ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা এবং বাম হাতটা অবিরাম ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুই পা ক্রমাগত ব্যথা হচ্ছে এবং সেগুলো ভারি ও ফুলে উঠছে।
আজ বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের জন্য নিকট-আত্মীয়রা পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়েছিলেন। স্যাঁত-স্যাঁতে, জরাজীর্ণ ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকলে যা হয় এখন সেই রকমই অবাসযোগ্য ও নানা অসুখ-বিসুখ আক্রমনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাস করার কক্ষটি। অসংখ্য পোকামাকড়ে আর্কীণ কক্ষটি বাসকরা যেন নরকবাস। তাঁর শরীরে পোকামাকড়ের দংশণে তিনি আরো বেশি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা এবং বাম হাতটা অবিরাম ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে উঠেছে। দুইপা ক্রমাগত ব্যথা হচ্ছে এবং সেগুলো ভারি ও ফুলে উঠছে। মাত্র কিছুদিন আগে চোখে অস্ত্র-পচার হওয়ার কারণে দুই চোখই সারাক্ষণ জ্বালাপোড়া করতে থাকে। এর সঙ্গে বহুপ্রাচীন দেওয়ালগুলো থেকে ঝরেপড়া সিমেন্ট ও বালি চোখদুটোর অবস্থা আরো গুরুতর অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যথায় চোখ দুটো সবসময় লাল হয়ে থাকে। রুমটি ভেজা-ভেজা ও অস্বাস্থ্যকর ধূলাকীর্ণ থাকার কারণে তাঁর প্রচন্ড কাঁশি প্রতিদিন বেড়েই চলছে। অথচ বারবার দাবি করা সত্ত্বেও তাঁকে সু-চিকিৎসার বন্দোবস্ত না করা সম্পর্কে আমরা যে কথাগুলো বলেছি অর্থাৎ দেশনেত্রীকে দূঃসহ জীবনযাপনে বাধ্য করে তিলেতিলে বিপন্ন করে তোলাই সরকারের মূখ্য উদ্দেশ্য সেটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের নির্দেশিত চিকিৎসকদেরও পরামর্শ জেল কর্তৃপক্ষ কানে তোলেননি কারণ কর্তৃপক্ষের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সরকারী হুংকার। এই কারণে এখন পর্যন্ত তাঁকে অর্থপেডিক্স বেড দেয়া হয়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালে এম-আর-আই পরীক্ষা ইত্যাদি অগ্রাহ্য করেছে কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, সারাদেশ অনাচারে ভরে গেছে ক্ষমতাসীন দলের দৌরাত্ম। অবৈধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত বল্গাহীন লুটপাট আর রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা। ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকার দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত হওয়ার কারণেই নিজেরাই বেআইনী অপরাধ করতে কুন্ঠিত হচ্ছে না। দেশব্যপী মাদক নির্মুলের অভিযানে মানুষ হত্যার আতিশয্যে এক বিকারগ্রস্থ পন্থা চারদিকে দৃশ্যমান হচ্ছে। গত ৯ দিনে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৩ জন। নিহত ব্যক্তিদের মাদক ব্যবসায়ী বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে প্রকৃত বড় বড় মাদক ডিলাররা অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বাড়িতে তারা দেখা সাক্ষাত করছে। চারদিকে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে, সরকারের এই মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে। সন্দেহভাজনদেরও হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু যত বড় অপরাধী হোক তাকে বিচারবর্হিভূত হত্যার সুযোগ নেই। আমি গতকালও বলেছিলাম এই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মানুষ হত্যার উৎসবে এরা বেছে বেছে সরকারবিরেধী নির্দোষ তরুনদেরও অপরাধী সাজিয়ে হত্যা করবে। তার দৃষ্টান্ত আমরা গতকাল তুলে ধরেছি ক্রসফায়ারে নিহত নেত্রকোনার ছাত্রদল নেতা আমজাদ হোসেনের ঘটনায়। বিচারবর্হিভূত ভাবে নির্বিচারে বন্দুক-যুদ্ধে মানুষ হত্যায় পৃথিবীর কোথাও সামাজিক অপরাধ দমন করা যায়নি। রাষ্ট্র যদি নানা অপরাধের পৃষ্ঠপোষক হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের যদি বৈধসত্বা না থাকে, তাহলে তাদের দ্বারা সৃষ্ট বে-আইনী কর্মকান্ড বিভৎস্যরূপে আত্মপ্রকাশ করবেই। ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ , সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।