন তাঁরা যদি যুক্তিতর্ক শুনানি না করেন তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আসামিদের যুক্তিতর্ক এর সুযোগ দিয়ে মনে হচ্ছে, আমরা ভুল করেছি। এখন যুক্তিতর্ক না করলে মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন আদালত।

খালেদা জিয়ার আদালতে না আসা প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া মামলা চালাতে দেবেন না। এভাবে চললে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। কারাগারে থাকলে কোনো আসামি বলতে পারেন না, তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। খালেদা জিয়াকে তো আর জোর করে আনা সম্ভব না। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বয়স্ক মহিলা। তাঁর সুবিধার কথা ভেবে এখানে আদালতে বসানো হয়েছে। তাঁর সম্মানের কথা ভেবে জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে আনছেন না। এ সুযোগ তাঁরা নিচ্ছেন।

অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া নিজে আদালতে এসে বলে গেছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। খালেদা জিয়া একা চলতে পারেন না। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। বাথরুমে পড়ে গেছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, দুই এক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন জানিয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তিনি আদালতে আসবেন। সে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি চান তিনি।

আদালতের প্রতি অনাস্থা দেওয়া দুই আসামি হলেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয় জিয়াউল ইসলামকে। আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে আদালতে তাঁর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম হাজির ছিলেন না। মনিরুলের আইনজীবী আখতারুজ্জামান আদালতে হাজির ছিলেন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর এই মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে আদেশ দেন আদালত। আজও খালেদা জিয়াকে আদলতে হাজির করা হয়নি।

নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন খালেদা জিয়া।

আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করেন। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে আদালত বসেন। কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আদালতকে বলেন, এ আদালতে ন্যায়বিচার নেই। তিনি অসুস্থ। তিনি আর আদালতে আসবেন না। যত দিন ইচ্ছা আদালত তাঁকে সাজা দিতে পারেন।

এরপর এই মামলায় চার দিন শুনানি হলেও খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি। কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চান না।

অবশ্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আদালতকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চান। কারা কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে, তা ঠিক নয়।

আগে এই মামলার বিচার চলছিল পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলায় দুদক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে। খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির যুক্তিতর্ক শুনানি বাকি রয়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর আসামিরা হলেন হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *