সিলেটে ঈদের আনন্দের বদলে ঘরে ঘরে চলছে আহাজারি

Slider সিলেট

IMG_20180615_153746

সিলেট প্রতিনিধি :: আজ সন্ধ্যায় চাদঁ দেখা গেলেই কাল ঈদ-উর ফিতর। যেখানে ঈদের আনন্দ উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা সিলেট বাসীর সেখানে বন্যার মোকাবেলা করতে তাদের।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা গেলেই শনিবার পালিত হবে ঈদ উল ফিতর। কিন্তু সিলেট বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেই ঈদ আনন্দ ভেসে যেতে বসেছে বন্যায়।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ঘর-বাড়ি ও ফসল। ফসল নষ্ট হওয়ায় খাদ্য সংকটে ভূগছেন অনেকেই। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা বানভাসি মানুষ।

ঈদের আনন্দ যেনো তাদের হতাশায় পরিণত হয়েছে। অনেক উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করার জায়গাও নেই অনেক এলাকায়।

বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটে নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন করে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলা, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলা, সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল অঞ্চল এবং হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন রয়েছে বিভিন্ন উপজেলার।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১ দশমিক ৯৮ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবাহ ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা রাস্তা ঘাট পানির নিচে রয়েছে।

কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার শেরপুর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারিঘাট থেকে গোয়াইনঘাট রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে ১০.৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে যা বিপদসীমা মাত্রার ৪০ সেন্টিমিটার বেশি।

মৌলভীবাজার থেকে দিদার আহমদ জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙ্গণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার ৫ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ৬টি ভাঙনের পর আরও নতুন করে আরও ২টি ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

সুনামগঞ্জ থেকে ইদু মিয়া জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্যাম্পেরঘাট, বোগলা, আন্দাইরগাও, বালিছড়া, ‌সোনাচরা, তেরাকুরি, রামনগর গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩০০ একর আউশ ফসল বন্যার পানিতে তলিয়েগেছে।

বন্যায় ধান, বিভিন্ন ফসলাদি, পুকুরের মাছ, থাকার ঘর-বাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে তাঁদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বন্যার্তরা। ঈদের এই সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় অন্যত্র যেতে দেখা যায় এইসব এলাকার মানুষদের। ঈদের আনন্দের চেয়ে তাদের জীবন রক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন চালানোই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সিলেটের আকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *