‘প্রজ্ঞাপন জারি হলে কুকুরের মতো গুলি করে মারবো’

Slider রাজনীতি

319085_149

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরষিদের নেতা নুরুল হক ও রাশেদ খাঁনকে ছাত্রলীগ গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির নেতারা এই হুমকি দেন বলে আন্দোলকারী নেতারা গণমাধ্যমকে জানান। এ সময় কুপিয়েও হত্যার করারও হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে, ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকির প্রতিবাদে বুধবার বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা। এ সময় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা। পাশাপাশি সরকার ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিরাপত্তার দাবি জানান তারা। হত্যার হুমকির বিষয়ে শাহবাগ থানায় জিডি করলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে তা নেয়ার বিষয়ে সময় চাওয়া হয়।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, রাত দেড়টার দিকে মুহসীন হলে নুরুল হকের ১১৯ নং কক্ষে আসেন সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি, মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম লিমন এর নেতৃত্বে আরো ১৫-২০ জন। এই সময় নুরুল হকের রুমে ছিল আন্দোলনের আরেক যুগ্ন আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন। ঘটনাস্থলে হাফ-প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় আসেন বাপ্পি। এ সময় তার পকেটে পিস্তল দেখা যায়।

সূত্র জানায়, কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন- ‘তোরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিস। তোদের একটাকেও ছাড়া হবেনা। প্রজ্ঞাপনটা জারি হলে কুকুরের মতো গুলি করে রাস্তায় মারবো’। তোরা তো কেউ বাচঁবিনা। বেশি বাড়াবাড়ি করিসনা। শেষবারের মতো মা বাবার দোয়া নিয়ে নিস’। এই সময় সানী এবং লিমন তাদের উপর হামলা করার জন্য বারবার তেড়ে আসেন। কিন্তু অন্যরা তাদের নিবৃত্ত করে।

এ বিষয়ে নুরুল হক বলেন, ‘আমি এবং রাশেদ দু’জনে রুমে ছিলাম। এর মধ্যে চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সেক্রেটারী লিমন ফোন দিয়ে থ্রেট দেয় যে আমাকে হল থেকে পিটিয়ে নামিয়ে দিবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি’। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি ফোন নিয়ে বলেন ‘ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মারছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ড ও লাগেনা। তোগোরে গুলি কইরা মারিনাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল। তা না হলে তোদের মতো কুলাঙ্গারদের রাখতামনা এই দেশে’। এর ১০ মিনিট পরে রুমে পিস্তল নিয়ে এসে বলে ‘তোরা মা-বাবার কাছে দোয়া নিয়ে নে। তোরা বাচঁবিনা। তোদের গুলি করে মারবো’। তারা রুমে এসে আমাদের মোবাইল নিয়ে যায়, যাতে রেকর্ড করতে না পারি। আমরা এখন জীবন নাশের হুমকিতে আছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমার এক ছোট ভাইয়ের সাথে বাকবিতন্ডা হয়েছে। মেহেদী হাসান সানী বলেন, তাদের কিছু করা হয়নি। তারা একটা ইস্যু বানাতে চাচ্ছে। ঘটনার বিষয়ে একাধিকবার ফোন দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন কল ধরেননি। জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমাকে কেও অফিসিয়ালি অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে দেখবো।

হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা দাবি
এদিকে, কোটা আন্দোলনের দুই নেতাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে কোটা আন্দোলনকারীরা। সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে স্লোগানের মাধ্যমে মিছিল শুরু হয়। এ সময় শাহাবাগের গণগ্রন্থাগার থেকে তিনশতাধিক শিক্ষার্থীর একটি মিছিল এসে বিক্ষোভে যোগ দেয়। মিছিল থেকে তারা ‘সন্ত্রসীদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘হুমকি দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা’, ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ইত্যাদি স্লোগান দেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষদ, ইন্সটিটিউটসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

পরে টিএসসি’র রাজু ভাস্কর্যে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা হুমকিদাতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। পাশপাশি নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ আবেদন জানান। পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা হত্যার হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার করে তাদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান।
এ সময় নুরুল হক বলেন, তারা হত্যার উদ্দেশ্যে আমার রুমে যায়। কিন্তু সাংবাদিকরা উপস্থিত হওয়ায় তারা সেটি পারে নি। হুমকি দিয়ে চলে যায়। এসময় তিন গত ৮ ও ৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রসীরা মহড়া দিলেও এর কোন বিচার প্রশাসন করে নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘সরকারের ইমেজকে নষ্ট করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল এসব (হত্যার হুমকি) কাজ করেছে। হুমকিদাতারা কোটাধারী। তারা চায় না কোটার যৌক্তিক সংস্কার হোক।’ এছাড়া তিনি সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে বাস্তবায়নের দাবি জানান।

জিডি নেয়নি পুলিশ
এদিকে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দুপুর ২টার দিকে শাহবাগ থানায় জিডি করতে যান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতারা। থানায় পৌঁছালে শাহবাগ থানা পুলিশ ওসি আবুল হাসান তাদের একটি কপি দিয়ে জিডি করতে বলেন। একপর্যায়ে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী চার নেতা এবং সাধারণ আন্দোলনকারীর নিরাপত্তার জন্য মোট ৫টি জিডি কপি পূরণ করেন। কপি পূরণ করার পর শাহবাগ থানা ওসির কাছে জমা দিতে চাইলে থানার ওসি সেটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, এই জিডিতে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি সংগঠনের নাম এসেছে। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছে। সব মিলিয়ে আমাদের এটা গ্রহণ করতে সময় লাগবে।

এদিকে, আন্দোলনকারীদের হত্যার হুমকির বিষয়টি জানিয়ে করা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ না করায় দেশের নাগরিক হিসেবে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ প্রেক্ষিতে বিকেল ৪টায় দ্বিতীয়বারের মতো সংবাদ সম্মেলন করে তারা। তারা অভিযোগ করেন যে পুলিশ জিডি গ্রহণ না করে সন্ত্রাসীদের হামলার সুযোগ করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থা ব্যক্ত করে নূর বলেন, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেয়াটা পুলিশ বাহিনীর জন্য লজ্জ্বাকর। আমরা পুলিশের কাছে এটি আশা করি না। জিডি না নিয়ে পুলিশ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমাদের নিরাপত্তা জিডি না নিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলা করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের আচরণ ছাত্র সমাজ ভালোভাবে নিবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নিজেদের কর্মসূচী সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের শুরু থেকে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে। আমাদের কর্মসূচী চলমান রয়েছে। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমাদেরকে যারা হত্যার হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় কোটা আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *