অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে বন্দরে এনবিআরের নজরদারি

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

মিথ্যা ঘোষণায় মদ, মাদক, সোনা, ইলেকট্রনিকস পণ্য, কোরবানির চামড়া আমদানি-রপ্তানি বন্ধে বন্দরে নজরদারি বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গত সপ্তাহ থেকে বন্দরে নিয়মিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত গোয়েন্দারা দায়িত্ব পালন করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরে চিঠি পাঠিয়ে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

এনবিআর সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে বৈঠক হয়। আলোচনাকালে চোরাচালান ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়। বিশেষভাবে মিথ্যা ঘোষণায় অবৈধভাবে মদ, মাদক, কোরবানির পশুর চামড়া আনা-নেওয়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

এ বৈঠকের পর সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরে চিঠি পাঠিয়ে সমুদ্র ও স্থলবন্দরে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশের অর্থনীতি গতিশীলতার জন্য মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মিথ্যা ঘোষণায় দেশে পণ্য প্রবেশে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরদারি বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। উভয় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে উভয় দেশের রাজস্ব বিভাগকেও এ বিষয়ে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনে চিঠিতে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ চিঠি পাওয়ার পর এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সহিদুল ইসলামকে চিঠি দিয়ে বন্দরে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেন। বন্দরে নজরদারিতে কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেন। বিশেষভাবে বাংলাদেশের দিকে বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া ও হিলি স্থলবন্দর এবং ভারতের দিকে কালীরানী, আংরাইল, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর, বানোবেরিয়া, সুটিয়া, বাঁশঘাটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গোয়েন্দার সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় শুল্ক গোয়েন্দা শাখার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সব স্থল ও সমুদ্রবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে পণ্য প্রবেশকালে বা বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠাতে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কোন ধরনের পণ্য আছে এমন সব ছোট-বড় কার্টন, কনটেইনার, প্যাকেট ন্যূনতম সন্দেহ হলে খুলে দেখে যাচাই করে ছাড় করতে হবে। কোনো আপত্তিকর পণ্য, বিশেষভাবে রাসায়নিক, সোনা, ইলেকট্রিকসামগ্রী মিথ্যা ঘোষণায় আনছে বা পাঠানো হচ্ছে তা আটক করে সরাসরি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য প্রবেশকালে অথবা ভারতে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কার্টনে করে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিকালে মদ, মাদক, রাসায়নিকের একাধিক চালান আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

এনবিআর সূত্র জানায়, সমুদ্র ও স্থলবন্দরের লোকবলের অভাবে এবং অটোমেশন না থাকায় পণ্যভর্তি কার্টন, কনটেইনার, প্যাকেটসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক খুলে ভেতরে প্রকৃতপক্ষে কোন জাতীয় পণ্য আনা-নেওয়া হচ্ছে তা যাচাই করা সম্ভব হয় না। প্রায় ক্ষেত্রেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র দেখে পণ্য ছাড় করে। এভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই বেশির ভাগ মালপত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আবার ভারতসহ অন্য দেশে যাচ্ছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দরে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বিশেষভাবে মিথ্যা ঘোষণায় মদ, মাদক, সোনা, ইলেকট্রনিকস পণ্য আনা হচ্ছে কি না, তা কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। উভয় দেশের অর্থনীতি গতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক বলেন, অতীতে অনেক সময় কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক অবৈধ বাণিজ্য হয়। বিশেষভাবে বন্দরের আশপাশের এলাকা দিয়ে চোরাই পথে গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। আবার ঈদের পরে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার করা হয়। এসব বিষয়েও শুল্ক গোয়েন্দারা নজরদারি বাড়িয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *