গাজীপুর বিআরটিএ: প্রতারণার মরণ ফাঁদ দালালদের ইংরেজী ভিজিটিং কার্ড

জাতীয় টপ নিউজ

gbrta-2

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

গাজীপুর অফিস: অদক্ষ চালক সড়ক দূর্ঘটনার প্রধান কারণ চিহিৃত হলেও অব্যবস্থাপনা রোধে নেই কোন পদক্ষেপ। যোগাযোগ মন্ত্রী ফাটা কেষ্টোর ভূমিকা পালন করলেও নেই তেমন কোন অগ্রগতি। দালালরা ভিজিটং কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন ভোক্তভোগীদের সঙ্গে তাও আবার ইংরেজী ভাষায় ছাপানো। ওই ভাবে অভিজাত প্রক্রিয়ায় আদায় করছেন নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত ১৫গুন টাকা।

সরেজমিন গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে অদ্ভূদ কান্ড দেখা গেছে। নির্ধারিত ফি’র প্রায় ১৫গুন টাকা আদায় করা হচ্ছে তাও আবার প্রকাশ্য দিবালোকে এমনকি রাতেও। তবে কষ্টকর ঘটনা হল, যারা ঘুষ নিচ্ছেন তাদের অনেকেই সরকারী লোকই নন। বন্ধের দিন সহ রাত ১১টা পর্যন্ত অফিস খোলা রেখে ভোক্তভোগীদের ভিকটিম করে আদায় করা হচ্ছে বড় অংকের টাকা। সরকারী কর্মকর্তার আবরণে যে সকল দালাল প্রতারণা করছেন তারা আবার ভিজিটিং কার্ডও বিতরণ করছেন তাও ইংরেজী ভাষায়।

গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়টি ভাওয়াল রাজার রাজবাড়িতে অবস্থিত। রাজবাড়ির দোতলায় বিআরটিএ অফিস। নীচ তলায় জেলা তথ্য অফিস ও কোর্ট পুলিশের হাজত খানা।

বৃহসপতিবার ও রোববার সরেজমিন গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিস খোলা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদভারে গভীর রাত পর্যন্ত মুখরিত গাজীপুর বিআরটিএ নামক সরকারী অফিস। অফিসের ভেতরে অসংখ্য চেয়ারে বসা কর্তাব্যাক্তিদের আচরণ দেখে বুঝা যায় সকলেই বড় কর্তা। তবে বড় কর্তার চেয়ারে দালালরাও মাঝে মধ্যে বসে পড়েন যা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়েছে।

বিআরটিএ অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল একটি চেয়ারে বসে আছেন ৪০/৪৫ বছর বয়সী একজন মানুষ। একবার চেয়ারে বসছেন আবার বাইরেও যাচ্ছেন। বিশাল ব্যস্ত ও চরম অস্থিরতার মধ্যে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। অফিসের ভেতরে ও বাইরে মক্কেলদের সঙ্গে কথা বলছেন। টাকাও নিচ্ছেন প্রকাশ্যেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই কর্তা ব্যাক্তির নাম শাহীন হোসেন মোল্লা। তিনি গাজীপুর বিআরটিএ এর বড় কর্তা বলে শুনা গেলেও জানা গেল তিনি দালাল। ইংরেজী ভাষায় তার ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে, মোহাম্মদ শাহীন হোসেন মোল্লাহ। পদবী ইনষ্ট্রাক্টর। ড্রাইভিং ইনষ্ট্রাক্টর লাইসেন্স নং ৬৭/২০১২।

gbrta-3

অনুসন্ধানে জানা গেল, শাহীনের অধীন আরো দালাল রয়েছেন প্রায় এক ডজন। এর মধ্যে আব্দুস সালাম, জামাল উদ্দিন, জামান মিয়া, মোক্তার হোসেন ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসারের গাড়ি চালক আইনুল হক এর নাম জানা গেছে। তবে সরকারী এই গাড়ি চালক আইনুল হক ১০হাজার টাকার বিনিময়ে কোন পরীক্ষা দেয়া ছাড়াই চালকের পেশাদার লাইসেন্স দিতে সক্ষম।

ভোক্তভোগীদের দেয়া তথ্যমতে, চালকদের অপেশাদার লাইসেন্স করতে দালালরা নিচ্ছেন ৩৮৫ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। পেশাদার লাইসেন্স বাবদ আদায় করছেন ১ হাজার ৪’শ ৯৫ টাকার পরিবর্তে ৮হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শিক্ষানবীশ দুই মাস অতিবাহিত করিয়ে ভারী লাইন্সে বা পেশাদার লাইসেন্স করতে সরাসরি ১ হাজার ৮’শ ৪০ টাকার পরিবর্তে নিচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এই ক্ষেত্রে নামে মাত্র পরীক্ষার শর্ত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা না হলেও চলে যায়।

জানা গেল, ছোট গাড়ির (যেমন হোন্ডা, প্রাইভেটকার ইত্যাদি) বাৎসরিক নবায়ন ও ফিটনেস সনদপত্র বাবদ ৯৫০ টাকা। আদায় হচ্ছে ১৫/১৬ হাজার টাকা। ভারী যানবাহনের (ট্রাক, বাস) বাৎসরিক নবায়ন ফি ১হাজার ৫’শ টাকা হলেও আদায় হচ্ছে যার কাছ থেকে যা নেয়া যায় ওই হারে। তবে অংকটি ১৫গুনেরও বেশী।

সরকারী সূত্র জানায়, গাজীপুর বিআরটিএ এর প্রধান দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা(এডি) সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী মাসুদ আলম গাজীপুরে যোগদান করেছেন চলতি বছরের ২০মে। মোটরযান পরিদর্শক মোঃ আতিয়ার হোসেন যোগদান করেন একই বছর ১২জুন। আরেক পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামের যোগদানের তারিখ চলতি বছরের ৫জুলাই। অফিসের রেকর্ডপত্র সংরক্ষন ও ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন উচ্চমান সহকারী আলমাছ মিয়া। তাদের সঙ্গে রয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। তার পদবী স্প্রিড গভর্নর সিল মেকানিক।

gbrta-1visiting card dalal shain

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সংঘবদ্ধ দালাল চক্র গাজীপুর বিআরটিএকে জিম্মি করে রেখেছেন। কোন ভূক্তভোগী অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে তাকে অপমান করে বের করে দেয়া হয়। আবার বেশী টাকা দিয়েও যথাসময়ে কাজ না পেয়ে উচ্চ বাচ্য করলে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকিও দেয়া হয়। এই ভাবে দালালদের সরদার শাহীন মোল্লা প্রতিমাসে ৪/৫ লাখ টাকা উপার্জন করছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

সূত্র বলছে, প্রতিদিন শতাধিক ব্যাক্তি নতুন করে গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রতিকার না পেয়ে তারা নীরবে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন প্রতারকদের ফাঁদে। ভূক্তভোগীরা বলছেন এ যেন মরণ ফাঁদ।

একটি গোপন সূত্র জানান, কতিপয় হলুদ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের ছত্রছায়ায় ও প্রত্যক্ষ মদদে গাজীপুর বিআরটিএ প্রতিনিয়ত ভোক্তভোগীদের প্রতারিত করছেন। সরকারী অব্যবস্থপনা ও আই ওয়াশ প্রক্রিয়ার কারণে তারা জানেন না কখন বন্ধ হবে ওই মরণ ফাঁদ।

এ সকল বিষয়ে গাজীপুর বিআরটিএ’র কোন কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি। তবে স্প্রিড গভর্নর সিল মেকানিক পদবীর কর্তাব্যাক্তি জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *