ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শনিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শিশুদের ধর্ষণে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারবে। যে দিন মন্ত্রিসভা ধর্ষণের শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সে দিনই সামনে এসেছে মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে একটি ৮ মাসের সদ্যোজাত কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনা।
আর তার আগে থেকেই ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে একটি ৮ বছরের কন্যাশিশুকে সাত দিন ধরে অপহরণ করে রেখে গণধর্ষণ ও তারপরে খুন করার ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে সারা দেশেই।
সরকারাা পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছর ধরে ভারতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে শিশুদের ওপরে ধর্ষণ আর নানা ধরণের যৌন নিপীড়নের ঘটনা। সর্বশেষ যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, তাতেই দেখা যাচ্ছে যে ২০১৬ সালে প্রায় কুড়ি হাজার শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ভারতে।
কেন শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে?
কেন বাড়ছে ভারতে শিশু ধর্ষণের সংখ্যা, তা নিয়ে অনেক মত রয়েছে।
শিশুদের ওপরে যৌন নিপীড়ন চালানোর একটা বড় কারণ বিকৃত মানসিকতা, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় পিডোফিলিয়া। মনোবিজ্ঞানে পিডোফিলিয়া মানসিক বিকৃতি বলেই স্বীকৃত।
কলকাতায় যৌন হেনস্থার ব্যাপারে শিশুদের সচেতন করে তোলার কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দীক্ষা। তার প্রধান পারমিতা ব্যানার্জীর কথায়, “কোনও একটা কারণ তো নয়, অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে পিডোফিলিয়া নিশ্চিতভাবেই মানসিক বিকৃতি।”
পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও মনে করেন, “ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনটা নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা। তাই প্রথমে আমাদের ঘা দিতে হবে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাটার ওপরে।”
বিকৃতির সাথে রয়েছে কুসংস্কার
গবেষকদের মতে, ক্রমবর্ধমান হারে শিশুদের যৌন লালসার শিকার বানানোর পিছনে রয়েছে কুসংস্কারও।
বহু মানুষ ওই কুসংস্কারে বিশ্বাস করে থাকেন যে শিশু বা কুমারীদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে যৌন রোগ নিরাময় হয়ে যাবে।
অন্তত দেড় শ’ বছর আগের ছাপা বটতলার বই নামে পরিচিত তথাকথিত বাংলা অশ্লীল সাহিত্যেও এই কুসংস্কারের উল্লেখ আছে যে কন্যাশিশু অথবা কুমারী নারীদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে নানা যৌন রোগ নিরাময় হয়।
ভারতের অনেকেই যে ওই কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন, সেটা জানা গেল কয়েকজন সমাজকর্মীর কাছ থেকে।
তাদের একজন, নিউ লাইট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান উর্মী বসু।
“আমরা যৌন কর্মী এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের সঙ্গে যারা আছেন, তাদের অনেকেরই বয়স ৬০, ৬৫ এমনকি ৭০। তারা বলেন বহু মানুষ এটা মনে করেন যে কুমারী নারী বা শিশুদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে তাদের নিজেদের শরীরে বাসা বেঁধে থাকা যৌনরোগ নিরাময় হয়। এটা কোনও গল্প-গাথা নয় – এটা বাস্তব। ভারতের বহু প্রদেশে এই ধারণা প্রচলিত রয়েছে।”
সমাজকর্মী পারমিতা ব্যানার্জীও এইডস আক্রান্তদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কাজের সূত্রে গিয়ে জানতে পেরেছি যে সাধারণত হাতুড়ে বা ঝাড়ফুঁক অথবা জরিবুটির মাধ্যমে চিকিৎসা করার নাম করে যেসব ভণ্ডরা, তারাই এই কুসংস্কারকে আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।
শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের নানা দেশেই এই ধরণের ভণ্ডরাই যে ‘ভার্জিন ক্লেনসিং’এর কুসংস্কারের প্রচার করে বেড়ায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে নানা সমীক্ষা আর গবেষণাতেই।
গবেষকরা বলছেন, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অনেক মানুষ এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করে এখনও।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আফ্রিকার একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ১৮% শ্রমিক বিশ্বাস করে যে কুমারীদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে এইচ আই ভি এইডসের মতো মারণ রোগও সেরে যায়।