পুলিশ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে: আকবর আলি খান

জাতীয় টপ নিউজ

fa8d1f076f291faf09354414ce568d29-budget-2স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ম্যাজিস্ট্রেটদের হাত থেকে চলে যাওয়ায় তা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের  উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান।

শনিবার সকালে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ বিষয়ে “পৃথকীকরণের সাত বছর” শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

আকবর আলি খান বলেন, পুলিশ কমিশন গঠন করা না হলে বা এ বিষয়ে পৃথক আইন প্রণয়ন করা না হলে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। পুলিশের বার্ষিক প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, যে পরিমাণ চার্জশিট দাখিল করা হয় তার ২৩/২৪ শতাংশ সাজাপ্রাপ্ত হয়।

প্রত্যেক সার্ভিসেই দাবিদাওয়া রয়েছে যার সবটুকু সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়না বলে মন্তব্য করেন আকবর আলি খান।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র পৃথকীকরণের প্রয়োজনে পৃথক করা নাকি মানুষের প্রয়োজনে বিচার বিভাগকে পৃথক করা তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সাত বছরে আমাদের কতটা উন্নতি হয়েছে এবং সত্যি সত্যি জনগণ কি পেয়েছে তা বিশ্লেষণ করা দরকার।

মাজদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচারকদের প্রাপ্যতার বিষয়ে একমত পোষণ করে আকবর আলি খান বলেন, বিচারকদের বেতন-ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলেই ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। ভারতে ২০০০ সালের পর যদি একটিও মামলা না করা হয়ে থাকে তবে তা নিষ্পত্তি করতে ৩২৪ বছর লেগে যাবে। বাংলাদেশে কয়শ বছর লাগবে তা জানা নেই। আমার সুপারিশ মামলা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হউক। জনগণ জানবে যে, কারা ভাল কাজ করছে আর কারা খারাপ কাজ করছে।

সাপ্তাহিক এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী।

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব অনেক বেশি হতে পারে। শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ রেখে তৃণমূল গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। এটি বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রশাসনের হাত যত লম্বা হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তত কম হবে। বাজেটে বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বরাদ্দ একটি কোডে থাকে। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক কোড থাকতে হবে। বিচারকদেরও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। যেখানে শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে নিজস্ব সম্পদ মনে করে সেখানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেনা। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের জন্য অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উপাদানগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট শফিকুর রহমান বলেন, চীন প্রবৃদ্ধি অর্জনকে আইনের শাসনের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিল। বর্তমানে তারা বুঝতে পেরেছে যে, আইনের শাসনই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশেরও উচিত আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ প্রকৃত অর্থে পৃথক হয়নি। নিম্ন আদালত নিয়ন্ত্রণের জন্য উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে নূন্যতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের সময়ে যখন আইনের শাসন ছিলনা। আইনের শাসন না থাকলে বিচার বিভাগ পৃথক হবেনা, জনগণই আইনের শাসন থেকে পৃথক হয়ে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ, সুশাসনের রাজনীতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করে তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবেনা।

এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে কিন্তু স্বাধীন হয়নি। সংসদ এখন কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। তিনি বিচারকদের সততার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সাবেক জেলা জজ (পৃথকীকরণ কালীন) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এখনও বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে।

তিনি সুপারিশ করেন যে, শাসন ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে, যদি নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের উপর প্রভাব বিস্তার করে তা হলে প্রকাশ করতে হবে, আইন যুগোপযোগী করতে হবে এবং আদালত ব্যবস্থাপনাকে পরিবর্তন করতে হবে।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *