নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে, সেই সাথে দ্রুত জমে উঠছে এবারের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনেও প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য নির্ধারণে ভাসমান ভোটাররাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তাই নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী নির্বাচন প্রচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো শুরু না হলেও নিজেদের সমর্থন বাড়িয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের হারাতে তফশিল ঘোষণার পর থেকেই মেয়র প্রার্থীসহ প্রায় সকল প্রার্থী নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফলে শুরু থেকেই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের নানা অভিযোগ উঠছে। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিসহ চার মেয়র প্রার্থীকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। সোমবার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন। এখনো পর্যন্ত সাধারণ আসনের এক কাউন্সিলর প্রার্থী বাদে আর কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদেরসহ প্রায় সকল প্রার্থীরা গাজীপুরকে মাদক, সন্ত্রাস ও দূর্নীতিমুক্ত একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভোটার ও কর্মী সমর্থকদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির প্রার্থী মো. হাসান উদ্দিন সরকার, জাসদের রাশেদুল হাসান রানা, ইসলামি ঐক্যজোটের মোঃ ফজলুর রহমান, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন, ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, কমিউনিস্ট পার্টির গাজী রুহুল আমিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন ও মো. সানাউল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
চার মেয়র প্রার্থীকে সতর্কঃ
সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে কয়েক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি অমান্যের অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে সেগুলোর প্রমাণও পাওয়া যায়। এরপ্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদের চার প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপি’র মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার, জাসদের মোঃ রাশেদুল হাসান রানা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা মোঃ সানাউল্লাহকে সতর্কীকরণের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব প্রার্থীরা আবার বিধি ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচনে ভাসমান ভোটাররা ফ্যাক্টরঃ
এদিকে এবারের নির্বাচনেও প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারণ হবে ভাসমান ভোটারদের ভোটে। নির্বাচনে এসব ভোটাররাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তাই এবারেও এসব ভোটারদের কদর ইতোমধ্যে বেড়েছে। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটার তালিকা ধরে বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় গিয়ে এসব ভোটারদের খোঁজ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল জেলা হওয়ায় শিল্প-কারখানায় চাকুরির সুবাদে অন্য জেলার বহু লোকজন এ জেলায় এসে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে।
এ কারণে এখানে এক এলাকার ঠিকানায় তারা ভোটার হলেও কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানীয়দের কাছে অপরিচিত। তাদের বাসা বাড়ির ঠিকানাও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। নির্বাচনে এবারও ভাসমান এসব ভোটাররাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াবে বলে স্থানীয়দের অভিমত। প্রার্থীরা ও তাদের কর্মী সমর্থকরা তালিকা অনুযায়ী এসব ভোটারের খোঁজে বাড়ি যাচ্ছেন তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারদের না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা।
খুঁজে না পাওয়া এসব ভোটারদের প্রায় সবই ভাসমান ভোটার বলে অনেক প্রার্থী ও স্থানীয়রা মন্তব্য করেছেন। এসব ভাসমান ভোটারদের অনেকেই নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের কথা বিবেচনা না করেই ভোট দিয়ে থাকেন। আর একারণেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে একাধিক যোগ্য প্রার্থীকে পরাজিত হতে হয়েছে। যার মাসুল গুনতে হয়েছে স্থানীয় ভোটারদের।
২৮৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ১১৪ জনই মামলার আসামিঃ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১১৪জনই মামলার আসামি। তাদের মধ্যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির উভয় দলের প্রার্থীর নামই রয়েছে। তাছাড়া সিটির ৫টি ওয়ার্ডের ২০জন প্রার্থীর কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই এবং তিনটি ওয়ার্ডের প্রত্যেক প্রার্থীদের নামেই মামলা রয়েছে।
প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা গেছে, ২১নম্বর ওয়ার্ডের ৫ প্রার্থী, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ প্রার্থী, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ প্রার্থী, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ প্রার্থী এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২ জনপ্রার্থীসহ ওই ৫টি ওয়ার্ডের কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তবে ২০নম্বর ওয়ার্ডের ৩জন, ২৮নম্বর ওয়ার্ডের ৩জন এবং ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের ৪জনসহ ওই তিনটি ওয়ার্ডের সকল প্রার্থীর নামে মামলা রয়েছে।
এদের মধ্যে, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৬জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন, ২নম্বর ওয়ার্ডের ৮ প্রার্থীর মধ্যে ৫জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩প্রার্থীর মধ্যে দুইজন, ৪নম্বর ওয়ার্ডে ৪জনের মধ্যে ২জন, ৫নম্বর ওয়ার্ডের ৩জনের মধ্যে ১জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৩জন, ৮নম্বর ওয়ার্ডের ৩জনের মধ্যে ১জন, ৯নম্বর ওয়ার্ডে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে ২জন, ১০নম্বর ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩জনের মধ্যে ১জন, ১২নম্বর ওয়ার্ডে ৫প্রার্থীর মধ্যে ৪জন,
১৩নম্বর ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ১৪নম্বর ওয়ার্ডে ৫প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ১৫নম্বর ওয়ার্ডে ৪প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ১৬নম্বর ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ১৭নম্বর ওয়ার্ডে ৬প্রার্থীর মধ্যে ২জন, ১৮নম্বর ওয়ার্ডে ৬জন প্রার্থীর মধ্যে ৩জন, ১৯নম্বর ওয়ার্ডে ৫প্রার্থীর মধ্যে ৩জন, ২০নম্বর ওয়ার্ডে ৩প্রার্থীর মধ্যে ৩জন, ২২নম্বর ওয়ার্ডে ৮জনের মধ্যে ৬জন,২৩নম্বর ওয়ার্ডে ৭জনের মধ্যে ২জন, ২৪নম্বর ওয়ার্ডে ১২জনের মধ্যে ৫জন, ২৫নম্বর ওয়ার্ডে ৪জন প্রার্থীর মধ্যে ২জন, ২৬নং ওয়ার্ডে ৩জনের মধ্যে ১জন, ২৭নম্বর ওয়ার্ডে ৮জনের মধ্যে ৪জন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৪জনের মধ্যে ১জন, ২৯নম্বর ওয়ার্ডে ৪জন প্রার্থীর মধ্যে ৩জন,
৩০নম্বর ওয়ার্ডে ৭প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ৩১নম্বর ওয়ার্ডে ৬জনের মধ্যে ২জন, ৩২নম্বর ওয়ার্ডে ৪জনের মধ্যে একজন, ৩৩নম্বর ওয়ার্ডে ৬জনের মধ্যে ২জন, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪জনের মধ্যে ২জন, ৩৫নম্বর ওয়ার্ডে ৪প্রার্থীর মধ্যে ৪জন, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩জনের মধ্যে ২জন, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৭জনের মধ্যে ৪জন, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪জনের মধ্যে ২জন, ৪২নম্বর ওয়ার্ডে ৬জনের মধ্যে ১জন, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৪প্রার্থীর মধ্যে ২জন, ৪৫নম্বর ওয়ার্ডে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে ১জন,
৪৬নম্বর ওয়ার্ডে ৩জনের মধ্যে ১জন, ৪৭নম্বর ওয়ার্ডে ৫জনের মধ্যে ২জন, ৪৮নম্বর ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মদ্যে ২জন, ৪৯নম্বর ওয়ার্ডে ১১জন প্রার্থীর মধ্যে ৪জন, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩জন প্রার্থীর মধ্যে ১জন, ৫১নম্বর ওয়ার্ডে ৬জনের মধ্যে ২জন, ৫২নম্বর ওয়ার্ডে ৫জনের মধ্যে ২জন, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৮জনের মধ্যে ২জন, ৫৪নম্বর ওয়ার্ডে ৫জনের মধ্যে ৩জন, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫জনের মধ্যে ২জন, ৫৬নম্বর ওয়ার্ডে ৫জনের মধ্যে ২জন এবং ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৬প্রার্থীর মধ্যে ১জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
গাজীপুর আদালতের সাবেক এপিপি মো. আসাদুল্লাহ বাদল বলেন, যাদের নামে কোন মামলা নেই এবং তারা যদি তুলনামূলক স্বচ্ছ প্রকৃতির লোক হন তবে তারা যে এলাকা থেকেই নির্বাচিত হন ওই এলাকায় অপরাধ প্রবনতাটা অনেকটা কম থাকবে। আর যেখানে সব প্রার্থীদের নামেই মামলা তাদের মধ্যে বুঝা গেছে সেখানে তুলনামূলক স্বচ্ছ বা অপরাধ প্রবণতা নাই এমন লোক হয়ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাননি। তাতে করে মন্দের ভাল থেকে যাকেই বেছে নেয়া হউক না কেন তার মধ্যে অপরাধ প্রবণতা থাকবে এবং ভবিষতে দূর্নীতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুকি থাকবে।
তবে গাজীপুর জেলা শ্রমিকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ১৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও একই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ ফয়সাল আহমেদ সরকার বলেন, সমাজে খোঁজ নিয়ে দেখুন আমার মধ্যে কোন দূর্নীতি আছে কি-না, আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না। তারপরও আমার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এগুলো শুধুই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। একই কথা বলেন, সদর থানা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ১৯নম্বর ওয়ার্ডের বতর্মান কাউন্সিলর ও এবারের কাউন্সিলর প্রার্থী তানভীর আহম্মেদ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৮টি মামলা। তিনিও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।
গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন বড় দু’দলের মেয়র প্রার্থীঃ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থী শনিবার গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। অনিচ্ছাকৃত নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে অবহিত ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা সহযোগিতা চান।
আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম শনিবার দুপুরে ছয়দানা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সহযোগিতা কামনা করনে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে তিনি ঘরোয়া পরিবেশে কথা বলছেন। তিনি বলেন, বাসায় সারাদিন এলাকার মানুষ যাতায়াত করে। বাইরে বের হলে যেখানেই তিনি দাঁড়ান কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে পড়ে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের আহবান জানিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচনী আরণবিধি মেনে চলছেন এবং ভবিষ্যতেও চলবেন। কোথাও অনিচ্ছাকৃত নির্বাচনী আরণবিধি লঙ্ঘিত হলে তাকে অবহিত করার অনুরোধ করেন।
অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার শনিবার সকালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন। সকাল ১০টায় নিজ বাস ভবনের আঙ্গিনায় যুবদলের ও বিকেলে মহিলাদলের নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
যুবদলের প্রস্তুতি সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মোরতাজুল করিম বাদরু, নূরুল ইসলাম নয়ন, সুরুজ আহমেদ, অ্যাডভোকেট এমদাদ খান, প্রভাষক বসির উদ্দিন, শেখ আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল আজিজ প্রিন্স, আকরাম হোসেন প্রমুখ।
মহিলাদলের প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন, মহিলাদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলাদলের সভানেত্রী পেয়ারা মোস্তফা, সহসভাপতি মেহেরুন্নেছা, সাধারণ সম্পাদক আমেনা খাতুন, যুগ্নসম্পাদক সপ্না আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভানেত্রী রাজিয়া আলী, সাধারণ সম্পাদক সামছুন্নাহার ভূইয়া, গাজীপুর জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক গোলনাহার, গাজীপুর মহানগর মহিলাদলের সভানেত্রী শিরিন চাকলাদার, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা আক্তার, উপদেষ্টা আনোয়ারা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক বীনা চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া হাসান সরকার শনিবার টঙ্গী ও উত্তরায় পৃথক দুটি বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালতঃ
জিসিসি নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় রয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠণ করে তাদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ টিম ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। ২৪ এপ্রিল থেকে আচরণ বিধি পর্যবেক্ষণসহ সার্বিক বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর ও জেলা নির্বাচন অফিসার তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকায় ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি ভ্রাম্যমাণ পরিচালিত হচ্ছে। পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা আরও ৯ টি বৃদ্ধি করে ১৯টিতে উন্নীত করা হবে।
জিসিসি’র ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডকে ১৯ ভাগে বিভক্ত করে ১৯জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে ওই ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে একজন করে সহকারী রিটার্নিং অফিসার সংযুক্ত থাকবেন। এসব টিম নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুসরণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। যা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিষ্ট্রেটগণ ইতোমধ্যে তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। প্রয়োজনে ম্যাজিষ্ট্রেটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
জিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আচরণবিধি বিষয়টিতে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি জেলা পুলিশের বিশেষ টিমও এ কাজে নিয়োজিত থাকবে।
এবার ভোট কেন্দ্র বেড়েছে ৩৩টিঃ
গতবারের চেয়ে এ নির্বাচনের জন্য ৩৩টি ভোট কেন্দ্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে এবার ভোট কেন্দ্র সংখ্যা হচ্ছে ৪২৫টি। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে সম্পূর্ণ সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যা শীঘ্রই চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়াও কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক ইভিএম মেশিন স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ৩৯২ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ১০জনসহ, সংরক্ষিত কাউন্সিলর আসনে ৮৭ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর আসনে ২৯৪জন সহ মোট ৩৯১ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
যাচাই বাছাইকালে এদের মধ্যে মেয়র পদে একজন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে ১৯জনসহ মোট ২৩জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৮৪জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭৫ জন প্রার্থীসহ মোট ৩৬৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর আসনের একজন প্রাথী তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া এসব প্রার্থীদের মধ্যে মেয়র প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আফসার উদ্দিন বাদে অন্য ২২ প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আপীল করেন।
শুনানী শেষে এদের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের ৩ প্রার্থীসহ মোট ১৫জন কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা ফিরে পান। সে হিসেবে নির্বাচনে মেয়র পদে ৯জন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৮৭জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে ২৮৬ জন প্রার্থীসহ মোট ৩৮২ জন প্রার্থী শনিবার পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এদের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর আসনের (৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের) একজন প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি অপর প্রার্থী তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী সোমবার (২৩ এপ্রিল) প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৪ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে। গত ৩১ মার্চ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর হতে এটি হবে এ সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন।
এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।