মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের ৭ বছরের কারাদণ্ড

Slider সারাবিশ্ব


ঢাকা: রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার দায়ে মিয়ানমারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বিচারক ইয়ে লুইন বলেন, যেহেতু তাঁরা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টস (দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন) ভঙ্গ করেছেন, তাই তাঁদের প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

রয়টার্সের গ্রেপ্তার দুই সাংবাদিক হলেন ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়ে ওউ (২৮)। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও কিশোরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সময় গত ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হন তাঁরা।Eprothomalo

গ্রেপ্তারের পর এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। আদালতে শুরু হয় প্রাথমিক শুনানি। ছয় মাসের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ৯ জুলাই ইয়াঙ্গুনের ডিস্ট্রিক্ট আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

গত ২৭ আগস্ট এ মামলার রায় হওয়ার কথা থাকলেও বিচারক অসুস্থ থাকায় রায় ঘোষণা পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল। সেদিন তাঁদের আইনজীবী বলছিলেন, ‘যদি বিচার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হয়’, তাহলে তাঁর দুই মক্কেল বেকসুর খালাস পাবেন।

এরই মধ্যে দুই সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে প্রচারে নামেন লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা। জাতিসংঘ ও পশ্চিমা কয়েকটি দেশও তাঁদের মুক্তির দাবি জানায়।

গত ১২ ডিসেম্বর দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই দুই সাংবাদিককে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তাঁদের হাতে কিছু কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয়। রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা গ্রেপ্তার হন।

তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, বিদেশি গণমাধ্যমকে সরবরাহ করতে এসব তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়।

এই দুই সাংবাদিকের আইনজীবী বলছেন, পুলিশই তাঁদের ফাঁসিয়েছে। কারণ, গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ করায় কর্মকর্তারা তাঁদের শাস্তি দিতে চাইছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন পুলিশ কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এই দুই সাংবাদিককে শাস্তি দিতে বা মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে যাতে সংবাদ প্রচার করতে না পারেন, সে জন্য এই নৈশভোজের নাটক সাজানো হয়েছিল।

মিয়ানমার সরকার বরাবরই রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ইনদিনে গণহত্যা নিয়ে তদন্ত শেষে পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, গ্রামের যেসব লোক ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন আইন লঙ্ঘন করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে সরকার বরাবরই বলে আসছে, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টস (দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন) ভঙ্গ করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে তল্লাশি চৌকিতে হামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যটিতে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এই অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের প্রায় সবার অভিযোগ, মিয়ানমারের বাহিনী রাখাইনে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভাষ্য, তারা ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে লড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *