‘এমন গরু মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে’

Slider ঢাকা

আর মাত্র ৮ দিন বাকি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের। এবারও আশঙ্কা করা হচ্ছে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা পশু হাটে ওঠার। মেয়াদোত্তীর্ণ টিটেনাস ইনজেকশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে গরুকে মোটাতাজাকরণে ব্যবহারের ঘটনা ধরা পড়ার পর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জব্দ করেছে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গরু মোটাতাজা করার নানা ধরনের বিষাক্ত ওষুধ। কোথাও কোথাও নতুন ধরনের অপকৌশলও ধরা পড়েছে।

জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, ‘প্রতিবারই কোরবানির ঈদের আগে গরু মোটাতাজাকরণের নানা ধরনের বিষাক্ত ওষুধের তৎপরতা থাকে। এবারও তা আছে। গত ১ আগস্ট আমরা ঢাকার মিটফোর্ডে অভিযান চালিয়ে মানুষের বিভিন্ন ওষুধের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণের বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওষুধ জব্দ করেছি। সারা দেশেই হয়তো এমন ওষুধ রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে সব জায়গাতেই মনিটরিং বাড়ানো খুব জরুরি।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম আরো বলেন, ‘এবার নতুন পদ্ধতি দেখে খুবই শঙ্কিত হয়েছি। সেটা হচ্ছে মানুষের শরীরে সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত টিটেনাস ইনজেকশন ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়াদ পার করে ওই ওষুধে এক ধরনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে তা গরুতে প্রয়োগের মাধ্যমে মোটাতাজাকরণের জন্য ব্যবহার করার তথ্য পেয়েছি। এমন গরু মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সবাইকে গরু কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কোন গরু স্বাভাবিকভাবে, কোনটি অস্বাভাবিকভাবে মোটাতাজা হয়েছে ক্রেতাদের তা বোঝা উচিত। তিনি বলেন, ‘সারা দেশেই প্রতিটি গরুর হাটে আমাদের মেডিক্যাল টিম ও মনিটরিং টিম দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকায় ২৩টি গরুর হাটে মোট ২৭টি মেডিক্যাল টিম থাকবে। এসব ক্ষেত্রে গবাদি পশুর রক্ত পরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকবে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, মেডিক্যাল টিম গবাদি পশু সুস্থ-সবল রাখার জন্য কাজ করবে, আবার কোনো গবাদি পশু অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড বা অন্য কোনো রাসায়নিক প্রয়োগের ওপরও নজর রাখবে। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো পশু যাতে হাটে না ঢুকতে পারে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এ জন্য অভিযানও চালানো হবে। ধরা পড়লে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে দোষীদের। প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই সারা দেশেই এ ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের।’

নিরাপদ গরু কিভাবে চেনা যাবে তা জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গিয়াস উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত অস্বাভাবিক মোটাতাজা গরু অস্বাভাবিক স্থূল দেখায়, নিচের অংশে পানি জমে থাকে, থলথলে অবস্থা থাকে, মাংসল স্থানে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে আঙুল দেবে থাকে, চোখে নেশাগ্রস্ত মানুষের মতো ঝিমুনির ভাব থাকে, চঞ্চলতা থাকে না, গতিবিধি থাকে নিস্তেজ ধরনের। রোদে থাকতে পারে না, ঘন ঘন পানি খায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাব করে। এসব গবাদি পশুর কিডনি ও লিভার বিকল হয়ে যায়। অসময়ে এসব গরু মারা যায়।

নতুন পদ্ধতিতে অসাধু চক্র গরু মোটাতাজা করতে টিটেনাস ব্যবহারের বিষয়ে ড. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এমন কোনো তথ্য এখনো আমার নজরে আসেনি। তবে টিটেনাস যেহেতু সিরাম বা প্রোটিনজাতীয় উপাদান তাই অসাধু চক্র এটির অপপ্রয়োগ ঘটাতে পারে, যা গবাদি পশু ও মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *