ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর অফিস: আগামী ১৫মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন। ১২এপ্রিল শেষ হবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ১২জন, বিএনপির ৮জন সহ প্রায় দুই ডজন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। সম্প্রতি গাজীপুর শহরের প্রায় সব জায়গায় লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাবেক সচিব এম এন নিয়াজ উদ্দিনের পোষ্টার লাগানো হয়েছে। তবে নিয়াজ উদ্দিনের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানা যায় নি। কিন্তু এই পোষ্টার লাগানোর পর থেকেই প্রধান দুই দলে নিয়াজ উদ্দিনকে নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টি গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে বা করবে না সেটা নয়, চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিলে গাজীপুরে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবেন নিয়াজ উদ্দিন। কারণ জাতীয় পার্টি ও এরশাদ দুটোই এরশাদের ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্তে চলে। আর এরশাদ কখন কি বলেন তা তিনি নিজেও জানেন না বলেই মানুষ মনে করেন। তাই নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে নামলে ভোটের হিসেব এলোমেলো হওয়ার আশংকা করছেন সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে শনিবার খোঁদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নিয়াজ উদ্দিনের চাকুরী কালীন সময়ের কিছু বিষয় নিয়ে একাত্তর টিভির একটি সংবাদে কথা বলেছেন। তার এই বক্তব্য ও সাধারণ মানুষের অভিমত থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নিয়াজ উদ্দিন আসলেই গাসিক নির্বাচনে প্রধান দুই দলের জন্য মাথা ব্যাথা হয়ে গেছেন। কারণ মেয়র পদ নিয়ে যেখানে কাড়াকাড়ি, মানুষ যেখানে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন হন্নে হয়ে, সেখানে নিয়াজ উদ্দিনের মত সাদা মনের মানুষ মেয়র প্রার্থী হলে গাসিক নির্বাচনে সৃষ্টি হবে নতুন মোড়। আর এতে পাল্টে যেতে পারে যে কোন হিসেবে নিকেশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এম এন নিয়াজ উদ্দিনের বাড়ি গাজীপুর মহানগরের পূবাইল এলাকায়। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব ছিলেন। চাকুরীকালে তিনি গাজীপুর জেলায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বহু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে দলমত নির্বিশেষে নিয়াজ উদ্দিন সর্বমহলে একজন গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তি। চাকুরীর শেষ সময়ে তিনি গাজীেপুরের সকল এলাকায় যখন সরব, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলগের অনেক নেতা তার বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকেন। চাকুরী থেকে অবসরের পর তিনি এমপি প্রার্থী হতে পারেন, এমন আশংকায় সম্ভাব্য নেতারা নিয়াজ উদ্দিনের বিরোধীতা করতে শুরু করেন। এক সময় মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি নিজেই নিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নিয়াজ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোঁদ মন্ত্রী নিজেই। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে নিয়াজ উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় সরকার।
গাজীপুরের সচেতন মহল মনে করেন, নিয়াজ উদ্দিন ভবিষৎ এমপি হতে পারেন, এই আশংকা থেকেই মন্ত্রী বা কতিপয় নেতারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকতে পারেন। তবে চাকুরী থেকে অবসরের কিছুদিন পর নিয়াজ উদ্দিন স্বপরিবারের জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। অতঃপর তিনি গাজীপুর-২ আসনে নির্বাচন করবেন বলে তার কর্মী সমর্থকেরা পোষ্টারিং করতে থাকেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচন শুরু হওয়া থেকে নিয়াজ উদ্দিনের নাম শোনা যায় নি। সম্প্রতি শহর ছেঁয়ে যায় নিয়াজ উদ্দিরের লাঙ্গল প্রতীকের পোষ্টারে।
সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, আওয়ামীলীগের আমলে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মেয়র নির্বাচিত হন অধ্যাপক এম এ মান্নান। বিরোধী দলের লোক হওয়ায় তিনি ২৯ মামলার আসামী হয়ে ২৪মাস জেলে থাকেন। ফলে নগরবাসীর তেমন কোন উন্নয়ন করতে পাারেননি মান্নান।
ভোটাররা বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। বর্তমান মেয়র যদি আগামী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় লোক হন, তবে নগরবাসীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। আর যদি সরকার দলীয় মেয়র হয়, তাহলে আশাপূরণ হবে। কিন্তু আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল সরকার গঠন করবে, তা যেহেতু এখনি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তাই সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন নিয়াজ উদ্দিন মেয়র হলে দলমত নির্বিশেষে তিনি মহানগরের উন্নয়ন করতে পারবেন। দলীয়ভাবে তার তেমন কোন ইমেজ না থাকায় তিনি জনগনের মেয়র হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন এমন আশংকা থাকায় নিয়াজ উদ্দিনকে এখন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দুই দলই মাথা ব্যাথার কারণ বলে মনে করে।