একজন দেশপ্রেমিক ‘আওরঙ্গজেবের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

Slider লাইফস্টাইল

ঢাকা: আগামীকাল শুক্রবার (৩রা আগস্ট) সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক প্রয়াত কে এম হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গজেবের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী।

২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকা-মাওয়া সড়কের মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের খান বাড়ি এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গজেব ১৯৫৫ সালে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিন ডামুড্যা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। স্কুলজীবন থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আওরঙ্গ। তিনি ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন।’’

জন্ম ও শিক্ষা: বিশিষ্ট ছাত্রনেতা ও শরীয়তপুর এক আসনের ২ বার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত জনাব কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব এর জন্ম ১৯৫৫ সালের ২০ অক্টোবর ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিন ডামুড্যা গ্রামে। পিতার নাম মরহুম হাবিবউল্লাহ খান এবং মাতা মরহুমা সামসিয়া বেগম। পিতা বিখ্যাত কোহিনুর কেমিকেল কোম্পানীর কর্মকর্তা ছিলেন। পিতার কর্মস্থল ঢাকাতেই জনাব আওরঙ্গজেবের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা। ঢাকা কলেজ হতে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজ বিজ্ঞানে সম্মানসহ মাস্টার্স পাশ করেন।

রাজনৈতিক জীবন:
কলেজ জীবন থেকেই জনাব আওরঙ্গজেব ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং দু’বার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি ১৯৭৫-৭৬ সাল এক বছর কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামালের খুব প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৮০ সাল হতে ১৯৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ দশ বছর ভারতে প্রবাস জীবন যাপন করেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জনাব আওরঙ্গজেব শরীয়তপুর ১ আসন হতে (শরীয়তপুর জাজিরা) বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। কিন্তু ১৯৯২ সাল হতে তাকে পুনরায় কারাভোগ করতে হয়। ১৯৯২ হতে ১৯৯৬ সাল র্দীর্ঘ পাঁচ বছর বছর কারাভোগের পর তিনি ১৯৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বেকসুর খালাস পান।
১৯৯৬ হতে ২০০১ সময়কালে জনাব আওরঙ্গজেব তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েন। তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে, অনুষ্ঠানে বা তাঁর কার্যালয়ে অবাঞ্চিত ঘোষিত ছিলেন।
২০০১ সালের নির্বাচনে জনাব আওরঙ্গজেব স্বতন্ত্র র্প্রাথী হিসেবে শরীয়তপুর এক আসনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদন্দ্বীতা করে জয়যুক্ত হন।
২০০6 সালে আওরঙ্গ বিএনপিতে যোগদান করেন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে শরীয়তপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পরাজিত হন। ২০১১ সালে আওরঙ্গ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন।

কর্ম:

রাজনীতির পাশাপাশি জনাব আওরঙ্গজেব নির্মান প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তিনি সড়ক ও জনপথ এবং সরকারী বিভিন্ন ভবনের অন্যতম র্নিমাতা।

ছাত্রজীবনে জনাব আওরঙ্গজেব একজন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ছিলেন। সুর্যসেন হলের ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় তিনি বহু পদক পেয়েছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন।
ক্রীড়াবিদ ও দক্ষ সাংগঠনিক:

হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ শুধু বন্ধুপ্রিয় ছিলেন না, তার মধ্যে অসাধারণ মানবিক গুণ ছিল।তিনি ছিলেন দক্ষ সংগঠক। মেধা, মনন, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতেও তার ছিল অবাধ বিচরণ।মানুষের দুঃসময়ে পাশে ছুটে যেতেন, পরকে আপন করে নিতেন। কর্মীদের প্রতি কী যে দরদ ছিল যারা কাছে গেছেন তারাই জানেন। মাঠকর্মী অন্তপ্রাণ নেতা ছিলেন তিনি। হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু মনে করেন। অনেক কিছু ভাবেন। বাস্তবে আওরঙ্গ ছিলেন অন্যরকম। সাদামাটা। জনদরদী, কর্মীবান্ধব। তার প্রাণ ও আত্না ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। লোভ-লালসা তাকে কখনো গ্রাস করতে পারেনি। অর্থ ছিল না কিন্তু মনটা ছিল সমুদ্রসম। ব্যবসা-বাণিজ্য করে যা আয় করতেন তাই দান করতেন। কর্মীরা তাকে দয়ার সাগর মনে করতেন। আওরঙ্গ মানুষকে ভালোবাসতেন, মানুষের ভালোবাসাও পেতেন। ছোট-বড় সবাইকে কাছে টানতে পারতেন।

মৃত্যু:
২০১৩ সালের ৩ আগষ্ট শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের খান বাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনায় সাবেক সাংসদ আওরঙ্গসহ অন্তত ১১ জন নিহত হন। মরহুম কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব এক পুত্র সন্তান, স্ত্রী ৩ ভাই ও ৩ বোন সহ বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *