ছাত্র রাজনীতিতে অন্যরকম কোলাকুলি

Slider শিক্ষা


ঢাকা: ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের সঙ্গে কোলাকুলি করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী হাল সময়ের বিরল দৃশ্যই দেখা গেল। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জড়িয়ে ধরলেন ছাত্রদল সভাপতিকে। কোলাকুলি করলেন। পরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকা মতবিনিময় সভায় নিজ নিজ সংগঠনের হয়ে বক্তব্যও রাখেন তারা। গতকাল এমন দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। ওই সভায় ছাত্রলীগসহ অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ছাত্রদলের দুই নেতাও অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে তারা সভাস্থলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি করেই তাদের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। ক্যাম্পাস ত্যাগের আগে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে যান গতকাল।

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে আইনি নোটিশ পাওয়ার পর নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের বৈঠক ডাকেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হলসমূহের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে। গতকাল বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনস্থ ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে অনুষ্ঠিত হওয়া দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার এ বৈঠক ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ছিল কৌতূহল। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। তবে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের দাবি করেছেন তারা। এ ছাড়াও নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি করা হয়। অন্যদিকে আলোচনা শেষে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র নেতাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক, সংসদীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।’ ভিসির সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা। অন্যদিকে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাবি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমকে যৌথ ব্রিফ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান। এ সময় গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা ছাত্রসংগঠনগুলো সাধারণ একটা মতে এসেছি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য ডাকসু নির্বাচন আমাদের করতে হবে।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, ডাকসু নির্বাচন হোক। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছেন, একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি ঐক্যে পৌঁছাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছর না হওয়া এই ডাকসু নির্বাচন যেন একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে হয়। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের বৈধ ভোটার তালিকা করার দাবি জানিয়েছি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি হলে ছাত্রলীগের সংখ্যা ত্রিশ ভাগ। এর বাইরে যারা আছেন তারা বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আমরা বলেছি যে, সহাবস্থানের জন্য যে ক্রাইট্রিয়া রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম সময়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এরপরে ঢাবি এক দিনের জন্যও ছাত্রলীগের কোনো আচরণের কারণে বন্ধ হয়নি। আমরা সবাইকে বলেছি আপনারা যারা নিয়মিত ছাত্র আছেন তারা আসুন। আমরা চাই ছাত্রদলের কেউ ক্যাম্পাসে এসে পেট্রোল বোমা রাখবে না।

সহাবস্থানের জন্য আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’ এর পরই বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান। তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সে পরিবেশের জন্য ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করার যে স্বাভাবিক পরিবেশ তা তৈরি করে দিতে হবে। সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার উপযোগী করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করতে হবে।

অন্য ছাত্র সংগঠন যারা আছে তাদের ভীতিহীন ও নিরাপদে থাকার পরিবেশ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’ এর আগে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা নির্দিষ্ট কোনো টাইমফ্রেম দিইনি। এখানে অনেক সংগঠন টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছে। আমরা জানি না, তাদের সে ধরনের রাইটস আছে কি না। তারা বলে দিচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। আমার মনে হয়, তাদের আরো সময় দেয়া উচিত। একটা জিনিস ভালোভাবে করতে প্রস্তুতির প্রয়োজন। ভোটার তালিকা করতে হবে, আরো আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। আমার মনে হয়, তাদেরও সময় দেয়া উচিত। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এটা একটা বৃহৎ ইস্যু। নির্বাচনের আগে বা মাঝখানে হলে আমার মনে হয় না ভালো হবে।

আমার মনে হয়, নির্বাচনের পরে যত দ্রুত সম্ভব করা যায়। আমরা কোনো টাইমফ্রেম বেঁধে দিচ্ছি না। আমার মনে হয়, নির্বাচনের আগে পসিবল না। যদি হয়, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাবো।’ এদিকে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা দ্রুত ডাকসু নির্বাচন চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগে হোক বা পরে হোক। ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের আন্তরিকতা খুবই প্রয়োজন। এর জন্য ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রস্তুতি দরকার তা সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছি।’

এদিকে বৈঠক পরবর্তী নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সামনে আমাদের অনেক বড় একটি বিষয় আছে। সেটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমাদের আজকের সভাটি ডাকা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধ নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আলোচনা করেছে। তারা যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন সেগুলো আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা নোট করেছেন। সেগুলো আলোচনা পর্যালোচনা করে প্রতিটি বিষয় কিভাবে সমাধান করা যায় সেগুলোর দিকে আমরা এগুবো।’ তিনি বলেন, ‘একটি ভালো বিষয় তাদের মধ্য থেকে হঠকারী কোনো চিন্তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখিনি। তারা বলেছে, যৌক্তিক উপযুক্ত সময়ে এটা করা দরকার। সবাইকে এক করে যেন করতে পারি এ ধরনের পরামর্শ আছে।

কেউ বলছে মার্চের মধ্যে করা যায় কিনা কেউ বলছে জাতীয় নির্বাচনের পর করতে। তবে সবাই একটি বিষয়ে এক হয়েছে যে আমরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনটা করি।’ কবে নাগাদ নির্বাচন দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি ভিসি বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে একটা নির্দেশনা আমাদের আগেই দেয়া আছে। নির্বাচনী কাজের পরিধি নিয়ে আমাদের প্রভোস্ট কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটি এরই মধ্যে একটা নির্দেশনা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের মার্চ মাস আমাদের টার্গেট আছে সে থেকেতো আমাদের সরে যেতে বলেনি শৃঙ্খলা কমিটি ও প্রভোস্ট কমিটি।

এ লক্ষ্যে আমরা আছি এই নিরিখে আমাদের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য কাজ করছেন। অক্টোবরের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবো। এটা কঠিন কাজ। এটা করতে পারলে আমরা অনেক এগিয়ে যাবো।’ ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘সহাবস্থানের জন্য যা যা করা দরকার প্রাধ্যক্ষবৃন্দ তাই করবেন। এগুলো নতুন কিছু নয়। সবাই অভিজ্ঞ সবাই যা করা দরকার তা করবেন। হলে সহাবস্থান ও মধুর ক্যান্টিনে রাজনৈতিক চর্চা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালনার জন্য উন্মুক্ত সেগুলো কারো জন্য বাধা নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *