দিন শেষে রাজনীতি’টা চলেই আসে

Slider বিচিত্র

213600_bangladesh_pratidin_aminul_mmmm

গতকাল সুইজারল্যান্ডের খেলা দেখার পর ভাবছিলাম- ওদের যেই দুই খেলোয়াড় গোল করেছে, ওরা হাত দুটো এমন ক্রস করে উদযাপন করছে কেন! এরপর ওয়াশিংটন পোস্টের খবর পড়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। সুইজারল্যান্ড দেশটা সম্পর্কে বরং কিছু বলা যাক।

সুইস বলে কিন্তু কোন জাতি নেই এবং ওদের নিজস্ব কোন ভাষাও নেই। দেশটি নানান জাতি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। মূলত জার্মান, ফ্রেঞ্চ,পর্তুগীজ আর ইতালিয়ান’সহ নানান রকমের ইমিগ্রেন্টদের নিয়েই সুইজারল্যান্ড একটি দেশ। দেশটির সরকারি ভাষাও জার্মান, ফ্রেঞ্চ আর ইতালিয়ান। সেই সঙ্গে মোটামুটি সবাই ইংরেজি বলতে পারে। সেখানে গিয়ে আমি অন্তত যাদের সঙ্গেই রাস্তা-ঘাটে কথা বলেছি, সবাই বেশ ভালো ইংরেজি বলে।

তো গতকাল সুইজারল্যান্ডের যেই দুই খেলোয়াড় গোল করেছে, তারা মূলত জাতিগত ভাবে আলবেনিয়ান। এই দুই খেলোয়াড়ের বাবা-মা’কে বলকান যুদ্ধের সময় নিজেদের দেশ আলবেনিয়া ছেড়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সুইজারল্যান্ডে।

আর ওই বলকান যুদ্ধে শক্তিশালী সার্বিয়ান সেনাবাহিনী নিরীহ আলেবনিয়দের নির্বিচারে হত্যা করেছে।

কাল সেই সার্বিয়ার সাথেই খেলা ছিল সুইজারল্যান্ডের।
মজার বিষয় হচ্ছে-দুই আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত সুইস খেলোয়াড়’ই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গোল করেছে। আর গতকালই এই বিশ্বকাপে প্রথম কোন দল ‘এক-শূন্য’ গলে পিছিয়ে থেকেও ‘দুই-এক’ গোলে জিতেছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে- ওই দুই খেলোয়াড় গোল করার পর একই রকম ভাবে দুই হাত ক্রস করে আঙ্গুল গুলোকে পাখির মতো করে বাঁকাচ্ছিল। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম- এটা হয়ত সুইসদের উদযাপনের ধরন।

এরপর ওয়াশিংটন পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম-আলবেনিয়ানদের প্রতীক হচ্ছে ঈগল পাখি। ওদের পতাকায়ও ঈগল পাখির সিম্বল আছে। আর গোল করার পর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সার্বিয়ানদের ওই দুই আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত সুইস খেলোয়াড় বুঝাতে চাইছিল- তোমরা আমাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে, কিন্তু আমরা এখনো মাথা তুলে বেঁচে আছি। শুধু তাই না ঈগল পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছি বিশ্ব মঞ্চে।

আসলে আমরা যত’ই বলি খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশানো ঠিক না, কিন্তু দিন শেষে রাজনীতি’টা চলেই আসে। আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে, আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়’রা কোন এক বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়ে নাগিন ড্যান্স না; বরং খুব ভদ্র এবং বিনীতভাবে দাঁতগুলো বের করে এবং হাতগুলো মাথার সামনে এনে সবাই মিলে ঠিক যেভাবে বাঘের গর্জন ‘হালুম’ আমরা দেখাই, সেভাবে কিছু একটা দেখিয়ে দিক!

যার মাধ্যমে আমরাও পৃথিবীকে জানান দিতে পারবো- ৩০ লাখ মানুষ মেরে ফেলে ওরা আমাদের ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। শুধু মাথা তুলেই দাঁড়াই’নি, প্রায় প্রতিটি সেক্টরে পাকিস্তানের চাইতে ভালো করছি। অথচ ৩০ লাখ মানুষ হত্যার জন্য পাকিস্তন আজও ক্ষমা চায়নি।

আমি জানি খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতি মেশানো খুব একটা ভালো কিছু না। এই লেখার সময় আমি বেশ কয়েকবার ব্যাপারটা ভেবেছি। এরপর মনে হলো আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত সুইস ওই দুই খেলোয়াড় যদি ওভাবে ঈগলের মতো হাত বাকিয়ে উদযাপন না করত, তাহলে হয়ত আমার মতো পৃথিবীর অনেক মানুষ জানতেই পারত না-সার্বিয়ানরা কি নির্মম ভাবেই না আলবেনীয়দের হত্যা করেছে।

আপনাদের জানিয়ে রাখি, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মানুষ এখনো জানে না, কতো বড় গণহত্যা পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের উপর করেছে মাত্র ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে! এর মাধ্যমে অন্তত বিশ্ব’কে যদি জানান দেয়া যায়, এই বা কম কিসের!

(ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *