হজযাত্রী নিবন্ধনে সরকারি-বেসরকারি ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা দুর্নীতি বাড়াচ্ছে

Slider বিচিত্র

308857_182

সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী নিবন্ধনের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থার কারণে দুর্নীতি বাড়ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের পুরো টাকা একসাথে জমা নেয়ার বিধান থাকলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অর্ধেকের কম নিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য চলছে। হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার সুযোগ পাচ্ছে দালালরা। যার প্রভাব পড়ছে পুরো হজ ব্যবস্থাপনার ওপর। গত বছর এ কারণে হজ ফ্লাইট বিপর্যয়সহ নানা অব্যবস্থাপনায় অনেকেই হজে যেতে পারেননি। সৌদিতে গিয়েও বিপাকে পড়েন অনেক হাজী।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন এক লাখ ২০ হাজার জন। হজ খরচ বাবদ সরকার দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এ তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ তিন লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বেসরকারি এজেন্সিকে প্যাকেজ-২ এর টাকার নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা না করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব গত ৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলন করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করে তিন লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকা।

জানা যায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের পুরো টাকা একসাথে জমা নিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের জন্য প্রথমে সর্বনিম্ন এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা সংশ্লিষ্ট এজেন্সির ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে নিবন্ধন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

কয়েকজন হজ এজেন্সি মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ বেসরকারি হজযাত্রী মধ্যস্বত্ব¡ভোগী গ্রুপ লিডারদের মাধ্যমে এজেন্সিতে বুকিং দেয়। সরাসরি হজযাত্রী ও হজ এজেন্সির মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। হাবের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন প্যাকেজ তিন লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকা নির্ধারণ করলেও এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা এজেন্সি মালিককে শুধুমাত্র এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা দিয়ে হজযাত্রীদের নিবন্ধন করে নিচ্ছেন। এ ছাড়া পুরো টাকা একসাথে জমা দেয়ার নিয়ম না করায় মধ্যস্বত্বভোগীরা হজযাত্রীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন প্যাকেজের থেকে কম টাকা নিচ্ছেন। গত বছর এভাবে কম টাকা নিয়ে নিবন্ধন করায় পরে অনেক এজেন্সি মালিক হাজীদের সৌদিতে না নিয়েই পালিয়ে যান। এ কারণে বেশ কিছু হজযাত্রী হজে যেতে পারেননি। আবার হজে গিয়েও হাজীদের হারাম শরিফ থেকে অনেক দূরের বাড়িতে রাখা হয়।

এতে তারা সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পন্ন করতে পারেননি। খাওয়া, যাতায়াতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। মূলত নিবন্ধনের পর মধ্যস্বত্বভোগীরা হজযাত্রীদের কাছ থেকে বাকি টাকা নিলেও এর পুরো টাকা এজেন্সি মালিককে দেন না। এ জন্য এজেন্সি মালিকও সেবা দিতে গড়িমসি করেন। অনেক এজেন্সি সঠিকভাবে সেবাও দেন না।

সম্প্রতি এমনি একটি ঘটনায় বেসরকারি হজ এজেন্সি ‘আকবর হজ গ্রুপ বাংলাদেশ’-এর কর্মকর্তাদের পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ১ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট করা ক্রমিক পর্যন্ত নিবন্ধনের শেষ দিনে হজযাত্রীরা এজেন্সির পল্টন অফিসে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। এজেন্সির মালিককে ফোন করেও তারা পাননি। তারা অভিযোগ করেন, এজেন্সির মালিক প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধন না করেই বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। এ ঘটনার পর হজযাত্রী ও এজেন্সির মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কম টাকায় হজ করানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতিই হজ ব্যবস্থাপনাকে অস্থিতিশীল করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল নাসের। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে দালালেরা হজাত্রীদের কাছে গিয়ে বলেন, আপনাকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় হজ করাবো। হজ এজেন্সিতে এসে দালালেরা দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় বুকিং দেয়। কিন্তু দেখা যায় দালালেরা হজযাত্রীর কাছ থেকে বুকিংয়ের টাকা নেয়ার পর ক্রমান্বয়ে হজ প্যাকেজের সম্পূর্ণ তিন লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা নেয়। কিন্তু হজ এজেন্সিকে আর কোনো টাকা দেয় না। বাকি এক লাখ ১১ হাজার টাকা দালালের পকেটে রেখে দিয়ে হজযাত্রীদের হারাম শরিফ থেকে বহু দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রেখে কষ্ট দেয়। এ ব্যবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

ধর্ম সচিবের প্রতি হাইকোর্টের রুল : হজ ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারি হজযাত্রীদের মতো বেসরকারি হজযাত্রীদের হজ প্যাকেজের পুরো টাকা কেন পরিশোধ না করেই চূড়ান্ত নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে, এ ব্যাপারে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জানানোর জন্য হাইকোর্ট ধর্ম সচিব মো: আনিছুর রহমানের প্রতি রুলনিশি জারি করেছেন। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো: ফারুকের (এম ফারুক) ডিভিশন বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদেশের আগে শুনানিতে আদালত জানতে চান, সরকারি ও বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনে কেন এত বৈষম্য। শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এস আমাতুল করিম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আশেখ মোমিন, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এ আর এম হাসানুজ্জামান, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনালের এম এস সায়রা ফাইরোজ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল জাইদি হাসান খান উপস্থিত ছিলেন। গত মঙ্গলবার এই রিট আবেদনটি করেন আলহাজ আবদুল বাতেন। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো: জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট আবদুল হাই ফকির।

এ ব্যাপারে ধর্ম সচিব মো: আনিছুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, রুল নিশির কোনো কাগজপত্র আমরা এখনো পাইনি। কাগজপত্র হাতে পেলে তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *