ঢাকা: প্রতিবাদ বিক্ষোভে ৭ দিন ধরে অচল ঢাকা। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা থেকে বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ৩রা আগস্ট প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ শে জুলাই ঢাকায় নিহত হয় দুই শিক্ষার্থী। এতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। এতে বাকি দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা।
ওদিকে বিক্ষোভকারীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। এই বিক্ষোভের সূচনা গত রোববার থেকে, যখন দুটি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে একই কলেজের দু’ শিক্ষার্থী মারা যান। এতে এক কোটি মানুষের রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। ঢাকার মগবাজার এলাকায় শুক্রবার সকালে একজন বাইক চালককে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এতে ওই বাইক চালক মারা যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রিপোর্টে বলা হয়, রোববারের দুর্ঘটনার সময় দুটি বাস যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়াভাবে সড়কে চলছিল, যা এ শহরে একটি সাধারণ ঘটনা। এ শহরটি নিয়মিত ট্রাফিক জ্যামে বিশৃংখল অবস্থায় থাকে। দুর্ঘটনায় লিপ্ত দুটি বাসের একটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তবে দুটি বাসকেই পরে আটক করা হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা নেমে আসেন রাস্তায়। তারা হাজার হাজার যানবাহন আটকে দেয়। এর মধ্যে রয়েছেন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা থেকে শুরু করে বিচারক পর্যন্ত। এসব যানবাহন আটকে দিয়ে তারা তাদের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্স দেখতে চান। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একজন মন্ত্রীর গাড়ির কাগজপত্র বৈধ নয় বলে দেখতে পান। ফলে তাকে ওই গাড়ি থেকে নেমে যেতে বাধ্য করেন তারা। তিনি নিজের গাড়ি থেকে নেমে যান। তবে শুক্রবার বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায় নি। কিন্তু ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষ মানববন্ধন তৈরি করেন। তাদের আহ্বান পরিবহন খাতে সংস্কার। এই মানববন্ধনে যোগ দিয়েছিল দু’টি স্কুলগামী শিক্ষার্থী। তাদের মা সেলিনা আকতার। তিনি বলেছেন, আমরা অবশ্যই পরিবর্তন আনবো। ওদিকে রাজধানীর আরো বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ।
এপির রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি তীব্র। এর ফলে লাইসেন্সবিহীন চালক হওয়া ও সড়কে রেজিস্ট্রিবিহিন গাড়ি নামানো খুব সহজ হয়ে পড়েছে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, চালকদের বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে প্রতি বছর এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১২০০০ মানুষ মারা যান।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতা আবদুর রহিম বলেছেন, রাস্তায় নিরাপত্তার মান উন্নত না হলে বাস অপারেটররা বাস চালাবেন না। বিক্ষোভকালে অনেক বাসের ওপর হামলা করেছে বিক্ষোভকারীরা। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছি। বিক্ষোভের নামে লোকজন আমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দিক এটা তো হতে পারে না। আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জন চলাচলের মূল বাহন হলো বাস। এখানে যেসব রেল চলে তা থেকে মানুষে ঠাসা। আর বেশির ভাগ মানুষের প্রাইভেট কার কেনার সামর্থ নেই।