পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রায়ই খবর আসে চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্ম চর্চা করতে দেওয়া হয় না। এমন দু’য়েকটি খবর চোখ এড়ায়নি। গত মাসে শিনজিয়াঙের উরুমচির ৬৬ সেকেন্ডারি স্কুল পরিদর্শনের সময় এ নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে আর ছাড়িনি। পশ্চিমা গণমাধ্যমের ওই খবরগুলোর বিষয়ে জানতে চাই। আমার প্রশ্ন ছিল, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের একজন উত্তর দেন, চীনা স্কুলগুলোতে ধর্ম নিয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই। নিয়ম সবার জন্যই সমান। স্কুলগুলোতে কোনো ধর্ম চর্চা হয় না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, তাদের শিক্ষার্থীরা এখনও শিশু। তাই তারা স্কুলে ধর্ম নিয়ে কোনো কথাই বলেন না। শিক্ষার্থীরাও বলে না। এই শিক্ষার্থীরা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তখন তারাই ধর্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্কুলগুলোতে বিশেষ কোনো ধর্মের অনুসারীদের জন্য নয়, সবার জন্যই এই নিয়ম প্রযোজ্য। তারা বড় হয়ে তাদের পছন্দ মতো ধর্ম চর্চা করতে পারে এ নিয়ে চীনে কোনো বাধা নেই।
ওই স্কুলটির শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিনজিয়ানের প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে বাছাই করে আনা হয়।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পুরোপুরি আবাসিক ওই স্কুলটিতে ছেলে-মেয়েরা একই সঙ্গে বছরে প্রায় ৩০০ দিন লেখাপড়া করে।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না তাদের পরিবারগুলোকে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০% মেয়ে। ছুটির সময়ে তারা সবাই পরিবারের কাছে যায়। ছুটি শেষে আবার পাঠ কার্যক্রমে ফিরে আসে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সফররত বিদেশি সাংবাদিকদের মতবিনিময়েরও সুযোগ ছিল। চীনারা ইংরেজি ভাষা নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়-এমন ভাবনা যাদের আছে তাদের ভাবনা পুরোপুরি বদলে যাবে ওই স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে।
শুরুতে মনে হয়েছিল, বাছাই করা শিক্ষার্থীদের আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এ ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের একেক জনকে নিয়ে তাদের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখায়।
শিক্ষার্থীদের যখন স্কুল সম্পর্কে বলতে বলা হয়েছিল তখন রীতিমতো যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল তাদের মধ্যে। সবাই বলতে চায়। মুখস্ত করা বক্তব্য নয়। সাবলীলভাবে অনর্গল ইংরেজি বলছিল ক্ষুদে ওই চীনা শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন অঞ্চলের, গোত্রের।
কিন্তু বক্তৃতার ভাষাগুলো ছিল প্রায় অভিন্ন। তারা তাদের মাতৃভূমি চীনের কাছে কৃতজ্ঞ। বড় হয়ে তারা দেশের জন্য কাজ করতে চায়। স্কুল ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার সময় ক্ষুদে চীনা শিক্ষার্থীরা কেবল তাদের চোখে স্কুল ও চীনকে তুলে ধরার পাশাপাশি জানতে চেয়েছে সফররত সাংবাদিকদের দেশগুলো সম্পর্কেও।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, স্কুলের শিক্ষার্থীদের সবসময় প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা হয়। চেষ্টা করা হয়, তাদের যাতে কোনো জড়তা, সংকীর্ণতা না থাকে।