মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত ছড়িয়েছে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

b6938dd0a5992a703093bfe6a50a91e7-59db105467c48

ঢাকা: বঙ্গোপসাগর থেকে উপকূল পেরিয়ে চলে এসেছে মৌসুমি বায়ু। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের পূর্ব অংশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এর ফলে খাতা-কলমের হিসাবে শুরু হয়ে গেছে বর্ষাকাল। ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মৌসুমি বায়ু চলে এসেছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, গত বছরের ১৫ জুন এ দেশে মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটে। এ বছর নির্দিষ্ট সময়েই মৌসুমি বায়ু চলে এসেছে। তবে আপাতত কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ কথা জানিয়ে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর ফলে বর্ষার আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে। ঢাকার কিছু অংশে এর প্রভাবে বৃষ্টি হবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সারা দেশেই মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটবে। মে মাসে যেভাবে বৃষ্টি হয়েছে, আপাতত জুনের প্রথম সপ্তাহে এভাবেই বৃষ্টি হবে। এরপর বৃষ্টির মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত। একটি আরব সাগরপ্রবাহ, দ্বিতীয়টি হলো বঙ্গোপসাগরপ্রবাহ। আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহটি ভারতের কেন্দ্রভূমি এবং ভারতীয় উপদ্বীপের আবহাওয়ার প্রকৃতির ওপর তুলনামূলক বেশি প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহটি বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল, হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণাংশের পাহাড়ি ঢাল ও পাদদেশীয় অঞ্চলের আবহাওয়ার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বহন করে আনে। এই বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়।

যদিও বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস মিলিয়ে বর্ষাকাল। সেই হিসাবে ১ আষাঢ় শুরু হয় জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে। আর শ্রাবণ বিদায় নেয় মধ্য আগস্টে।

কিন্তু আমাদের দেশে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের কাছে বর্ষাকালের সময় হিসাবটা দ্বিগুণ। ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী, তাঁদের কাছে বর্ষাকাল শুরু হয় ১ জুন, শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এই চার মাসে বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের শতকরা ৭১ ভাগ বৃষ্টি হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ুর চার মাস অবস্থানের সময় বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। ১৯৭০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের হিসাব করে এমন তথ্য পেয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। জুলাই মাসে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ৫২৩ মিলিমিটার। এটিকে স্বাভাবিক বৃষ্টি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এরপর আসে জুন মাস। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির মাত্রা ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। আগস্টে ৪২০ দশমিক ৪ ও সেপ্টেম্বর মাসে ৩১৮ দশমিক ২ মিলিমিটার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট মৌসুমি বায়ু উত্তর-পূর্ব দিকে গিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের টেকনাফের পাহাড়ি অঞ্চলে বাধা পায়। বাধা পেয়ে এটি পুবালি বাতাস হয়। এরপর উত্তর দিকে এগিয়ে যায়। যেদিন এই বায়ু বাংলাদেশের ওপর আবির্ভাব হয়, সেদিন থেকেই বর্ষাকাল শুরু হয়। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূল ছুঁয়ে ফেলে সাধারণত ১ জুন। মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের জলরাশি থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বয়ে নিয়ে আসে, যা থেকে মেঘমালার সৃষ্টি হয়। এই মেঘমালার কারণে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার ওপর এই বৃষ্টিপাত নির্ভর করে থাকে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে টানা এক থেকে তিন দিন, কখনো কখনো টানা পাঁচ দিন থেকে সাত দিনও বৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *