হোয়াইট হাউজে ঝড় তুলেছে বব উডওয়ার্ডের বই

Slider সারাবিশ্ব


ঢাকা: ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উন্মোচনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড। আর এবার তিনি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে রীতিমতো ঝড় তুলে দিয়েছেন। নতুন একটি বই লিখেছেন তিনি। তাতে বলেছেন, দেশকে নিরাপদ রাখতে ট্রাম্পের ডেস্ক থেকে বেশ কিছু ডকুমেন্ট চুরি করেছেন তারই সহযোগীরা। এসব ডকুমেন্ট ছিল বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার বেশ কিছু দলিল। এমন কি ট্রাম্পের বিচার বিবেচনার জন্য বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সহযোগী তাকে ‘ইডিয়ট’ ও মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এতে বলা হয়েছে, সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক। মঙ্গলবার তার বইয়ের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অবস্থায় পড়েছেন ট্রাম্প। বব উডওয়ার্ডের বইয়ের নাম ‘ফেয়ার: ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউজ’। বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এপির হাতে আসে একটি কপি। এরপরই এ বইয়ের উদ্ধৃতি ও কাহিনীগুলোকে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প প্রতারণা ও জনগণের সঙ্গে মস্করা বলে অভিহিত করেছেন। এর সঙ্গে আরো যোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিক ও চিফ অব স্টাফ জন কেলি প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ওই বইয়ে সমালোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ছাড়া আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে তার ডেস্ক থেকে সিনিয়র সহযোগীরা স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট নিয়ে নিয়েছেন এমনটাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। মঙ্গলবার দিনের শেষের দিকে আবারও টুইটারে ফেরেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ এবং ‘দক্ষিণাঞ্চলের এক নির্বোধ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন বলে বইটিতে যে কথা রয়েছে তাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি জেফ সহ অন্য কারো বিরুদ্ধে কখনো ওইসব শব্দ ব্যবহার করেন নি। কারণ, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মহান হয়। উল্লেখ্য, রাশিয়া তদন্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার পর জেফ সেশনস বহুবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনার শিকারে পরিণত হয়েছেন। বব উডওয়ার্ডের লেখা বইটির প্রকাশনা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে লেখালেখি চলছে। হোয়াইট হাউজের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের অনুমান তাদের প্রায় সবাই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উদঘাটনকারী সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডকে সহযোগিতা করেছেন। তবে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারা হ্যাকাবি স্যান্ডার্স ওই বইয়ের কাহিনীকে বানোয়াট ছাড়া কিছু নয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছে, সাবেক অনেক হতাশাগ্রস্ত কর্মী প্রেসিডেন্টের দুর্নাম ছড়ানোর জন্য এমন গল্প ফেদে থাকতে পারে। এ নিয়ে বব উডওয়ার্ড কোনো মন্তব্য করেন নি। এ বইয়ে চিফ অব স্টাফ জন কেলিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তিনি ট্রাম্পের মানসিক বিকার নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। এক পর্যায়ে তিনি ট্রাম্পকে ইডিয়ট বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তবে এ অভিযোগ মঙ্গলবার অস্বীকার করেছেন কেলি। এ বইয়ে আরো বলা হয়েছে, রাশিয়া তদন্ত নিয়ে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী জন দোউদ। এই তদন্ত থেকে ট্রাম্প নিজেকে এড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষ করে তিনি রাশিয়া তদন্ত নিয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের সাক্ষাতকারকে বুঝিয়েছিলেন। জন দোউদ জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন। তিনি ট্রাম্পকে বলেছিলেন, সাক্ষ্য দেবেন না। এটা হয়তো একটি অরেঞ্জ জাম্পসুট। তবে মঙ্গলবার এ কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। ওই বইয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিসকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি একবার ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করছিলেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি মনিটরিং নিয়ে কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের বিষয়ে। মাত্তিস এক পর্যায়ে বলেন, আমরা তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য এটা করছি। বইটিতে বলা হয়েছে, ওই সাক্ষাত নিয়ে জিম মাত্তিস তার ঘনিষ্ঠজনেদের বলেছেন যে, তার কথা শুনে বোঝার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ গ্রেডের একজন শিক্ষার্থীর মতো আচরণ করছিলেন। তবে জিম মাত্তিস এমন কথা কখনো উচ্চারণ করেন নি বলে এক বিবৃতিতে বলেছেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল রব ম্যানিং বলেছেন, বব উডওয়ার্ড কখনোই জিম মাত্তিসের সাক্ষাতকার নেন নি। ু

২০১৭ সালের এপ্রিলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে রিপোর্ট করেন বব উডওয়ার্ড। ওই সময়ে জিম মাত্তিসকে ডেকে নেন ট্রাম্প। তাকে বলেন, তিনি চান সিরিয়ার নেতাকে (আসাদ) ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং বলেন,‘ তাকে হত্যা করুন। আমাদের সেখানে ভিতরে অভিযান চালাতে হবে’। ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেন মাত্তিস। পরে একজন সিনিয়র সহযোগী বলেছেন, তারা আসলে এমন কোনো পদক্ষেপই নেন নি। এর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা সিরিয়ায় বিমান হামলাকে বেছে নেন, যা ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি মঙ্গলবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে কখনোই হত্যার পরিকল্পনা করেন নি ট্রাম্প। নিকি হ্যালি জাতিসংঘ সদর দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলা নিয়ে কথোপকথন সম্পর্কে তিনি জানেন। নিকি বলেন, আসাদকে হত্যা করার বিষয়ে একবারও প্রেসিডেন্টকে কথা বলতে শুনি নি আমি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *