কালবৈশাখী আর বজ্রপাত বেড়েছে। গত দুদিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শিলাসহ বজ্রপাতের ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে কালবৈশাখি ঝড়সহ ভারী বৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী, চাপাইনবাবগন্জ, নওগাঁ, দিনাজপুরের বিরামপুর, ফুলবাড়ি, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, ও সিলেট জেলার প্রায় সম্পুর্ণ অঞ্চলে ঝড় ও বজ্রপাত হতে পারে।
কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত বাংলাদেশের আকাশের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে আজ সোমবার দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় বিশেষ করে দিনাজপুর (বিশেষ করে ফুলবাড়ি ও বিরামপুর উপজেলা), নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, জামালপুর, ও সিলেট জেলায় বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও রংপুর জেলায় দুপুরের মধ্য হতে পারে; ও কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, জামালপুর, ও সিলেট জেলায় দুপুর থেকে সন্ধ্যার পূর্বে হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বাতাস উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে বাতাসের গতিবেগ যদিও ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার তবে সকালে সূর্য উদয়ের পরে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকবে ও ঝড়ের সময় ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
বরিশাল, নোয়াখালী, ফেনি জেলায় বিকেল থেকে সন্ধ্যার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
বজ্রপাত ও ঝড়ে ১৮ জন নিহত : আহত ২৬
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে গতকাল ১৮ জন নিহত ও ২৬ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে পিতা-পুত্রসহ ৫ জন, মাগুরায় ২ জন, গাজীপুরে ৩ জন, নোয়াখালীতে ২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ১ জন, নওগাঁয় ২ জন, রাঙ্গামাটিতে ১ জন ও গোপালগঞ্জে ১ জন, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া মাগুরায় বিদ্যুতের পিলারে উঠে কাজ করার সময় ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে গিয়ে একজন নিহত হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর সংবাদদাতা জানান, জেলার কাজিপুর, শাহজাদপুর ও কামারখন্দ উপজেলায় বজ্রপাতে পিতা-পুত্র ও কলেজ ছাত্রসহ পাঁচজন নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
কাজিপুর উপজেলার যমুনা নদী বেষ্টিত তেকানী চরে বজ্রপাতে পিতা ও পুত্র নিহত হয়েছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, তেকানী চরে সকালে সামছুল হক (৫০) ও তার ছেলে আরফান (১৪) বাদাম ক্ষেতে কাজ করতে যান। সকাল সাড়ে ৯টায় হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
শাহজাদপুর উপজেলার ছয়আনা গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুকের ছেলে নাবিল খান (১৭) ও রাশিদুল হাসানের ছেলে পলিং (১৭) ঝড়োবৃষ্টির সময় উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তাদের শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয়রা তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপর দিকে একই উপজেলার বাজার অঞ্চলে বজ্রপাতে রিয়াজ হোসেন (১৮) ও সাব্বির আহত হয়েছেন।
কামারখন্দ উপজেলার পুস্কুরিকুড়া গ্রামে সকাল সাড়ে ১০টায় ধান কাটার সময় বজ্রপাতে কাদের হোসেন (৩৭) নামে এক কৃষক নিহত হন। তিনি উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের পুস্তককুড়া গ্রামের মৃত আহের মণ্ডলের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, রোববার সকালে কৃষক কাদের হোসেন বাড়ির পাশে ধান কাটতে মাঠে যান। সকাল সাড়ে ১০টায় বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মাগুরা সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় বজ্রপাতে পৃথক স্থানে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঝড়ো আবহাওয়ায় বিদ্যুতের পিলার থেকে পড়ে আরো একজন নিহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, রোববার বেলা ১টার দিকে মাগুরা সদর উপজেলায় আমুড়িয়া গ্রামে কৃষিজমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে রশিদ মোল্যার ছেলে আলম মোল্যা নিহত হন। একই সময় সদর আঠারোখাদায় বজ্রপাতে শামীম নামে এক ভ্যানচালক নিহত হন। তিনি শ্রীপুর উপজেলার জোকা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে। এ ছাড়া সদরের কুচিয়ামোড়া গ্রামে বিদ্যুতের পিলারে ওঠে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আলতাফ হোসেনের ছেলে মেহেদী নিহত হন।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় রোববার বজ্রপাতে এক পোশাকশ্রমিক নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহত জাফিরুল ইসলাম (২৮) গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ উপজেলার হরিনাথপুর এলাকার আব্বাস আলীর ছেলে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাটিকাটা এলাকার ইনক্রেডিবল এ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা ফ্যাক্টরি ভবনে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ৭টায় বজ্রপাত হলে ১১ শ্রমিক আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে শেখ ফজিলাতুন নেছা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টায় জাফিরুল মারা যান। নিহতের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়। কারখানাটি একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নোয়াখালী ও সেনবাগ সংবাদদাতা জানান, বজ্রপাতে নোয়াখালী পৌর এলাকায় ও জেলার সেনবাগ উপজেলায় দু’জন নিহত হয়েছেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে বজ্রপাতে জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর দিবা ক-শাখার ছাত্র ইকবাল হাসনাত পিয়াল মারা যায়। সে ওই গ্রামের সোহেল রানার বড় ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পিয়াল ও তার কয়েকজন সহপাঠী তাদের বাড়ির পাশে মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে তারা দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। পরে পিয়াল মাঠে ফেলে আসা তার জুতা আনতে গেলে বজ্রপাতে মারা যায়।
এ দিকে জেলার সেনবাগ উপজেলায় বজ্রপাতে শাহীন (২৬) নামে এক ধানকাটা শ্রমিক নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। রোববার দুপুর ১২টায় উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহীন ভোলা জেলার তজমুদ্দিন উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মো: রজন মিয়ার ছেলে। আহতরা হলেন শাহীনের চাচা মনির হোসেন (৫৫) ও চাচতো ভাই আব্বাস (২৫)। তারা সেনবাগের ইসমাইলের ধানকাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়েন।
নবীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিন উল্ল্যা বিএসসি জানান, নিহতের লাশ ওই ওয়ার্ডের মেম্বার ইকবালসহ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, জেলার দুই উপজেলায় বজ্রপাতে এক নারীসহ দু’জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। সাপাহার উপজেলায় বজ্রপাতে সোনাভান (২২) নামে এক নারী নিহত এবং তার স্বামীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। দুপুরে উপজেলার রামাশ্রম গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অন্য দিকে পোরশা উপজেলায় বজ্রপাতে মুক্তার হোসেন (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আব্দুর রহিম (৪৫) নামে এক শ্রমিক নিহত ও তিন জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুর রহিম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার জাম্বরু গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, সকালে দরুইন গ্রামের তাজুল ইসলামের জমিতে অন্য শ্রমিকদের সাথে আব্দুর রহিম ধান কাটতে যান। এ সময় বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হলে আব্দুর রহিমের শরীর ঝলসে যায়। তাকে আখাউড়া হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় আনে। এ দিকে আইনমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি আনিসুল হক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিহত আব্দুর রহিমের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেন।
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মানছুরা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। দুপুরে উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মানছুরা ওই এলাকার অছির আহম্মেদের স্ত্রী।
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার পীড়ার বাড়ি গ্রামে গতকাল বিকেলে বজ্রপাতে অশোক পাণ্ডে (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি পীড়ার বাড়ি গ্রামের জ্ঞানেন্দ্রনাথ পাণ্ডের ছেলে।
গাজীপুর সংবাদদাতা আরো জানান, জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় ঝড়োবৃষ্টির মধ্যে ঘরের দেয়াল চাপায় সুরবালা মালো (৬০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় এক দম্পতি ও তাদের শিশু সন্তান আহত হয়েছে। নিহতের বাড়ি উপজেলার বোয়ালী গ্রামে।
বোয়ালী ইউপি সদস্য শুকেন্দ্রচন্দ্র কুমার বিনো জানান, সুরবালা রোববার সকালে বৃষ্টির কারণে প্রতিবেশী বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চৌকিদার মরণ বিশ্বাসের বাড়ি আশ্রয় নেন। এ সময় মরণ বিশ্বাসের মাটির ঘরের একপাশের দেয়াল ভেঙে তার নিচে চাপা পড়ে সুরবালা নিহত এবং মরণ বিশ্বাস, তার স্ত্রী ও তাদের শিশু সন্তান (২) গুরুতর আহত হয়।
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় বজ্রপাতে বিলকিস বেগম (৪৩) নামে এক গৃহবধূ নিহত ও তার ছেলে আহত হয়েছে। নিহত বিলকিস উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের ধলাদিয়া গ্রামের কালু কবিরাজের স্ত্রী।
রাজাবাড়ী ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল কাদির জানান, ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের ডালপালা কাটার সময় তারা এ দুর্ঘটনার শিকার হন। আহত জহিরুলকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিরসরাইয়ে বজ্রপাতে সাদ্দাম হোসেন (২৭) নামে এক যুবক নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার ৫ নম্বর ওছমানপুর ইউনিয়নের মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাদ্দামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আকলঘাটা এলাকায়। তার লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।